ইসরায়েলি ক্ষেপনাস্ত্র প্রথমবার কেড়ে নেয় পা, এবার জীবন
প্রকাশিত : ১৪:০৮, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭
চারদিকে গর্জন! উত্তাল জনতার ঢেউ! হাতে প্লে কার্ড! মুখে স্লোগান! স্বাধীনতা রক্ষার দাবিতে উত্তাল জনতার গর্জন! এরই মধ্যে শুরু হয় হয় ফটাশ ফটাশ শব্দ! বাঁচাও বাঁচাও আর্তনাদ! অতঃপর মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন আবু তোরাঈ!
আবু তোরাঈ ২০০৮ সালে ইসরায়েলি ক্ষেপনাস্ত্রের আঘাতেই দুই পা হারান। পশ্চিম গাজায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর চালানো রকেট হামলায় সেই সময় অনেক ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হন। তবে ভাগ্যগুণে বেঁচে যান আবু তোরাই। এবার ট্রাম্পের জেরুজালেম সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় আর বাঁচতে পারেন নি আবু তোরাই! মাত্র ৫০ ফুট দূরে থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি করে হত্যা করে আবু তোরাইকে।
গত ১৬ ডিসেম্বর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রতিবাদী জনতার সঙ্গে মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন আবু তোরাই। দুই হাতে দুই প্লে কার্ড চেপে, হুইল চেয়ারে বসে গিয়েছিলেন নিজ মাতৃভূমি রক্ষার আন্দোলনে নিজেকে শরীক করতে। জানিয়েছেন নিজের ক্ষোভ। দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের।
একপর্যায়ে ইসরায়েলি বাহিনী মিছিল ও বিক্ষোভ লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে মুহুর্তেই হুইল চেয়ার থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবু তোরাঈ। পরে সহযোদ্ধারা তাকে তুলে নিয়ে যান স্থানীয় হাসপাতালে। তবে ততক্ষণে সব শেষ। আবু তোরাঈ আর নেই। দেশমাতৃকার জন্য আবু তোরাঈ ‘শাহাদাৎ’ বরণ করেছেন। শুধু আবু তোরাঈ-ই নয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
এদিকে আবু তোরাঈকে নিরস্ত্র অবস্থায় হত্যার দায়ে ইসরায়েলের তুমুল সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের হাই কমিশনার জায়েদ রাদ আল হুসেইন। তিনি বলেন, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তবে ইসরায়েলের দাবি, তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়নি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
এসময় তিনি বলেন, আবু তোরাঈ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য হুমকি ছিলেন তা কোনোভাবেই বলা যায় না। গাজায় কাজ করা জাতিসংঘের কর্মীরা জানিয়েছেন তার ওপর বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল। তাই এ ঘটনার জন্য ইসরায়েলের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
গত ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেওয়ারও পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। এই ঘোষণায় ফিলিস্তিনিজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। গাজা উপত্যকার হাজার হাজার মানুষ এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। ফিলিস্তিন ছাড়িয়ে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, তোরাঈ’র মৃত্যুর কারণ তারা জানে না। বিক্ষোভের সহিংসতাই তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে ধারণা তাদের। সেনাবাহিনীর দাবি, বিক্ষোভকারীরা সেনাদের দিকে পাথর নিক্ষেপের পাশাপাশি টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ছুড়ে মারছিল। ওই সহিংসতাকারীদের লক্ষ্য করে সেনারা গুলি চালায়। সম্ভবত ওই গুলির আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তাদের।
তবে জায়েদ বলেন, আবু তোরাঈ’র অক্ষমতা স্পষ্ট ছিল। তাকে গুলির ঘটনা খুবই খুবই অমানবিক কাজ। তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, সেদিন ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে আবু থুরাইয়াসহ চারজন নিহত হন। আহত হন ১৫০ জন।
২০০৮ সালের এপ্রিলে আবু তোরাঈ কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে গাজার আল-বুরেইজ শরণার্থী ক্যাম্পে বসে ছিলেন। এ সময় ইসরায়েলের বিমান হামলায় তিনি দুই পা ও একটি কিডনি হারান। ওই হামলায় আরও সাত ব্যক্তি নিহত হয়েছিলেন। এরপরও দমে যাননি তিনি। বাড়ি থেকে হুইল চেয়ারে করে গাজা শহরে ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে মিছিলে যোগ দিতেন। ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে নিহত হওয়ার সময়ও তার হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা ছিল। ফিলিস্তিনি প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠা আবু তোরাঈ’র প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজার হাজার মানুষ গাজা শহরে উপস্থিত হয়েছিলেন।
সূত্র: রয়টার্স
এমজে/ এআর
আরও পড়ুন