কাতালোনিয়ার গণভোটে স্বাধীনতাকামীদের জয়
প্রকাশিত : ১১:৩৫, ২ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ১৫:৩১, ৫ অক্টোবর ২০১৭
স্বাধীনতার পক্ষে রায় পেল কাতালোনিয়ানরা। রোববার ব্যাপক বাধার মুখে গণভোটের পরও স্পেন থেকে বেরিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে রায় দিয়েছেন স্বাধীনতাকামী কাতালোনিয়াবাসী। ৯০ শতাংশ জনগণ স্বাধীনতার পক্ষে রায় দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কাতালোনিয়ান নেতা কার্লোস পুজডেমন্ড। তিনি বলেছেন, স্বাধীনতা ঘোষণার দরজা খুলে গেছে।
রোববার ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে অনুষ্ঠিত গণভোটে ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়ে কাতালান কর্মকর্তারা বলেন, ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে স্বাধীনতার পক্ষে। কাতালান সরকারের মুখপাত্র জরদি তুরুল বলেন, কাতালানে রোববার মোট ভোট দিয়েছেন ৫৩ লাখ। এখন পর্যন্ত ২২ লাখ ব্যালট পেপার গণনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ স্বাধীনতার পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছেন।
তুরুল আরও বলেন, পুলিশি বাধা না এলে ভোটদাতার সংখ্যা আরো বেশি হতো। সহিংসতার কারণে কমপক্ষে সাত লাখ ৭০ হাজার ভোটার ভোট দিতে আসেননি।
বিবিসির খবরে জানা যায়, স্পেনের সাংবিধানিক আদালত এই ভোট অবৈধ বলছেন। গতকাল পুলিশ ভোট বন্ধ করার চেষ্টা করলে সহিংসতায় শতাধিক আহত হয়। ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপার এবং ভোটবাক্স জব্দ করে পুলিশ কর্মকর্তারা।
টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পুজডেমন্ড বলেন, এই ভোটের মাধ্যমে কাতালোনিয়ার নাগরিকেরা প্রজাতন্ত্রের আদলে স্বাধীন দেশ গড়ার অধিকার অর্জন করেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কাতালান পার্লামেন্টকে নির্বাচনের ফলাফল পাঠানো হবে।
কাতালানের প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুইদেমন বলেন, বাধার মুখেও কাতালানবাসী স্বাধীনতার অধিকার আদায় করেছে। আমরা সবকিছু জানার, সম্মান ও পরিচিতি পাওয়ার অধিকার আদায় করেছি।
ভোটাধিকার ও স্বাধীনতা লঙ্ঘনের প্রতিবাদে কাতালানের ৪০ টিরও বেশি বাণিজ্যিক সংস্থা আগামী মঙ্গলবার হরতাল ডেকেছে।
এদিকে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহই বলেন, অবৈধ ভোটে অংশ নিয়ে কাতালানরা বোকামি করেছে। তিনি এটিকে গণতন্ত্রের তামাশা বলে অভিহিত করেন। কাতালানে কোনো গণভোট হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
স্থানীয় সময় রোববার স্পেন থেকে কাতালানের স্বাধীনতার দাবিতে গণভোট আয়োজন করে কাতালানের স্থানীয় সরকার। স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে ভোট শুরু হওয়ার আগেই কেন্দ্রগুলো দখল করে নেয় পুলিশ। ভোটকেন্দ্রগুলোতে কাতালানবাসীকে প্রবেশে বাধা দিতে মাঠে নামে দাঙ্গা পুলিশ। তাদের ছোড়া রাবার বুলেট ও লাঠিপেটায় আহত হয় অনেকে।
কাতালান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববারের পুলিশি সহিংসতায় কমপক্ষে ৮০০ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া ৪০০টি ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, দুই হাজার ৩০০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৯২টি বন্ধ করে দেয় পুলিশ। স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ১২ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন, তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৯২টি ভোট কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কাতালান স্পেনের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঙ্গরাজ্য। পাঁচ বছর ধরে স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে আসছিল তারা। এ দাবিতে গতকাল রোববার গণভোটের আয়োজন করে কাতালানের আঞ্চলিক সরকার। তবে স্পেন সরকার এই ভোট বন্ধের অঙ্গীকার করে। দেশটির সর্বোচ্চ আদালতও এই ভোটকে অবৈধ ঘোষণা করে।
এত কিছুর পরও স্বাধীন কাতালানের জন্য ভোট দিতে আসেন কাতালানরা। ভোট শুরুর আগেই শুক্রবার থেকে ভোটকেন্দ্রগুলোর দখল নিয়ে নেন স্বাধীন কাতালোনিয়ার সমর্থকরা। এসব ভোটকেন্দ্র খোলা রাখার জন্যই তাঁদের এ উদ্যোগ। কোথাও কোথাও ভোটকেন্দ্রের সামনে ট্রাক্টর বসিয়ে রাখেন কৃষকরা। যেন পুলিশ সেখানে প্রবেশ করতে না পারে। আবার কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রের দরজা খুলে ফেলা হয়েছে, যাতে করে স্পেন সরকার এসব কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে না পারে।
//এআর
আরও পড়ুন