ঢাকা, শুক্রবার   ১৪ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

জিনজিয়াংয়ে চীনের কঠোরতা কমলেও পুনর্বাসন দূর ভবিষ্যৎ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৪৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

Ekushey Television Ltd.

লম্বা সরু পপলার আর গাঁদা ফুলের গাছের সারি চলে গেছে ধুলোময় রাস্তা দুই পাশ ধরে, লোহার গেইটের বার ভেদ করে গ্রামের সেই রাস্তার দিকেই তাকিয়ে নিঃসঙ্গ এক প্রহরী। চুনকাম করা দেয়ালে ঘেরা সুরক্ষিত এই জায়গাটি ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ হিসাবে ব্যবহৃত হত।

স্থানীয়রা বলছেন, চীনের উত্তর-পশ্চিম জিনজিয়াং অঞ্চলের একটি ভয়ঙ্কর বন্দী শিবির ছিল সেটি, যেখানে চীন সরকার মুসলিম উইঘুরদের মতাদর্শিক সংস্কারের জন্য পাঠাত। তবে এখন তা কেবলই করোনভাইরাস কোয়ারেন্টাইন সেন্টার, যার দেয়ালগুলো সজ্জিত করা হয়েছে ডাক্তার ও সুস্থ পরিবারের প্রতীক রঙিন ম্যুরাল দিয়ে।

জিনজিয়াং জুড়ে আগের পুনঃশিক্ষা শিবিরগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য সেখানকার কঠোর নিয়মনীতি মেনে চলার অশুভ সতর্কতা হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। আর ওই এলাকার বাইরে থেকে যারা সেখানে যাচ্ছেন, তাদের চোখে পড়ছে কেবল প্রাকৃতিক বিবর্ণ এক দৃশ্য।

গত জুলাইয়ের শেষ থেকে অগাস্টের শুরুর দিকে নয়দিনের রিপোর্টিংয়ে সেখানকার চিত্র তুলে এনেছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

সংবাদামাধ্যমটি এক প্রতিবেদনে বলেছে, দৃশ্যমান অনেক নিরাপত্তা পদক্ষেপ কমিয়ে আনা হলেও জিনজিয়াংয়ের বাসিন্দারা সেখানে চীনের অন্যান্য এলাকার চেয়ে ব্যাপক সরকারি চাপের মধ্যে রয়েছে।

অগাস্টে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিনজিয়াংয়ে চীনা সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে মানবাধিকারের ওপর কঠোরও অযাচিত বিধিনিষেধসহ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত হতে পারে। 

বেইজিং বলছে, তাদের সেই পদক্ষেপ ছিল মূলত ধর্মীয় চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নায্য অভিযান। নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের যে কথা বলা হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে, সেটি তারা অস্বীকার করেছে।

জিনজিয়াংয়ে সাঁড়াশি অভিযানের আগে উইঘুররা মুসলমানদের পবিত্র আফাক খোজা মসজিদে সন্ধ্যার নামাজের জন্য জড়ো হতো। অগাস্টের এক সন্ধ্যায় মসজিদটি ছিল নিস্তব্ধ। আর এর পরিবর্তে পাশের একটি বাগানে পর্যটকদের জন্য একটি নাচের অনুষ্ঠান চলছিল।

ওই অঞ্চলে কী পরিমাণ চাপ সৃষ্টি করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ, এই দৃশ্য তাই-ই তুলে ধরে। অনেক মসজিদ ভেঙে বা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অল্প কিছু উইঘুর পুরুষের মুখে দাড়ি আছে, এবং অল্প কিছু নারী মাথার স্কার্ফ পরে। অনেককে আটক করে কারাগারে রাখা হয়েছে।

চীনে কঠোর বিধিনিষেধের বর্বরতা অনেক চীনা নাগরিকও একে সমর্থন করে। চীনের অন্যান্য অংশের জীবনও মহামারীতে আরও নিপীড়নমূলক হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ লকডাউন ও জিনজিয়াংয়ের কিছু কঠোর নীতি চীনের বাসিন্দাদের কাছে আরও স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে।

পর্যটন এলাকাগুলোতেও উইঘুরদের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। ট্যাক্সির পেছনে চিহ্নগুলো যাত্রীদের মনে করিয়ে দেয় তাদের কথোপকথন রেকর্ড করা হচ্ছে। মেশিনগান ও ট্র্যাঞ্চন বহনকারী নিরাপত্তারক্ষীরা কাশগরের বাসিন্দাদের করোনভাইরাস পরীক্ষার জন্য লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখছে।

বেশ কয়েকটি মসজিদের বাইরে পুলিশ কর্মকর্তারা ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্টারকে মসজিদের ছবি মুছে ফেলার জন্য বলতে ছুটে আসে। তারা বলে, ধর্মীয় কাঠামোর ছবি প্রকাশ করা নিষিদ্ধ। তবে এমন নিয়ম চীনের অন্য কোথাও নেই।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি