সালমান খানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জেরে খুন বাবা সিদ্দিকি?
প্রকাশিত : ১৪:৩৮, ১৪ অক্টোবর ২০২৪
শনিবার ভারতের মহারাষ্ট্রের সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকিকে মুম্বাইতে খুন করা হয়। অভিযুক্ত লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং। সালমান খানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্যই খুন করা হলো তাকে?
শনিবার রাতে ছেলের অফিস থেকে বেরনোর পর বাবা সিদ্দিকিকে লক্ষ্য করে ছয়টি গুলি চালানো হয়। তিনটি তার শরীরে লাগে। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, এরপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, তিনজন ভাড়াটে খুনিকে বাবা সিদ্দিকিকে হত্যার কাজে লাগানো হয়েছিল। এর মধ্যে হরিয়ানার গুরমেল সিং এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে কাশ্যপকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তৃতীয় অভিযুক্ত শিব কুমার পলাতক।
আইনজীবীর দাবি ছিল, কাশ্যপ অপ্রাপ্তবয়স্ক। তার বয়স ১৭ বছর। আদালত ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ দেয়। তার হাড় পরীক্ষা করে দেখা যায়, তার বয়স ১৯ বছর। ফলে প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবেই তার বিচার হবে।
মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে জানিয়েছেন, বিষ্ণোই গ্যাং বা অন্য যে কোনো অপরাধী গোষ্ঠী এর পিছনে থাকুক না কেন, কাউকে ছাড়া হবে না। তৃতীয় খুনিকে গ্রেপ্তার করা হবে।
সূত্র জানিয়েছে, ধৃতরা জানিয়েছে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করেছিল। লরেন্স এখন আমেদাবাদ জেলে বন্দি।
রোববার মুম্বাই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ ২৮ বছর বয়সি প্রবীণ লোনকারকে এই চক্রান্তের সহযোগী অভিযোগ করে গ্রেপ্তার করেছে। তার ভাই শুভম লোনকারকেও পুলিশ খুঁজছে। শুভম এই হত্যার পিছনে বিষ্ণোই গ্যাং ছিল বলেও জানিয়েছিল। তারা কাশ্যপদের সঙ্গে সহযোগিতা করছিল বলে পুলিশের দাবি।
এনডিটিভিকে সূত্র জানিয়েছে, চতুর্থ আরেকজন চক্রান্তকারী ছিল। তার নাম মোহাম্মদ জিশান আখতার। লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্যদের সঙ্গে তার পাটিয়ালা জেলে দেখা হয়। গত ৭ জুন সে ছাড়া পায়। তারপর সে গুরমেলের সঙ্গে দেখা করে। সে মুম্বাইতে অভিযুক্তদের থাকার ব্যবস্থা ও পালানোর ব্যবস্থা করেছিল বলে অভিযোগ।
কেন এই হত্যা?
মহারাষ্ট্রের তিনবারের বিধায়ক ও সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকিকে কেন হত্যা করা হলো? পুলিশ এখনো পর্যন্ত এর কোনো কারণ জানায়নি।
লোনকর তার পোস্টে দাবি করেছিল, সিদ্দিকিকে মারা হয়েছে, কারণ সে দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং সালমান খানের ঘনিষ্ঠ ছিল। সালমান খানের বাড়ির সামনে গুলিচালনার ঘটনায় ধৃত অনুজ থাপানের পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর সঙ্গেও সিদ্দিকি জড়িত ছিলেন বলে তার অভিযোগ।
হিন্দিতে লেখা পোস্টে বলা হয়েছে, তাদের সঙ্গে কারো কোনো শত্রুতা নেই। তবে যারা সালমান খান এবং দাউদ গোষ্ঠীকে সাহায্য করবে, তারা যেন হিসাব-কিতাব করে নেয়। পুলিশ এখন এই পোস্টের সত্যতা যাচাই করছে।
সিদ্দিকির সঙ্গে সালমান খান-সহ বলিউডের তারকাদের খুবই ঘনিষ্ঠতা ছিল। সিদ্দিকির গুলি লাগার খবর শুনেই সালমান খান হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন।
সিদ্দিকির ইফতার পার্টিতেই সালমান ও শাহরুখের বিরোধ মিটেছিল এবং একে অন্যকে কাছে টেনে নিয়েছিলেন।
২০২৩ সালের নভেম্বরে পা়ঞ্জাবি গায়ক জিপ্পি গ্রেওয়ালের ক্যানাডার বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। তখন বিষ্ণোই গ্যাংয়ের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, গ্রেওয়াল সালমানের প্রভূত প্রশংসা করে বলেছিলেন, বলিউড তারকা তার ছোট ভাইয়ের মতো। তাই গুলি চালানো হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে আরেক পাঞ্জাবি গায়ক এপি ধীলোঁর বাড়ির কাছে গুলি চলে। তিনি তার গানের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন,এবং ওই ভিডিওতে সালমান খান ছিলেন।
১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে যোধপুরে 'হাম সাথ সাথ হ্যায়'-এর শুটিং চলার সময় সালমান খান একটি কৃষ্ণসার হরিণ শিকার করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
বিষ্ণোইরা কৃষ্ণসার হরিণকে পবিত্র বলে মনে করে এবং তারা এই ঘটনায় ভয়ংকর ক্ষুব্ধ হয়।
২০১৮ সালে লরেন্স বিষ্ণোই আদালতে বলেছিল, ''আমরা সালমান খানকে যোধপুরে হত্যা করব। আমরা অ্যাকশন নেয়ার পর সকলে তা জানতে পারবেন। আমি এখনো কিছু করিনি। আমার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ ছাড়াই অভিযোগ করা হচ্ছে।''
নিরাপত্তা বাড়ানো হলো
সালমান খানের বাসভবনের কাছে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল সালমানের বাড়ির বাইরেও গুলি চলে। সালমান তখন বলেছিলেন, বিষ্ণোই গ্যাং এই কাজ করেছে বলে তিনি মনে করেন। তারা তাকে ও পরিবারেরর মানুষকে হত্যা করতে চাইছে।
বাবা সিদ্দিকির হত্যার পরে সালমান খানের বাড়ির নিরাপত্তা যেমন বাড়ানো হয়েছে, তেমনই দক্ষিণ মুম্বাইয়ের মালাবার হিলসে মুখ্যমন্ত্রী, উপ মুখ্যমন্ত্রী ও অন্য ভিআইপি-রা যেখানে থাকেন, সেখানে নিরাপত্তা অনেকখানি বাড়িনো হয়েছে।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
আরও পড়ুন