আসামজুড়ে রেড অ্যালার্ট, পরিনতি কী
প্রকাশিত : ১০:০৩, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৩:১৬, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের আসামে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আসাম থেকে বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে কোণঠাসা করতে এবার মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মতো আসাম থেকে মুসলিমদের তাড়ানোর কৌশল আঁটছে মোদি প্রশাসন।
আসামের সংখ্যালঘু মুসলমানদের বড় একটি অংশকে `অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি’ উল্লেখ করে ইতোমধ্যে একটি তালিকা করেছে বিজেপি সরকার। আজ রোববার এ তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। এদিকে বিতর্কিত তালিকা প্রকাশের পূর্বমূহুর্তে পুরো আসামজুড়ে ধরপাকড় শুরু হয়েছে।
ইতোমধ্যে আসামের রাস্তায় রাস্তায় হাজার হাজার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। রাজ্যের একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে বিবিসিকে জানিয়েছেন, সম্ভাব্য সহিংসতা দমনে রাজ্যজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি গত বছর রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরই আসামের মুসলমানদের তাড়ানোর ঘোষণা দেন। এসময় রাজ্যের বিজেপি নেতারা জোর ভাষায় মুসলমানদের তাড়ানোর পক্ষে বক্তব্য দেন । তারা বলেন, ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা অবৈধ মুসলিম বাসিন্দাদের` বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় আসাম সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়।
এদিকে আসামের মুসলিম নেতারা বলছেন, নাগরিকদের এই বিতর্কিত তালিকাটি প্রকাশ করার একমাত্র লক্ষ্য হলো রোহিঙ্গাদের মতো ওই রাজ্যের মুসলিমদের রাষ্ট্রবিহীন করা। ১৯৫১ সালের পর আসামে প্রথম বারের মতো পরিচালিত এক জনগণনার ভিত্তিতে এই `ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স` তৈরি করা হয়েছে।
আসাম রাজ্যের মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মুসলিম। রোববার যে তালিকা প্রকাশ করা হবে, তা থেকে মুসলিমদের উল্লেখযোগ্য অংশকে বাদ দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ কারণে সেখানে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে বলে আশংকা আছে।
তবে আসামের অর্থমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এই তালিকা তৈরির উদ্দেশ্য `অবৈধ বাংলাদেশিদের` চিহ্ণিত করা। শর্মা এই তালিকা তৈরির দায়িত্বে আছেন। তিনি বলেন, `যাদের নাম এই তালিকায় থাকবে না, তাদের বহিস্কার করা হবে। আমরা এক্ষেত্রে কোন ফাঁক রাখতে চাই না এবং এজন্যে সব ধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।" তবে হিমান্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, বাংলাদেশি হিন্দুদেরকে তারা আশ্রয় দেবেন, কারণ বাংলাদেশে তারা নিপীড়নের শিকার হন।
বিজেপি নেতারা দাবি করেন যে ভারতের আসাম রাজ্যে প্রায় বিশ লাখ মুসলিম রয়েছেন যাদের পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশের। ১৯৭১ সালের ২৪শে মার্চের আগে থেকেই যে তারা আসামে থাকতেন, সেরকম দলিল-প্রমাণ হাজির করলেই কেবল তাদের ভারতের নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে।
আসামের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি এলাকার বাসিন্দা আসিফুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা-দাদারা সবাই ভারতে জন্ম নিয়েছেন। কিন্তু আমরা যে ভারতের নাগরিক, সেটি প্রমাণের দলিলপত্র আমরা যোগাড় করতে পারছি না। কারণ আমার পূর্বপুরুষরা ছিলেন নিরক্ষর। তারা কোন দলিলপত্র রাখেননি।
নরেন্দ্র মোদি যখন ২০১৪ সালে ভারতের ক্ষমতায় আসেন, তখন এই নির্বাচনের সময় আসাম রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হয়েছিল। মারা গিয়েছিল ৪০ জনের বেশি। নির্বাচনী প্রচারণার সময় নরেন্দ্র মোদি হুমকি দিয়েছিলেন যে, তিনি জিতলে `অবৈধ অভিবাসীদের` ব্যাগ গোছাতে হবে, তিনি তাদের ফেরত পাঠাবেন।
কিন্তু ক্ষমতায় এসে নরেন্দ্র মোদির সরকার বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রীষ্টানদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ করেছেন। আইনে এমন সংশোধনী আনার প্রস্তাবও করা হয়েছে যে ২০১৬ সালের আগে যে হিন্দুরা, কিংবা মুসলিম ব্যতীত অন্য সংখ্যালঘুরা ভারতে এসেছেন, তাদের অবৈধ অভিবাসী বলে গণ্য করা হবে না।
আসামের একজন মুসলিম নেতা গত মাসে হুঁশিয়ারি দেন যে, ধর্মের ভিত্তিতে যদি নাগরিকদের তালিকা করা হয়, সেটি দেশের জন্য `ভয়ংকর` হবে এবং অস্থিরতা তৈরি করবে।
সুত্র: বিবিসি
এমজে / এআর
আরও পড়ুন