ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

পারমাণবিক স্থাপনা থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:০০, ১৯ আগস্ট ২০২২ | আপডেট: ১৯:০২, ১৯ আগস্ট ২০২২

ইউক্রেনের দক্ষিণে জাপোরিঝজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং আশপাশের এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার সরকারি একজন মুখপাত্র বলেছেন রুশ সৈন্য সরে গেলে পারমাণবিক কেন্দ্রটির ওপর হুমকি আরো বেড়ে যাবে।

মার্চ মাস থেকে ইউরোপের বৃহত্তম এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। তবে সেখানে কাজ করছে ইউক্রেনীয় কর্মীরাই।

কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহ ধরে এই স্থাপনাটির ওপর গোলাবর্ষণের কারণে পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে বিশ্বজুড়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লাভিবে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজের সাথে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি দাবি করেন পারমাণবিক স্থাপনাটির পুরোপুরি 'বেসামরিক-করণ' নিশ্চিত করতে হবে জাতিসংঘকে।

পরে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে ত্রি-পক্ষীয় এক বৈঠকের পর ইউক্রেনের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নিয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করেন গুতেরেজ।

তিনি বলেন, ‘স্থাপনাটির কোনো ক্ষতি হলে তা হবে আত্মহত্যার সামিল।’

ইউক্রেনের লাভিব শহরে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ

সরাসরি রুশ সৈন্য প্রত্যাহার বা স্থাপনার ওপর গোলাগুলির জন্য কোনো একটি পক্ষকে দায়ী না করলেও গুতেরেজ সে সময় বলেন, ‘সামরিক অভিযানের অংশ হিসাবে কোনোভাবেই এই পারমাণবিক স্থাপনাটি ব্যবহার হতে পারবে না।’

জাপোরিঝজিয়ায় বৈঠকের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও সাংবাদিকদের বলেন, ‘চেরনোবিলের মতো আরেকটি পারমাণবিক বিপর্যয়ের’ ঝুঁকি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তবে এরদোয়ানও সরাসরি কোনো একটি পক্ষকে দায়ী করেননি।

ইউক্রেনেরই চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রে ১৯৮৬ সালে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল।

কিন্তু রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইভান নেচায়েভ জাপোরিঝজিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন।

মস্কোতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘তা করা হলে কেন্দ্রটি আরো হুমকির মুখে পড়বে।’

জাপোরিঝজিয়ার হুমকি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক স্থাপনার ওপর এই হামলার জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেন পরস্পরকে দায়ী করছে। ইউক্রেন বলছে রাশিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রটিকে একটি ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে। কেন্দ্রটিকে একটি সেনা ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করে সেখান থেকে ইউক্রেনের বিভিন্ন টার্গেটে রকেট হামলা করছে।

রাশিয়া বলছে এই অভিযোগ মিথ্যা, বরঞ্চ বিপদ বুঝেও উসকানি তৈরি করতে ইউক্রেনের সৈন্যরা পারমাণবিক স্থাপনাটির ওপর অব্যাহতভাবে রকেট ছুঁড়ছে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লে. জে. ইগর কোনাশেনকভকে উদ্ধৃত করে রুশ মিডিয়া আরআইএ নভোস্তি লিখেছে জাতিসংঘ মহাসচিবের ইউক্রেন সফরের সময় জাপোরিঝজিয়ায় 'উস্কানি' তৈরির পরিকল্পনা করছে ইউক্রেন।

তিনি বলেন, বোমা মেরে বিপর্যয় তৈরি করে তার দায় রাশিয়ার ঘাড়ে চাপানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

জে. কোনাশেনকভ বলেন, পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র এবং শেল দিয়ে এই স্থাপনাটি টার্গেট করছে ইউক্রেন।

তিনি বলেন, স্থাপনার কাছে একটি বিদ্যুৎ সাব স্টেশনে হাই ভোল্টেজ লাইন ইউক্রেনের ছোঁড়া গোলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যার জেরে দুটো বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিটে উৎপাদন কমিয়ে দিতে হয়েছে।

স্থাপনায় কর্মরত ইউক্রেনীয় কর্মীরা বলেছে গত দুই সপ্তাহে স্থাপনাটি ক্রমাগত সামরিক হামলার টার্গেট হয়ে দাঁড়িয়েছে।

‘এখানে যা হচ্ছে তা ভয়াবহ…সাধারণ বিবেচনা বোধ এবং নৈতিকতার পুরোপুরি পরিপন্থী,’ টেলিগ্রাম চ্যানেলে (ইউক্রেনীয়) এক পোস্টে লিখেছেন তারা।

এই স্থাপনা থেকে ইউক্রেনের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের সাথে যে চারটি সরবরাহ লাইন যুক্ত রয়েছে তার তিনটি গোলাবর্ষণে বিধ্বস্ত হয়েছে।

ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ন্ত্রকের অফিস থেকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে "পারমাণবিক জ্বালানি গলতে শুরু করবে, ফলে পরিবেশে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়বে।"

ইউক্রেন দাবি করছে রাশিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইচ্ছা করে একটি বিপর্যয় তৈরি করতে চাইছে।

বৃহস্পতিবার রাতে ইউক্রেনের সরকারি একটি সংস্থার টুইটার অ্যাকাউন্টে লেখা হয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটোমের সদস্যরা তাড়াহুড়ো করে জাপোরিঝজিয়া থেকে চলে গেছেন, এবং অপ্রত্যাশিতভাবে কর্মীদের একদিনের ছুটি দেয়া হয়েছে।

‘ইউক্রেনের গোয়েন্দারা মনে করছে রুশরা কেন্দ্রটিতে একটি উসকানি তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে,’ ইউক্রেনের নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্য কেন্দ্রের টুইটার পাতায় লেখা হয়েছে।

‘দিনের পর দিন গোলাবর্ষণের পর রুশ সৈন্যরা ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক কেন্দ্রটির ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালাতে পারে।’

তবে এই সন্দেহের এবং আশংকার পেছনে কতটা জোরালো ভিত্তি রয়েছে বিবিসি তা নিরপেক্ষ সূত্রে নিশ্চিত হতে পারেনি।

তবে এসব উদ্বেগ সত্ত্বেও, চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রটি- যেখানে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল - তার চেয়ে জাপোরিঝজিয়া কেন্দ্রটি অনেক বেশি সুরক্ষিত এবং নিরাপদ।

এই কেন্দ্রের চুল্লিটি ইস্পাত এবং কংক্রিটের তৈরি অত্যন্ত সুরক্ষিত একটি ভবনের ভেতর অবস্থিত।

মার্চে বিশেষজ্ঞরা বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘ভবনটি প্রাকৃতিক বা মানুষের সৃষ্টি বড় যে কোনো বিপর্যয় - যেমন বিমান বিধ্বস্ত হওয়া বা বড় কোনো বিস্ফোরণ - সহ্য করার ক্ষমতা রাখে।’ সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসি


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি