কমনওয়েলথের নতুন মহাসচিব ঘানার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শার্লি
প্রকাশিত : ১৬:৫৪, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
সামোয়াতে আয়োজিত ৫৬ সদস্য রাষ্ট্রের কমনওয়েলথের এক বর্ণাঢ্য শীর্ষ সম্মেলনে ঘানার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শার্লি আয়োরকর বোচওয়েকে সংস্থাটির নতুন মহাসচিব ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার এই শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়। সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশের বেশিরভাগ স্বাধীন দেশ নিয়ে কমনওয়েলথ গঠিত।
এ পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তিনজন প্রার্থীর মধ্যে একজন ছিলেন বোচওয়ে। প্রার্থীরা ঔপনিবেশিকতা ও দাসত্বের উত্তরাধিকার মোকাবিলা করার জন্য ব্রিটেনের আহ্বানকে সমর্থন করেছেন।
একজন সাবেক আইন প্রণেতা বোচওয়ে বিগত সাত বছর ধরে ঘানার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ঘানার দুই বছরের মেয়াদের সময়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ঘানার এই মেয়াদ শেষ হয়।
তিনি কমনওয়েলথ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির খসড়াকে সমর্থন করেছেন। এর আগে তিনি বলেছেন যে, তিনি ক্ষতিপূরণের দাবি করবেন।
তিনি এই বছরের শুরুর দিকে লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আর্থিক ক্ষতিপূরণই সবচেয়ে ভাল হবে।’
একজন কমনওয়েলথ মহাসচিব সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে চার বছর দায়িত্ব পালন করতে পারেন। বর্তমানে ডোমিনিকান ব্যারনেস প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড এ দায়িত্বে রয়েছেন।
নিয়ম অনুসারে মহাসচিবের ভূমিকাটি কমনওয়েলথের চারটি ভৌগলিক ব্লকের চারপাশে আবর্তিত হয়- প্রশান্ত মহাসাগর, এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা। সে অনুসারে এবার আফ্রিকার পালা।
বোচওয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমাকে কমনওয়েলথের পরবর্তী মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের অপ্রতিরোধ্য সমর্থনে সত্যিই কৃতজ্ঞ।’
কমনওয়েলথ গণতান্ত্রিক শাসন, বাণিজ্যে সহযোগিতা, শিক্ষা, জলবায়ু সমর্থন ও আর্থিক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা প্রচার করে। এর নেতৃত্বে আছেন রাজা তৃতীয় চার্লস। তবে সেক্রেটারি জেনারেল লন্ডন ভিত্তিক সচিবালয়টি পরিচালনা করবেন।
সামোয়াতে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে বোচওয়েকে মনোনিত করা হয়। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর মূলত আলোচনা হবে বলে আশা করা হলেও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।
অনেক আফ্রিকান, ক্যারিবিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ব্রিটেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিগুলোর কাছ থেকে উপনিবেশ আমলের ‘দাসত্বের’ জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ চায়। নিদেনপক্ষে রাজনৈতিক সংশোধন করতে চায়।
তারা চায় যুক্তরাজ্যের নেতারা যেন ন্যায়বিচার নিয়ে আলোচনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন। আর এতে আর্থিক ক্ষতিপূরণও থাকতে পারে।
তবে এটি এমন একটি বিতর্ক, যা এড়াতে ব্রিটেনের আর্থিক সংকটে থাকা সরকার কঠোর পরিশ্রম করেছে।
বাহামাসের প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ ডেভিস এএফপিকে বলেছেন, অতীত সম্পর্কে একটি বাস্তব আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘আমরা কীভাবে এই ঐতিহাসিক ভুলগুলোকে মোকাবেলা করব- সে সম্পর্কে একটি বাস্তব সংলাপের সময় এখন এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিশোধমূলক বিচার একটি সহজ কথোপকথন নয়, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দাসত্বের ভয়াবহতা আমাদের সম্প্রদায়গুলোতে একটি গভীর প্রজন্মের ক্ষত রেখে গেছে এবং ক্ষতিপূরণমূলক ন্যায়বিচারের লড়াই এখনও শেষ হয়ে যায়নি।’
বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছেন যে, চার শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে প্রায় ১০-১৫ মিলিয়ন ক্রীতদাস আফ্রিকা থেকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এর প্রকৃত পরিসংখ্যান কখনই জানা যাবে না। অনুশীলনটি অবশেষে ১৮৭০ সালের দিকে শেষ হয়েছিল।
ব্রিটিশ রাজপরিবার-যারা বহু শতাব্দী ধরে দাস ব্যবসা থেকে উপকৃত হয়েছে, তাদের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজা তৃতীয় চার্লস শুক্রবার শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিনিধিদের ‘বিভাজনের ভাষা প্রত্যাখ্যান করতে’ বলেন।
তিনি বলেন, ‘কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মানুষের কথা শুনে আমি বুঝতে পারি, কীভাবে আমাদের অতীতের সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিকগুলো প্রতিধ্বণিত হচ্ছে।’
চার্লস আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কেউই অতীতকে পরিবর্তন করতে পারবে না। তবে আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সমস্ত হৃদয় দিয়ে অসাম্যের যাতনা নিরসনে সৃজনশীল উপায় খুঁজে বের করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে পারি।’
এএইচ
আরও পড়ুন