হামলা বাড়ছে, লেবানন ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ
প্রকাশিত : ১৫:১৪, ৬ অক্টোবর ২০২৪
শনিবার ইসরায়েল লেবাননে বোমা বর্ষণের পরিধি বৃদ্ধি করেছে। তারা এক ডজন বার বিমান আক্রমণ চালিয়েছে বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলের শহরতলিতে। তা ছাড়া হিজবুল্লাহ ও হামাস উভয়কে লক্ষ্যবস্তু করে এই প্রথম ইসরায়েল উত্তরের আরও গভীরে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে আঘাত হেনেছে।
ওই অঞ্চলে সংঘাত ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ায় ফিলিস্তিনি শরণার্থীরাসহ লেবাননের হাজার হাজার হাজার মানুষ ক্রমাগত পালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে গাজায় যুদ্ধ শুরু হ্ওয়ার বার্ষিকীর প্রাক্কালেই বিশ্ব জুড়েই সমাবেশ হয়েছে।
ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী বলছে, লেবাননের উত্তরাঞ্চলের ত্রিপোলির কাছে বেদাউই শিবিরে ইসরায়েলের আক্রমণে হামাসের সামরিক শাখার একজন কর্মকর্তা, তার স্ত্রী ও দুটি ছোট মেয়ে নিহত হয়। এএফপি ওই কর্মকর্তাকে সাঈদ আতাল্লাহ আলী বলে সনাক্ত করেছে। পরে হামাস জানায় লেবাননের বেকা উপত্যকার পূর্বাঞ্চলে সামরিক শাখার আরেকজন সদস্য নিহত হয়।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে লেবাননে হামাসের সামরিক শাখার দু জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে তারা হত্যা করেছে। সেখানে সাম্প্রতিক সপ্তাহে লড়াই তীব্রতর হয়েছে। ইসরায়লে-হামাস যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে ইসরায়েল লেবানন-ভিত্তিক হেজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের সহ বহু হামাস কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে।
ইসরায়েল বলছে তারা অভিন্ন সীমান্ত থেকে জঙ্গি গোষ্ঠীকে তাড়ানোর উদ্দেশ্যে হেজবুল্লাহ কমান্ডার ও তাদের সামরিক সাজসরঞ্জামকে লক্ষ্য বস্তু করছে।
দু সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে অসামরিক লোকজন, প্যারামেডিকস ও হিজবুল্লাহ যোদ্ধাসহ কমপক্ষে ১,৪০০ লেবাননবাসীকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১২ লক্ষ মানুষ তাদের ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।
লেবাননের সব চেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের অব্যবহিত পরে ইসরায়েলে রকেট হামলা শুরু করে, তার বলে এটি হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থন। হেজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মধ্যে প্রায় প্রতিদিন গুলি বিনিময় হয়েছে।
গত সপ্তাহের এক নাগাড়ে ইসরায়েলি আক্রমণে দীর্ঘ দিনের হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ ও অন্যান্যরা নিহত হবার পর, ইসরায়েল তাদের কথায় সীমিত ভাবে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে স্থল অভিযান চালায়। প্রচন্ড স্থল সংঘাতে ন জন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছে। ইসরায়েল বলছে ঐ একই সংঘাতে ২৫০ জন হেজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী শনিবার জানায় লেবানন থেকে প্রায় ৯০ টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি অঞ্চলে নিক্ষেপ করা হয়। অধিকাংশটিকে মাঝ পথেই থামিয়ে দেয়া হয় তবে অনেকগুলি আবার উত্তরাঞ্চলের আরব শহর দেইর আল আসাদে গিয়ে পড়ে যেখানে পুলিশ বলছে তিন জন আহত হয়।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি দামেস্কে সংবাদদাতাদের বলেন , “ আমরা গাজা ও লেবাননে অস্ত্র বিরতিতে পৌঁছাবার চেষ্টা করছি”। মন্ত্রী অবশ্য সেই সব দেশের নাম উল্লেখ করেননি যারা এই উদ্যোগ নিচ্ছে তবে কেবল এ টুকু বলেছেন যে এই উদ্যোগে রয়েছে আঞ্চলিক রাষ্ট্রসমূহ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বাইরের কিছু দেশ।
আরাঘচির এই বক্তব্যের একদিন আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ইসরায়েলে তাদের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের প্রশংসা করেন এবং বলেন যে প্রয়োজন হলে তারা আবার এ রকমটি করতে প্রস্তুত রয়েছে।
পায়ে হেঁটে লেবানন থেকে পালাচ্ছে লোকজন
লেবাননের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ মাধ্যম ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সির মতে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার অবধি ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছে।
লেবাননের সরকারি কমিটির মতে দু সপ্তাহেরও কম সময়ে ইসরাইলি আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্রায় ৩,৭৫,০০০ লোক সীমান্ত পেরিয়ে লেবানন থেকে সিরিয়ায় চলে গেছে।
এসোসিয়েটেড প্রেসের সাংবাদিকরা দেখেছেন বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বিমান আক্রমণে রাস্তায় বড় বড় গর্ত হওয়া সত্ত্বেও হাজার হাজার লোক পায়ে হেঁটে মাসনা সীমান্ত অতিক্রম করেছে। মনে করা হয় ইরানের কাছ থেকে হেজবুল্লাহর অধিকাংশ অস্ত্রই আসে সিরিয়া হয়ে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে তাদের বিশেষ বাহিনী হেজবুল্লাহ অবকাঠামোর বিরুদ্ধে স্থল আক্রমণ চালাচ্ছে যার ফলে ক্ষেপণাস্ত্র, নিক্ষেপের স্থান, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এবং অস্ত্র গুদামের মতো স্থাপনাগুলি ধ্বংস হয়েছে।
আরও মানুষকে গাজা ত্যাগের আদেশ
ফিলিস্তিনের চিকিত্সা কর্মকর্তারা বলেছেন গাজার উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে শনিবার ইসরায়েলি আক্রমণে অন্তত ন জন লোক প্রাণ হারিয়েছেন।
উত্তরাঞ্চলের বেঈত হানুন শহরে একটি আক্রমণে দুই শিশুসহ অন্তত পাঁচ জন প্রাণ হারায় বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় । আওদা হাসপাতাল বলছে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে কমপক্ষে চারজন প্রাণ হারান।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এ ব্যাপারে তাত্ক্ষণিক কোন মন্তব্য দেয়নি কিন্তু হামাসকে অসামরিক এলাকা থেকে তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাবার জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযুক্ত করে আসছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজার মধ্যাঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ নেতজারিম করিডর ধরে সেই স্থান ত্যাগ করতে ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করে দিয়েছে । এলাকাটি অস্ত্র বিরতি চুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। নুসেইরাত ও বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের অংশ বিশেষ ত্যাগ করে লোকজনকে মুওয়াসি নামের উপকুলীয় অঞ্চলে চলে যেতে সামরিক বাহিনী নির্দেশ দিয়েছে। এই এলাকাটিকে ইসরায়েল মানবিক অঞ্চল বলে অভিহিত করছে।
এটা এখনও পরিস্কার নয় ঠিক কতজন ফিলিস্তিনিকে ওই অঞ্চল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় বলছে যে গত এই প্রায় এক বছরের যুদ্ধে প্রায় ৪২,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তারা অবশ্য নিহত সামরিক ও বেসামরিক লোকদের সংখ্যা আলাদা করে জানায়নি। তবে এই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে গাজার বাসিন্দাদের প্রায় ৯০% ই এখন বাস্তুচ্যূত।
সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা
এসবি/
আরও পড়ুন