ঢাকা, সোমবার   ০৭ অক্টোবর ২০২৪

আহ্ মাহাথির!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:২৭, ২১ নভেম্বর ২০২২

জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে এমন একটি ধাক্কা খেতে হবে তা হয়ত ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি মাহাথির মোহাম্মদ। নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রিজেত ওয়েলশ বার্তা সংস্থা এএফপিকে যেমনটা বলেছিলেন, ‘মাহাথিরের দিন শেষ’, গত শনিবারের সাধারণ নির্বাচনে ‘আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক, এবং তার দলের ভরাডুবির মধ্যে দিয়ে কার্যত সেটাই সত্যি হলো। 
নিজের আসনে তো হেরেছেনই, সঙ্গে জামানতও হারিয়েছেন ৯৭ বছর বয়সী এই রাজনীতিক। ওই আসনে পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে চতুর্থ হন মাহাথির। ৫৩ বছরের মধ্যে এটাই তার প্রথম পরাজয়। অন্যদিকে তার দল নির্বাচনে একটি আসনও পায়নি। 
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো মাহাথিরের এই পরাজয়কে ‘বিস্ময়কর’ বলছে। 
অথচ কতই না বর্ণাঢ্য ছিল তার রাজনৈতিক জীবন।
১৯৪৬ সালে চিকিৎসক থেকে রাজনীতিতে যখন মাহাথিরের হাতেখড়ি তখন তার বয়স ২১ বছর। ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (ইউএমএনও) হয়ে তিনি ১৯৬৪ সালে প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।
মালয় সম্প্রদায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ১৯৬৯ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত হন মাহাথির। পার্লামেন্টের আসন হারান তিনি। ১৯৭০ সালে তাকে ইউএমএনওতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। তিনি ১৯৭২ সালে দলের সুপ্রিম কাউন্সিল পুনর্নির্বাচিত হন। মাহাথির ১৯৭৪ সালে পার্লামেন্ট সদস্য পুনর্নির্বাচিত হন। একই বছর তাকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়। তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান।


১৯৭৬ সালে মাহাথির উপপ্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮১ সালের জুনে তিনি ইউএমএনওর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। একই বছরের জুলাইয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। তারপর টানা ২২ বছর মাহাথির মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মাহাথির দেশকে রূপান্তরের কাজে নেমে পড়েন। ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির পর প্রথমবারের মতো মালয়েশিয়াকে তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছে দেন।
দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকাকালে মালয়েশিয়াকে এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেন মাহাথির। এই একটি কারণেই তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অনুকরণীয় রাজনৈতিক নেতায় পরিণত হন। তার উপাধি হয় ‘আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক’।
তবে সমালোচনার বাইরে ছিলেন না মাহাথির। বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগ ওঠে মাহাথিরের বিরুদ্ধে। তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানো ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন মাহাথির।
এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৩ সালে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়েন মাহাথির। পরে নিজ দলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা নাজিব রাজাককে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে হটাতে মাহাথির অবসর ভেঙে ২০১৮ সালে আবার রাজনীতিতে ফেরেন।
একসময়ের রাজনৈতিক ‘শত্রু’ আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে জোট করেন তিনি। ২০১৮ সালে নির্বাচনে এই জোট জয়ী হলে ৯২ বছর বয়সে মাহাথির আবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন। ক্ষমতাসীন জোটের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাহাথির পদত্যাগ করেন।
গত অক্টোবরে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়। ডাকা হয় আগাম নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়ে মাহাথির সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে চরমভাবে ব্যর্থ হওয়ায় চমকটা এসেছে অন্যভাবে। 
কিন্তু কেন এমন ভরাডুবি আধুনিক মালয়েশিয়ার জনকের?
বিশ্লেষকরা বলছেন, তুখোড় রাজনীতিবিদ মাহাথির মোহাম্মদের হারার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। মাহাথির মোহাম্মদ একটি জোটের নেতৃত্ব দেন। তিনি ক্ষমতাসীন বারিসান ন্যাশনালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে নির্বাচনে প্রচার চালান। তবে অবশেষে তার সাফল্যগাথা আর লেখা হয়নি।  
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ব্যাপক দুর্নীতি সংশ্লিষ্টতার কারণে মাহাথির মোহাম্মদ রাজনীতিতে ফিরেছিলেন। কিন্তু তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর তিনি মালয়েশিয়ার দুর্নীতি সামাল দিতে পারেননি। 


নির্বাচনে মাহাথিরের পরাজয়ের অন্যতম কারণ মনে করা হচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বীদের শক্ত রাজনৈতিক অবস্থান ও কৌশল। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের নেতৃত্বাধীন জোট পেরিকাতান শক্ত অবস্থানে ছিল। এছাড়া বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের দল পাকাতান হারাপান মালয়েশিয়ার রাজীতিতে বেশ শক্ত বলয় সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। 
বিশ্লেষকদের মতে, মাহাথিরের পরাজয়ের আরেকটি কারণ হচ্ছে তার বয়স। ৯৭ বছরে রাজনীতির প্রভাব ধরে রাখতে পারেননি মাহাথির মোহাম্মদ। তার প্রভাব ক্রমশ কমতে শুরু করে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে তার প্রভাব নিম্নগামী ছিল।
এছাড়া চলতি মাসে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাহাথির জানিয়েছিলেন, হেরে গেলে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন। রাজনীতির প্রতি তার অনাস্থার কারণে তরুণ প্রজন্মসহ কেউ নির্বাচনে মাহাথিরকে কেউ বিশ্বাস করতে পারেননি। এমনকি নিজ আসনেও ভরাডুবি হয়েছে তার। 
এএইচএস/ এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি