বেনজির ভুট্টো হত্যাকাণ্ড চাপা পড়ার নেপথ্যে
প্রকাশিত : ১৩:০৩, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭
২০০৭ সালের ২৭ জানুয়ারি বিলাল নামে ১৫ বছর বয়সী এক আত্নঘাতি বোমারুর হামলায় নিহত হন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। রাওয়ালপিন্ডিতে এক নির্বাচনী জনসভা শেষে বেনজির ভুট্টোর উপর ওই হামলা চালানো হয়। পাকিস্তানের তালেবান সে হামলার নির্দেশ দিয়েছিল।
বেনজির ভুট্টো ছিলেন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর প্রথম নারী সরকার প্রধান। পাকিস্তানের পুরুষ শাসিত রাজনীতিতে তিনি নিজেকে একজন সফর নারী নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বেনজির ভুট্টো হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের হাত ছিল বলে সন্দেহ করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফ বলছেন, সে ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্রের কোনো অংশ জড়িত থাকতে পারে।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোশাররফ আরও বলেন, তার কাছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য না থাকলেও তার ধারনা এ বিষয়টিতে তার মূল্যায়ন সঠিক। একজন নারী, পশ্চিমের প্রতি যার ঝোঁক আছে, তাকে রাষ্ট্রের সে অংশটি সন্দেহের চোখে দেখে।
আইনজীবীরা বলছেন, ২০০৭ সালের ২৫ শে সেপ্টেম্বর মোশাররফ ওয়াশিংটনে অবস্থানরত বেনজির ভুট্টোকে টেলিফোন করেছিলেন। ফলে স্বেচ্ছা নির্বাসনে বেনজির ভুট্টো তিন সপ্তাহ পরে পাকিস্তানে ফিরে আসেন। টেলিফোনে পারভেজ মোশাররফের সঙ্গে কথা বলার পর বেনজির ভুট্টো তাঁর সহযোগীদের বলেছিলেন, তিনি আমাকে হুমকি দিয়েছে। তিনি আমাকে পাকিস্তানে যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন।
কিন্তু এ ধরনের বিষয় অস্বীকার করছেন পারভেজ মোশাররফ। তিনি বলেন, বেনজির ভুট্টোকে তিনি কোনো টেলিফোন করেননি।
পারভেজ মোশাররফের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া আদালতে আটকে আছে কারণ তিনি স্বেচ্ছা নির্বাসনে দুবাইতে অবস্থান করছেন।
মোশারফের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া যখন আটকে আছে তখন বাকিদের এ মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। বেনজির ভুট্টো হত্যাকাণ্ডের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পাঁচজন সন্দেহভাজন স্বীকারোক্তিতে বলেছিল, তারা আত্নঘাতি হামলাকারী বিলালকে সহায়তা করেছে। আটক ব্যাক্তিদের মধ্যে আরো দুজন স্বীকার করেছিল যে তারা ঘটনার মধ্যম সারির আয়োজক।
তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছিল যে হত্যাকাণ্ডের আগের রাতে তারা হামলাকারীকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছে। যদিও এসব স্বীকারোক্তি তারা পরবর্তীতে প্রত্যাহার করে নেয়।
অভিযুক্তদের ফোনালাপ এবং ঘটনার আগে তাদের অবস্থান যাচাই করে দেখা যায় যে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা আছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদালতে এসব কিছু প্রমাণিত হয়নি। বিচারক বলেছেন, যে প্রক্রিয়ায় তথ্য-প্রমাণ জোগার এবং উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে অভিযুক্তদের তিনি খালাস দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
বেনজির ভুট্টো হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত যে দু`জন ব্যক্তির সাজা হয়েছে তারা হচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা। দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাদের সাজা দিয়েছে আদালত। পুলিশ তাদের প্রতি নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
বেনজির ভুট্টো প্রথমবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এবং দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর থেকে দুর্নীতি এবং অপশাসনের বিস্তর অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। ১৯৯৯ সালে তিনি পাকিস্তান ছেড়ে যান এবং ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে আবার ফিরে আসেন। তিনি যখন দেশ ফিরে আসেন তখন তাকে সংবর্ধনার জন্য করাচীতে যে র্যালির আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা হামলা চালায়। তাকে যখন হত্যা করা হয় তখন তিনি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌঁড়ে নেমেছিলেন।
এ ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, পাকিস্তানে রাষ্ট্রের ভেতরে আরেকটি রাষ্ট্র বিদ্যমান। সাবেক এবং বর্তমান সামরিক কর্তাদের সমন্বয়ে এ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে যেটি বাইরে থেকে দৃশ্যমান নয়।
সূত্র: বিবিসি
একে//
আরও পড়ুন