ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৩ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

কাতালোনিয়া স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতে পারবে তো?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:২৬, ৪ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ১৬:২০, ৪ অক্টোবর ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনকল্পে রোববার গণভোট অনুষ্ঠিত হয় কাতালোনিয়ায়। কেন্দ্রীয় সরকার ও সাংবিধানিক আদালতের বিরোধিতার মধ্যেই এই গনভোটে স্বাধীনতার পক্ষ জয়ী হয়। গণভোট আয়োজনকারী কাতালোনিয়ার নেতাদের ভাষ্যমতে, এবারের গণভোটে ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পড়েছে, যার মধ্যে ৯০ শতাংশই স্বাধীনতার পক্ষে। এই গণভোটে কাতালোনিয়ার নাগরিকরা স্বাধীন রাষ্ট্রের অধিকার অর্জন করেছে বলে দাবি করেছেন কাতালান সভাপতি কার্লেস পুজদেমন। তিনি বলেন, এর মধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণার দরজা খুলে গেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে আবির্ভূত হবে কাতালোনিয়া।

তবে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার কিন্তু খুব একটা আমলে নিচ্ছে না এই গণভোটের ফলাফলকে। সে দেশের সাংবিধানিক আদালত ইতিমধ্যেই এই ভোটকে অবৈধ হিসেবে রায় দিয়েছেন। এমনকি রোববার পুলিশ জোরপূর্বক ভোট বন্ধ করার চেষ্টা করে, যার ফলে সংঘটিত সহিংসতায় শতাধিক মানুষ আহত হয়। এছাড়া ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপার এবং ভোটবাক্স জব্দ করে পুলিশ কর্মকর্তারা।

পরিপেক্ষিতে বৈশ্বিক রাজনীতিতে এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পর‌্যবেক্ষকদের কাছে এখন এ প্রশ্নই জোরালো হয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত কাতালানরা বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতে পারবে তো? তাদের স্বাধীনতা টেকসই হবে তো?

কাতালোনিয়া স্পেনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন স্বায়ত্বশাসিত রাজ্য।  উত্তর-পূর্ব স্পেনের এই রাজ্যে প্রায় ৭৫ লাখ মানুষের বাস, যা স্পেনের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ। এছাড়া স্পেনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ২০ শতাংশেরই যোগানদাতা এই কাতালোনিয়া রাজ্যটি। স্পেন যে আজ পর্যটনশিল্পে এতটা উন্নতি সাধন করেছে, তার জন্য বড় কৃতিত্বের দাবিদার এই কাতালোনিয়ানরাই। কেননা প্রতি বছর স্পেনে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের ৮০ শতাংশেরই গন্তব্যস্থল কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা, যেখানে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বাস। তাই কাতালোনিয়া যদি একটি আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তবে সে রাষ্ট্রের অধিবাসীরা যতটা লাভবান হবে, সামগ্রিকভাবে ঠিক ততটাই ক্ষতির সম্মুখীন হবে বাদবাকি স্পেন।

স্বাধীনতার দাবি কাতালানরা হঠাৎ করেই তুলছে না। সবসময়ই তাদের  বাসনা ছিল স্বাধীন একটি রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের। এবং সে বাসনায় নতুন করে উদ্ভব হয় ২০০৭-০৮ সালের অর্থনৈতিক ধ্বসের পরের কিছু ঘটনা। ২০১০ সালে কাতালানরা স্প্যানিশ সরকারকে কর দিয়েছিল ৬১.৮৭ বিলিয়ন ইউরো। আর তাদের কাছে এসেছিল ৪৫.৩৩ বিলিয়ন। এই বিষয়টি কাতালানদের স্বাধীনতা দাবির পেছনে অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে বলে ধারণা করা হয়।

কেননা কাতালানরা আজও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে , স্পেন সরকারের হাতে বিপুল পরিমাণ টাকা চলে না গেলে তারা অর্থনৈতিক ধস পরবর্তী সময়টা আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারত এবং অর্থনৈতিকভাবে এতদিনে অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারত। এছাড়া স্বাধীনতার প্রশ্নে আরেকটি বড় ঢাল হয়ে এসেছে কাতালানদের অতীত অভিজ্ঞতা। ইতিপূর্বে তারা বারবার স্বায়ত্তশাসনের অঙ্গীকার পেলেও শেষ পর্যন্ত দেখা গিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার থেকে যায় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতেই, এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নেয়া সিদ্ধান্ত অধিকাংশ সময়ই কাতালানদের স্বার্থবিরোধী হয়। তাই এখন আর কাতালানরা স্রেফ স্বায়ত্তশাসনেই সন্তুষ্ট থাকতে আগ্রহী নয়, বরং তারা চায় পূর্ণ স্বাধীনতা।

রবিবার অনুষ্ঠিত গণভোটটি ছিল গত তিন বছরে কাতালানদের স্বাধীনতার দাবিতে দ্বিতীয় গণভোট। এর আগে ২০১৪ সালের নভেম্বরে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল একটি অনানুষ্ঠানিক গণভোট। মাদ্রিদে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার অনেক চেষ্টা করেছিল সেটি রুখে দিতে। কিন্তু গতবার শেষপর্যন্ত তারা সফল হয়নি। ২২ লাখ ভোটারের ভোটে জয়ী হয়েছিল কাতালানদের স্বাধীনতার দাবি। সেদিন ৮০.৭ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছিলেন কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে।

কিন্তু অসাংবিধানিকতার দোহাই দিয়ে সেবার কাতালানদের গণদাবিকে স্তিমিত করে দিয়েছিল স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার। এবারও তারা ঠিক একই পথেই হাঁটার চেষ্টা করছে। কিন্তু অপরদিকে কাতালানরাও এবার অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সংঘবদ্ধ। তাই শেষ পর্যন্ত জনগণের সমর্থনকে  কাজে লাগিয়ে কাতালানরা যদি সত্যি সত্যিই স্বাধীনতা অর্জন করে নেয়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

**বিবিসির বিশেষ প্রতিবেদন অবলম্বনে মাহমুদুল হাসান

/এম/এআর  


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি