লাওসের ভাগ্যকে আঁকড়ে রেখেছে যে সেতু
প্রকাশিত : ১৮:৪৪, ৩ নভেম্বর ২০২২ | আপডেট: ১৮:৪৫, ৩ নভেম্বর ২০২২
উত্তর লাওসের জরাগ্রস্ত শহরের উপর দিয়ে সোজা চলে যাওয়া একটি রেলসেতু সংযোগের মানে কী তা বোঝার চেষ্টা করছিলেন সেখানকার বাসিন্দা বুনক্সে। তিনি বলছিলেন, “যখন আমি রেলপথটির দিকে তাকাই, আমি সমৃদ্ধি দেখতে পাই।”
পাঁচ সন্তানের বাবা বুনক্সে প্রশ্ন করেন, “আপনি কী জানেন, এখানকার কিছু বয়স্ক মানুষ আছে, যারা সারা জীবনে কখনও রাজধানীতে যায়নি? এখন প্রথমবারের মতো তারা এই রেল সেতুর ফলে ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছে।”
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬০০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত ওই প্রকল্প বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের সঙ্গে এশিয়ার অন্যতম দরিদ্র দেশ লাওসের ভাগ্যকে আঁকড়ে রেখেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র স্থলবেষ্টিত দেশটির ৭ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে লাওসের কমিউনিস্ট নেতৃত্বের পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য অংশ এই রেল সেতু।
চীনের জন্য লাওসের রুক্ষ ভূমির মাঝ দিয়ে ৪২২ কিলোমিটারের উচ্চগতির রেললাইনটি মেকং, মালয় উপদ্বীপ থেকে বেইজিংয়ের বেল্ট এবং রোড পরিকল্পনার কক্ষপথে নেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু লাওসের মধ্য দিয়ে এই প্রকল্পের যাত্রা এবং অগ্রগতি অসম দেখা যাচ্ছে।
জমির দাম, কৃষকের মজুরি বাড়ছে; কারণ রেলপথের পাশে ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গড়ে উঠছে এবং চীনা বিনিয়োগকারীরা সেখানে শক্তি প্রয়োগ করছে। প্রত্যন্ত শহরগুলোতে অর্থনৈতিক আধিপত্যের নতুন স্তর এটি।
হুটং-স্টাইল বার এবং শাওমি ফোনের দোকানগুলো রাস্তার ধারে সমৃদ্ধির আলোকবর্তিকা, অন্যদিকে উইচ্যাটের অনুবাদ অ্যাপ হলো চীন-লাওসের যোগাযোগ বা ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের মাধ্যম। কিন্তু সহজ এই চিত্রের বাইরে উন্নয়ন চিত্র দেখা যাচ্ছে ভিন্নরকম।
নতুন লাল-ছাদওয়ালা সারি সারি বাংলোগুলো হাজার হাজার লোকের বাস্তুচ্যুতির চিত্র তুলে ধরছে। তারা রেল, পাওয়ার স্টেশন, খনি এবং বাঁধ নির্মাণের জন্য বসত-ভিটা ছেড়ে দিয়েছে। অন্যদিকে সরকার সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে জীববৈচিত্র্যময় দেশগুলোর মধ্যে লাওসের বনগুলোতে পরিবর্তনের চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রাচীন বনকে গ্রাস করছে এই অবকাঠামো প্রকল্প।
এদিকে অর্থনৈতিক স্তূপের নীচে পড়ে থাকে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলো বলছে, তাদের মূল জমির দাম দেওয়া হচ্ছে না। এই উচ্চ-গতির রেল ছোট দেশটিতে চমকপ্রদ পরিবর্তন এনেছে, যার সর্বসমেত চলে গেছে চীনে।
এসি
আরও পড়ুন