গণভোটের অপেক্ষায় কাতালানরা, ঠেকাতে প্রস্তুত স্পেন
প্রকাশিত : ১২:১২, ১ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ১২:১৩, ১ অক্টোবর ২০১৭
আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার মুখেই স্বাধীনতার প্রশ্নে আয়োজিত গণভোটে অংশ নিতে জড়ো হচ্ছেন কাতালানরা। রোববার ভোর থেকে বার্সেলোনার বেশ কয়েকটি স্কুলের বাইরে ভোটারদের লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে। স্পেন সরকার আগেই গণভোটকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। শহরজুড়ে টহল অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। যেকোনো সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে গণভোট সমর্থনকারীদের সংঘাতের আশংকা করা হচ্ছে।
সেখানকার কর্মকর্তারা বলছেন, ভোট শুরুর জন্য ব্যালট বাক্স প্রস্তুত রয়েছে এবং গণভোটে ব্যাপক সাড়া মিলবে বলে ধারণা করছেন তারা। কাতালান নেতারা জোর দিয়ে বলেছেন, স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৯ টায় গণভোট শুরু হওয়ার কথা। তবে ভোটগ্রহণ থামানোর জন্য সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়েছে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার। সকালে ভোট শুরুর কথা থাকলেও ভোটগ্রহণ শুরুর অনেক আগেই গভীর রাত থেকে কেন্দ্রে অবস্থান নেন ভোটাররা। তারা রাতভর কেন্দ্র পাহারা দেন। তবে স্পেনের পুলিশ বলছে, স্বাধীন কাতালোনিয়ার সমর্থকদের উচ্ছেদ করা হবে।
স্পেনের কেন্দ্রিয় সরকার কাতালোনিয়ার এই গণভোটকে ‘সাংবিধানিকভাবে অবৈধ’ অ্যাখ্যা দিয়ে যে কোনো মূল্যে তা বন্ধের হুংকার দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অতিরিক্ত কয়েক হাজার পুলিশ এনে বার্সেলোনা ও অন্যান্য শহরে মোতায়েন করা হয়েছে। যদিও স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন দেশ কাতালোনিয়া প্রতিষ্ঠায় সমর্থনকারী হাজার হাজার মানুষ রাতভর ভোটকেন্দ্র হিসেবে ঘোষিত স্কুলগুলো ঘিরে অবস্থান নেন।
সকাল ৯টায় গণভোট শুরুর কথা থাকলেও গভীর রাত থেকেই স্কুলগুলোতে বানানো ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নেন স্বাধীনতাকামী কাতালোনিয়ার সমর্থকরা— রয়টার্স
রোববার সকালে ৩০টি ভ্যান, বিভিন্ন আকারের যানবাহন ও ট্রাকভর্তি সিভিল গার্ড পুলিশ সদস্যদের বার্সেলোনার বন্দর ছাড়তে দেখা গেছে। শনিবার পুলিশ কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক সরকার যে স্কুলগুলোকে ভোট কেন্দ্র বানিয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই বন্ধ করে দেয়। ভোট নিশ্চিতে আগের দিন থেকে স্বাধীনতাকামীরা অনেক স্কুল দখলে রেখেছিল। এমনকি স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও শুক্রবার স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ার পরও সেখানেই থেকে গেছেন।
কেন্দ্রীয় সরকার পুলিশকে স্কুলগুলো খালি করে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ পরে আঞ্চলিক সরকারের টেলিযোগাযোগ কেন্দ্রেরও দখল নেয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় আয়োজকরা বলেন, `আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে সব বয়সের প্রচুর মানুষ যেন উপস্থিত থাকেন`, যেকোন পুলিশি বাধা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিহত করারও আহ্বান জানানো হয় আয়োজকদের পক্ষ থেকে। রোববার `গণতন্ত্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন` স্থানীয় কাতালান একটি টেলিভিশনকে বলেন আঞ্চলিক ভাইস-প্রেসিডেন্ট ওরিওল জাঙ্কারাস। তিনি বলেন, `আমরা অনেকে বাধা অতিক্রম করেছি, এমন কিছু নেই যা আমরা পার হতে পারবো না।` ওরিওল জাঙ্কারাস আরও বলেন, `আমরা যদি নিজেদের অধিকার রক্ষা না করি, তাহলে কে করবে?` গণভোটে ব্যালট পেপারে কেবল একটি প্রশ্নই থাকবে: `আপনি কি চান যে কাতালোনিয়া প্রজাতন্ত্রের আদলে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হোক?` উত্তর দিতে হবে `হ্যাঁ` অথবা `না`।
এদিকে ব্যালট পেপারসহ ভোটের অন্যান্য সরঞ্জামও জব্দ করছে পুলিশ। অনলাইনে গণভোটের প্রচার চলানো হচ্ছে এমন লিংক বন্ধ করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সম্পদশালী কাতালোনিয়ার স্বায়ত্বশাসন আছে; যদিও এর সরকার বলছে, জনগণ স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা চায়। সেখানে প্রায় ৭৫ লাখ মানুষ বসবাস করে; তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি আছে। গণভোট আয়োজনে এ মাসের শুরুর দিকে কাতালান পার্লামেন্ট নতুন একটি আইন পাশ করে, যাতে স্থগিতাদেশ দেয় স্পেনের সাংবিধানিক আদালত।
এরপরও কাতালান সরকার যথাসময়ে গণভোট আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে থাকলে তাদের থামাতে বল প্রয়োগ শুরু করে মাদ্রিদ; শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকড় ও তল্লাশি অভিযান। কাতালান আঞ্চলিক সরকার বলছে, গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে রায় এলে তা বাস্তবায়নে প্রক্রিয়া শুরু করবে তারা।
অন্যদিকে কাতালানরা অন্যান্য অঞ্চলের থেকে বেশি স্বায়ত্বশাসন পেয়ে আসছে দাবি করে মাদ্রিদের সরকার বলছে, স্পেনের সংবিধানে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। অখণ্ডতা রক্ষায় সব করা হবে বলেও বারবার বলে আসছে তারা।
সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।
//এআর
আরও পড়ুন