ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

বাবরি মসজিদে হামলার নেতৃত্বকারী দুই বন্ধুই এখন মুসলমান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩৭, ২ জানুয়ারি ২০১৮

দুই যুগ আগে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের গম্বুজ ভেঙ্গে আলোচনায় আসা দুই বন্ধুই এখন পুরোদস্তুর মুসলমান। শিবসেনার সক্রিয় কর্মী বলবীল সিং ও তার বন্ধু যোগেন্দ্র শান্তির ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তবে সম্প্রতি বলবীর সিং (বর্তমান নাম মোহাম্মদ আমির) আনন্দবাজারের কাছে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পরই আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে বাবরি মসজিদ ধ্বংসকাণ্ডের বিষয়টি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাবরি মসজিদের গম্বুজে উঠে শাবলের ঘা মারা শিবসেনার সক্রিয় কর্মী বলবীর সিং এখন ভোরে মসজিদে আযান দেন। লম্বা দাড়ি রেখে তিনি এখন পুরোদস্তুর ইমানদার। বাবরি মসজিদে হামলার প্রায়শ্চিত্ত করতে ভেঙে পড়া শ’ খানেক মসজিদ সংস্কার করতে চান তিনি।

এক সময় শিবসেনার সক্রিয় কর্মী বলবীর সিংহ বাবরির মাথায় শাবল চালিয়ে সব খুইয়েছিলেন। বাবা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। স্ত্রীও শোনেননি তার কথা,তার হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেননি। বাবার মৃত্যুর পর বাড়ি ফিরে শুনেছিলেন- বাবা নাকি বলে গিয়েছিলেন তার দ্বিতীয় সন্তানের (বলবীর) মুখ যেন বাড়ির কেউ আর না দেখেন। এমনকি বলবীরকে যেন তার বাবার মুখাগ্নিও করতে না দেয়া হয়।

বলবীরের বন্ধু যোগেন্দ্র পালেরও একই দশা। ২৫ বছর আগে যিনি বলবীরের সঙ্গেই উঠেছিলেন বাবরির মাথায়। শাবলের ঘায়ে ভেঙেছিলেন মসজিদ। বহু দিন আগে তিনিও হয়ে গেছেন পুরোদস্তুর মুসলিম। বলবীর জানান, তার পরিবার কোনো দিনই উগ্র হিন্দু ছিলেন না। ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর ইংরেজি, এই তিনটি বিষয়ে এমএ ডিগ্রি পাওয়া বলবীর তার মা, বাবা, ভাই, বোনদের নিয়ে ছোটবেলায় থাকতেন পানিপথের কাছে খুব ছোট্ট একটা গ্রামে।

তবে পরিবারের সঙ্গে বলবীরের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল না। একবার পানিপথেই একেবারে অচেনা, অজানা শিবসেনার কর্মীর সঙ্গে বলবীরের পরিচয় হয়। সেখান  থেকেই তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই থেকেই শিবসেনার সঙ্গে আমার ওঠবোস শুরু হয়। শিবসেনা করতে করতেই বিয়ে করি। এমএ করি রোহতকের মহর্ষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

বলবীর জানিয়েছেন, বাবরি ভেঙে পানিপথে ফিরে যাওয়ার পর সেখানে তাকে ও যোগেন্দ্রকে তুমুল সংবর্ধনা জানানো হয়। তারা যে দুটি ইট এনেছিলেন বাবরির মাথায় শাবল চালিয়ে, সেগুলি পানিপথে শিবসেনার স্থানীয় অফিসে সাজিয়ে রাখা হয়। কিন্তু বাড়িতে ঢুকতেই তেড়ে আসেন বলবীরের বাবা দৌলতরাম। বলবীরের কথায়, বাবা আমাকে বললেন, হয় তুমি এই বাড়িতে থাকবে, না হলে আমি। তো আমিই বেরিয়ে গেলাম বাড়ি থেকে। আমার স্ত্রীও বেরিয়ে এল না। থেকে গেল বাড়িতেই। তারা আমার পাপাচারকে সহ্য করতে পারেনি।

একদিকে বন্ধু যোগেন্দ্রর মুসলিম হয়ে যাওয়া, অন্যদিকে পরিবারের ঘা দুয়ে মিলে নাভিশ্বাস উঠছিল বলবীরের। এরপরই শান্তির পরশ পেতে ছুটতে থাকেন দিগ্বিদিক। একসময় পেয়ে যান শান্তির ধর্ম। আর সেই শান্তির ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেন মাওলানা কালিম সিদ্দিকির কাছে গিয়ে। এরপর ইসলাম ধর্মের উপর শিক্ষা লাভ করতে থাকেন। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন মুহাম্মদ আমির।

পাপমোচনে মুহাম্মদ আমিরের একটাই চাওয়া, অযোধ্যায় ভেঙ্গে পড়া শতাধিক মসজিদ সংস্কার করা। আর এ সংস্কারের মাধ্যমেই নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চান মুহাম্মদ আমীর। জানা যায়, ১৯৯৩ থেকে ২০১৭, এই ২৪ বছরে উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে মেওয়াটে বেশ কিছু ভেঙে পড়া মসজিদ খুঁজে বের করে সেগুলির মেরামত করেছেন তিনি।

সূত্রঃ আনন্দ-বাজার

এমজে/ এআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি