ঢাকা, শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪

চীনের নীরবতায় থমকে আছে শ্রীলঙ্কার ঋণ পুনর্গঠনের আলোচনা

আবদুল আউয়াল

প্রকাশিত : ২১:০৯, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

অর্থনৈতিক দূরাবস্থা কাটাতে বিদ্যমান ঋণ পুনর্গঠনের শর্তে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ২৯০ কোটি ডলারের প্রাথমিক ঋণ চুক্তি করেছে শ্রীলঙ্কা। 

তবে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটির এই ঋণ অর্থনৈতিকভাবে ধুঁকতে থাকা দ্বীপ দেশটি তখনই পাবে, যখন ঋণদাতা ভারত, জাপান ও চীনের মতো দেশগুলো শ্রীলঙ্কার ঋণ পুনর্গঠনে এগিয়ে আসবে। কিন্তু এই বিষয়ে চীন নীরব থাকায় আইএমএফের ঋণ তহবিলের আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়েই পড়ে আছে। এক প্রতিবেদনে কলম্বো গেজেট এই তথ্য জানিয়েছে।

অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় শ্রীলঙ্কাকে প্রাথমিকভাবে ২৯০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে আইএমএফ। গত ১ সেপ্টেম্বর আইএমএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই ঋণ কর্মসূচির উদ্দেশ্য শ্রীলঙ্কার সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা।”

এই অর্থ শ্রীলঙ্কা তখনই পাবে, যখন শ্রীলঙ্কা খেলাপি ঋণগুলো পুনর্গঠনে চীন, জাপান ও ভারতের মতো দেশগুলো এ গিয়ে আসবে।

রয়টার্স জানিয়েছিল, বর্ধিত ঋণ সুবিধার অধীনে আইএমএফ চার বছর মেয়াদে এই ঋণ দিচ্ছে। আইএমএফের ব্যবস্থাপনা ও নির্বাহী বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে এবং শ্রীলঙ্কার শর্ত পূরণের ভিত্তিতে এই চুক্তি চূড়ান্ত হবে।

কলম্বো গেজেট জানিয়েছে, আইএমএফের ঋণ ব্যয়ের শর্তের মধ্যে রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির প্রাযুক্তিক সহায়তায় শ্রীলঙ্কায় আর্থিক স্বচ্ছতা ও সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের মাধ্যমে দুর্নীতি কমিয়ে আনা এবং সুশাসন নিশ্চিত করা।

এই ঋণের জন্য শ্রীলঙ্কার সরকারি ঋণদাতাদের কাছ থেকে অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা চেয়েছে আইএমএম, পাশাপাশি বেসরকারি ঋণদাতাদের সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে সংস্থাটি।

বিৃবতিতে বলা হয়, আইএমফের ঋণ পরিশোধ ও অর্থায়নের ব্যবধান দূর করতে শ্রীলঙ্কার ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি ও বহুপক্ষীয় অংশীদারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থায়নের নিশ্চয়তার প্রয়োজন পড়বে।

আগের ঋণের কিস্তি দিতে না পারায় শ্রীলঙ্কার প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলারের ঋণ পুনর্গঠন করতে হবে। এ ব্যাপারে আলোচনার জন্য ভারত ও চীনসহ অন্যান্য প্রধান ঋণদাতা দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে জাপান।

আইএমএফের এই ঋণ কর্মসূচির লক্ষ্য শ্রীলঙ্কাকে রাজস্ব পুনর্গঠনে সহায়তা, জ্বালানি ও বিদ্যুতের জন্য নতুন মূল্য নির্ধারণ, সামাজিক ব্যয় বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন জোরদার এবং দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ পুনর্গঠন করা। পাশাপাশি দুর্নীতি কশাঘাত কমানো এবং শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার পথ খোলাও এর লক্ষ্য।

কলম্বো গেজেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ সেপ্টেম্বর আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উঠেছিল, চীন ঋণ পুনর্গঠনের সহায়তায় অস্বীকৃতি জানালে কী হবে। জবাবে আইএমএফ মিশন প্রধান সে সময় বলেন, এক বা একাধিক ঋণদাতা দেশ ঋণ পুনর্গঠনের সহায়তা দিতে না চাইলে অবশ্যই সমস্যা বেড়ে যাবে।

শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ বলছে, চীন এখনও ঋণ পুনর্গঠনে রাজি হয়নি। এর পরিবর্তে আগের ঋণে কোনো পরিবর্তন না এনে সেই ঋণ পরিশোধে শ্রীলঙ্কাকে আরও ঋণ দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছে।

বেইজিং বলছে, শ্রীলঙ্কাকে সহায়তায় চীন আইএমএফ ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ইতিবাচক ভূমিকাকে চীন সবসময় উৎসাহ দেয়। শ্রীলঙ্কা সরকার এ বছরের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধ স্থগিত করার ঘোষণার পরই চীনা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রীলঙ্কান কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছে এবং ঋণ পরিশোধের একটি সঠিক উপায় খুঁজে বের করার প্রস্তুতি ব্যক্ত করেছে।

জাপান ও ভারতের মতো চীনও ঋণ পুনর্গঠনে রাজি হবে সেই আশা প্রকাশ করেছেন শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি সাবরি। সেইসঙ্গে প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে ঋণ পুনর্গঠনের জাপানের সঙ্গে আলোচনায় ২৫ সেপ্টেম্বর দেশটি সফর করবেন।

স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থিক সংকটে পড়েছে ভারত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ায় তারা জ্বালানি তেল, খাবার ও ওষুধের মত জরুরি পণ্য আমদানি করতে পারছে না দেশটি।

নিত্যপণ্যের দাম সেখানে আকাশ ছুঁয়েছে; থমকে গেছে স্বাভাবিক জনজীবন। সংকটময় এ পরিস্থিতিতে দেশটি আইএমএফ এর কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি জরুরি ঋণ চেয়েছে।

আইএমএফের এই ঋণ কর্মসূচির লক্ষ্য শ্রীলঙ্কাকে রাজস্ব পুনর্গঠনে সহায়তা, জ্বালানি ও বিদ্যুতের জন্য নতুন মূল্য নির্ধারণ, সামাজিক ব্যয় বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন জোরদার এবং দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ পুনর্গঠন করা।

এসি
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted







© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি