ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

চীনের এক সন্তান নীতি যেভাবে জন্মহার তলানিতে ঠেকিয়েছে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:১৪, ১৪ জুলাই ২০২২

বছরের পর বছর ধরে বিশেষজ্ঞরা চীনের এক-সন্তান নীতি এবং দেশের জনসংখ্যা ও সমাজের উপর এর ভয়াবহ দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে সতর্কবার্তা লিখে চলেছেন।

এই বিপর্যয়কে এখন বরফগলার পরিস্থিতির মতো মনে হচ্ছে। জন্মহারে ধস নামায় গত ছয় বছর ধরে চীন দ্রুত এক-সন্তান নীতি থেকে দুই-সন্তান নীতিতে ফিরেছে।

জোরপূর্বক পরিবারের আকার নিয়ন্ত্রণ কেন মানবাধিকারের জন্য ভয়নাক দুঃস্বপ্ন, সেই অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে জনসংখ্যা হ্রাসের প্রতিটি সূচক। চীন সরকার গত জানুয়ারিতে জন্মহার তুলে ধরে বলেছে, দেশটির গত বছর জনসংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৪ লাখ ৮০ হাজার। জন্মহার প্রতি ১ হাজারে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমেছে, যা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।

ইতোমধ্যে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের অনুপাত ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ।

জনসংখ্যা কমিয়ে চীনে শিল্প বিপ্লব ঘটানোর প্রচারাভিযান ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’ এর ফলে ১৯৬১ সালে দুর্ভিক্ষের সময় থেকে প্রথমবারের মতো চীনের জনসংখ্যা আরও নিচে নামতে পারে, মৃত্যুর তুলনায় জন্মহার কম, শ্রমের ঘাটতি, পেনশনের ঘাটতি এবং সামাজিক উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

জনসংখ্যা সংকট কীভাবে সমাধান করা উচিত সিসিপির

চীনই একমাত্র দেশ নয় যারা কমে যাওয়া জন্মহার বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে এটিই একমাত্র দেশ যেখানে যুদ্ধ বা প্লেগ মহামারী ছাড়াই তারা এত বেশি মানুষ হারিয়েছে।

দেশটি এক-সন্তান নীতি বাস্তবায়ন করেছে, যা একটি সাহসী, দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক পরীবীক্ষণ, তবে তা নৃশংস, অমানবিক এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এর ফলে পুরুষের সংখ্যা বেড়েছে ৩ কোটি, যা প্রায় অস্ট্রেলিয়ার স্নাতক পাস শিক্ষার্থীদের সংখ্যার সমান। এ ছাড়া বয়সভিত্তিক জনসংখ্যা দেশের অর্থনৈতিক সুষম ব্যবস্থাপনার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ।

ফলে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) নারীদের আরও সন্তান নেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন। এক-সন্তান নীতি ‘আরও শিশু নীতিতে’ রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু নারীরা এতে কর্ণপাত করছে না। ২০১৬ সালে দুই-সন্তান নীতি বাস্তবায়নের ফলে জন্মর হার প্রথম দিকে বৃদ্ধি পেলেও জন্মহার ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে।

অনেকে শিশু প্রতিপালনের অত্যধিক ব্যয়কে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে তুলে ধরেন। কিন্তু এই জনসংখ্যা নীতির ভুক্তভোগী নারীরা তাদের প্রজনন বিকল্পগুলোকে সীমিত করার নতুন পদক্ষেপের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়ে উঠেছে।
জোনাথন সুইফট একটি কমেডিতে লিখেছিলেন, শিশু লালন-পালন কীভাবে আইরিশ দুর্ভিক্ষ লাঘব করতে পারে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি কীভাবে জনসংখ্যার সমস্যা সমাধান করতে শুরু করতে পারে সেক্ষেত্রে তাদের সুইফ্টিয়ান বিনয়ী ধারণা রয়েছে। তা হলো- চীনের নারীদের কাছে আন্তরিকভাবে ব্যাপক দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইবে।

যদিও চীনা নারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষিত, চাকরির বাজারে লিঙ্গ বৈষম্য তাদের পূর্ণ সাফল্যের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। চীনে নারীরা ছয় মাস পর্যন্ত মাতৃত্বকালীন ছুটি নিতে পারে, কিন্তু বাবারা মাত্র ৩০ দিন ছুটি নিতে পারেন। ব্যবসায়ীদের বৈষম্যমূলক আচরণে উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং লিঙ্গ বৈষম্যের ক্ষেত্রে ছকবাঁধা ধারণাগুলো পাকাপোক্ত করা হচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষণা অনুসারে, চীনে কর্মীদের জন্য শিথিল বা কম সুরক্ষা নীতির কারণে অনেক নিয়োগকর্তা খোলাখুলিভাবে এমন পুরুষ বা নারীদের নিয়োগের জন্য অগ্রাধিকার দেন, যাদের আগে সন্তান রয়েছে।

২০১৬ সালে এক সন্তানের নীতি প্রত্যাহারের ফলে বেশকিছু নারী জানিয়েছেন, চাকরির আবেদনের সময় তাদের সন্তান জন্মদানের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গর্ভবতী না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে বা গর্ভবতী হওয়ার জন্য পদোন্নতি বা বরখাস্তও করা হয়েছে।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি