পেরুতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ
প্রকাশিত : ১৩:২৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭
পেরুর রাজধানী লিমায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পেরুর প্রেসিডেন্ট পেড্রো পাবলোর এক নির্বাহী আদেশে মানবতা বিরোধী অপরাধে দন্ডপ্রাপ্ত দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আলবার্টো ফুজিমুরিকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণার পরই ফুঁসে ওঠে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তারা রাস্তায় জড়ো হলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট পেড্রো পাবলো এক গোপন চুক্তির আওতায় সাবেক প্রেসিডেন্ট আলবার্টো ফুজিমুরিকে নিঃশর্ত ক্ষমা ঘোষণার পরই বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। তবে পেড্রো পাবলো গোপন চুক্তির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ফুজিমুরির শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সকালের দিকে লিমায় ঝড়ো হয়ে সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এসময় তারা সাবেক প্রেসিডেন্টের মুক্তির বিরোধিতা করে বিভিন্ন প্লে-কার্ডে ‘নো টু পারডন‘ লিখে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
দ্বিতীয় দিনের মতো ব্যস্ত এলাকাটি ’ব্লক‘ করতে আসলে পুলিশ প্রথমে তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে তারা সরে না গেলে, পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে । এতে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এসময় আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোঁড়ে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশও আহত হয়েছে বলে গণমাধ্যমটি জানায়।
এদিকে এক বিবৃতিতে পেড্রো পাবলো গোপন চুক্তির বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, বড়দিনের প্রাক্কালে ফুজিমুরিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতির জন্যই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ফুজিমুরিকে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২৫ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে গত সপ্তাহে তাকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ফুজিমুরি ‘লো ব্লাড প্রেসার’ এবং অনিয়মিত ‘হার্টবিটে’ভোগছেন। তাই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট পেড্রো পাবলো।
এদিকে মাওবাদী বিদ্রোহীদের দমন করায় ফুজিমুরির প্রশংসা করেন অনেক পেরাবিয়ান নাগরিক। তবে স্বৈরতন্ত্রের জন্য অনেকে তার সমালোচনা করেন।
এদিকে প্রেসেডেন্টের এমন সিদ্ধান্তে নিজ দলের দুজন সংসদ সদস্য কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণায় সন্তোষ জানিয়েছেন ফুজিমুরির সমর্থকরা। তারা রাস্তায় আনন্দ মিছিল বের করেছে। এর আগে প্রেসিডেন্ট পাবলোর অফিস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, দন্ডিতের মানবিক দিক বিবেচনা করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত যেখানে
সাবেক প্রেসিডেন্ট ফুজিমুরির রাজনৈতিক দল কনজারভেটিব পপুলার ফোর্স পার্টি গত নির্বাচনে কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। বর্তমানে দলটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন তার কন্য কিকো ফুজিমুরি।
গত বৃহস্পতিবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট পাবলোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরুর চেষ্টা করেন ফুজিমুরির কন্য কেইকো ফুজিমুরি। এরপরই রবার্ট পাবলো দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্টকে মুক্তি দেন। অনেকেই বলছেন, গত দুয়েকদিনের মধ্যে কেইকো ফুজিমুরির সঙ্গে প্রেসিডেন্টের একটি গোপন চুক্তি হয়েছে। বাবার মুক্তির বিনিময়ে এবার অভিসংশন প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন কেইকো ফুজিমুরি, এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে বামপন্থী দলগুলো বলছে, নিজের মসনদ বাঁচাতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা দিয়ে বামদলের নেতা ভেরোনিকা মেনডোজ বলেন, নিজের চামরা বাঁচাতে তিনি চুক্তি ভঙ্গ করেছেন।
যে কারণে ফুজিমুরিকে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল
২০০৭ সালে ঘুষগ্রহণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ফুজিমুরির সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। তবে ২০০৯ সালে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে তাকে আরও ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, একটি ডেথ স্কোয়াড গঠন করে তিনি গণহত্যা চালিয়েছেন আন্দোলন কারীদের ওপর। শুধু তাই নয়, তার শাসনামলে বিরোধী দলগুলোর উপর পাশবিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এমজে/ এআর
আরও পড়ুন