ঢাকা, রবিবার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জার্মানিতে ভেগান ডিম তৈরির প্রচেষ্টা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১৯, ২৪ জুলাই ২০২৪

ভেগান ডিম' কথাটা শুনলে সোনার পাথরবাটি মনে হতে পারে৷ তবে জার্মানিতে কিছু গবেষক ও স্টার্টআপ কোম্পানির কর্ণধাররা ঠিক সেই অসাধ্যসাধনের চেষ্টা করছেন৷ কাজটা কঠিন হলেও তারা হাল ছাড়তে নারাজ৷

আমাদের অনেকের কাছে ময়দা ও ডিম আদর্শ উপকরণ৷ কিন্তু ভেগান হিসেবে বেক করতে গেলে ডিমের বিকল্পের খোঁজ করতে হয়৷ ময়দার তালে ডিমের সেরা বিকল্প কী হতে পারে? আপেলের সস? লুপিন ফ্লাওয়ার? নাকি শাক-সবজি সিদ্ধ করার পর অবশিষ্ট তরল? মিউনিখ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মারিউস হেংকেল মনে করেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে কি আমার কাছে ডিমের সব বৈশিষ্ট্যের বিকল্প হিসেবে এর কোনোটাই সমাধানসূত্র হতে পারে না৷''

ডিম অত্যন্ত জটিল প্রাকৃতিক পণ্য৷ ডিমের অনেক বৈশিষ্ট্য সহজে নকল করা সম্ভব নয়৷ কোষ বিজ্ঞানী হিসেবে মারিউস হেংকেলের কাছে সেটা একটা চ্যালেঞ্জ৷ কিন্তু তিনি সবকিছু খাদ্য শিল্পখাতের হাতে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত নন৷

কয়েকটি স্টার্টআপ কোম্পানিও সে ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে চায়৷ যেমন বার্লিনের ‘লাভলি ডে ফুডস' কোম্পানি৷ কোম্পানির কর্ণধার লিডিয়া ফাবিয়ান বলেন, ‘‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, যে পরিবেশের উপর আমাদের বর্তমান খাদ্য ব্যবস্থার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে৷ সেই মাত্রা অত্যন্ত বেশি৷ সেটা আর চলতে দেওয়া যায় না, কারণ আমরা আমাদের গ্রহ ধ্বংস করে ফেলছি৷''

তাহলে ডিমের নিখুঁত বিকল্প কেমন দেখতে হবে এবং কী করবে?

ভেরোনিকা গার্সিয়া-আর্তেয়াগা মনে করেন, তার কাছে সেই প্রশ্নের জবাব রয়েছে৷ মেক্সিকোয় তার জন্ম৷ সেখানকার মানুষ প্রচুর ডিম খায়৷ ফলে তিনি সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিলেন৷ ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউট ফর প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ কাজ করতে করতে তিনি এমন এক ডিম সৃষ্টি করেন, যা পরিবেশ ও প্রাণিজগতের উপর কোনো প্রভাব রাখে না৷

নামী বিনিয়োগকারীদের মদত নিয়ে তিনি বার্লিনে নেগস্ট নামের এক স্টার্টআপ কোম্পানি খোলেন৷ খাদ্য প্রযুক্তিবিদ হিসেবে তিনি প্রথম সম্পূর্ণ ভেগান ডিম উৎপাদনের ব্রত নিয়েছেন৷ সেই বিকল্পের এমনকি খোলসও থাকবে৷ তার টিম আপাতত ডিমের কুসুম আরো কিছুটা তরল করতে বিন ও রাঙালু থেকে প্রোটিন যোগ করছে৷ সেই ভেগান ডিমে এমনকি উদ্ভিদ ভিত্তিক তেল ও ক্যালসিয়াম থেকে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও থাকবে৷ সব মিলিয়ে ১৪টি উপাদান স্থিতিশীল এক অবস্থা সম্ভব করছে৷ সেই টিম বিশেষ করে ডিমের সাদা অংশের বিকল্প সৃষ্টির কাজে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে৷ ভেরোনিকা বলেন, ‘‘আমাদের এমন কিছুর সন্ধান করতে হয়েছিল, যা মুরগির ডিমের মতো স্বচ্ছ এবং প্রোটিনের সঠিক মাত্রা রয়েছে৷''

ডিমের সাদা অংশ ও কুসুমের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা ছিল এর পরের চ্যালেঞ্জ৷ দেখা গেল, ভেগান কুসুমের ক্যালসিয়াম এক অ্যালজির এক্সট্র্যাকটের সংস্পর্শে এলে মেমব্রেন বা পর্দা সৃষ্টি করে৷ অর্থাৎ উদ্ভিদভিত্তিক সেই অংশ মেমব্রেনে ঢাকা এক গোলক হয়ে উঠে এগ হোয়াইট থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে৷

কিন্তু ডিমের বৈশিষ্ট্যগুলি কীভাবে অনুকরণ করা সম্ভব? প্রতিযোগী কোম্পানি হিসেবে বার্লিনেরই লাভলি ডে ফুডসও ডিমের সেই বৈশিষ্ট্য অনুকরণের চেষ্টা করছে৷ মূল ডিমে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিনের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সেটা সম্ভব করে৷ বিকল্প হিসেবে ফেনা, জেল বা বাইন্ডের কথা ভাবা হচ্ছে৷ প্রযুক্তির সাহায্যে সেই সব প্রক্রিয়ায় রদবদল করা সম্ভব৷ লিডিয়া ফাবিয়ান বলেন, ‘‘আমরা প্রিসিশান ফার্মেন্টেশন নামের যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, তা কাজ, গঠন ও মাত্রার নিরিখে ডিমের মতো হুবহু প্রোটিন উৎপাদন সম্ভব করছে৷ অনেকে বলছে, সেটা ডিমের তুলনায় আরো ভালো৷''

কিন্তু এমন ভেগান ডিমের স্বাদ আসলে কেমন?

বার্লিনের নেগস্ট নামের স্টার্টআপ ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি ইভেন্টে মূল ও ভিগান ডিম চেখে দেখার সুযোগ দিয়েছে৷ ৮৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারীরাই নাকি দুইয়ের মধ্যে ফারাক বুঝতে পারেন নি৷ কিন্তু সেই ডিম মাফিন বা অন্য বেক করা পণ্যের মধ্যে ছিল৷ ডিম ভাজা বা পোচের ক্ষেত্রে এমন তুলনা এখনো করা হয়নি৷

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

এসবি/ 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি