ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

শূন্য থেকে শীর্ষ ধনী হলেন যেভাবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৩৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

এশিয়া মহাদেশের শীর্ষ ধনী পরিবার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ভারতের মুকেশ আম্বানি পরিবার। কিন্তু শূন্য থেকে কিভাবে এই পরিবার এশিয়ার শীর্ষ ধনী পরিবারে পরিণত হলো তা অনেকেরই কৌতুহলে পরিণত হয়েছে।

এ পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন যিনি দেখেছেন, তিনি হচ্ছেন ধিরাজলাল হীরাচাঁদ আম্বানি, যিনি সবার কাছে ধিরুভাই আম্বানি নামে পরিচিত। তিনি ১৯৩২ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতের গুজরাটের জুনাগড় জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা হীরাচাঁদ ছিলেন সামান্য স্কুল শিক্ষক। ধিরুভাই ছোট বেলাতেই বুঝতেন বাবার সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব নয়।

তাই, পরিবারের আর্থিক সংকটে মাধ্যমিক পাশের পর পড়াশোনার ইতি টানতে হয় ধিরুভাইকে। এরপরই পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে নেমে পড়লেন কর্ম সন্ধানে। তখন তার বড় ভাই রামনিকলাল আম্বানি কাজ করতেন ইয়েমেনের বন্দর নগরী এডেনে । ভাইয়ের পরামর্শে ধিরুভাই চলে গেলেন এডেন। সেখানে তিনি এক তেল কোম্পনিতে মাসিক মাত্র ৩০০ রুপির বিনিময়ে কাজ শুরু করেন তিনি।

কর্মক্ষেত্র ছিল একটি পেট্রল স্টেশন, কাজ ছিল গ্যাস ভরা ও অর্থ আদায় করা। এরই মধ্যে তার বেতন ১ হাজার ১০০ রুপিতে দাঁড়ায়। ওই কোম্পানিতে চাকরি করা অবস্থায় তিনি তেলের ব্যবসা ভালোভাবে বুঝে নিয়েছিলেন। এরপরই বিয়ে করেন কোকিলাকে। তার চার সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে মুকেশ আম্বানি এবং অনিল আম্বানি-দুই মেয়ে নিনা কথারি এবং দিপ্তি সালগাকোর। ১৯৬২ সালে ধিরুভাই ভারতে চলে আসেন। প্রতিষ্ঠা করেন রিলায়েন্স কোম্পানি। প্রথম দিকে ইয়েমেন থেকে মসলা আমদানি করতো কোম্পানিটি। পরবর্তীতে সুতার ব্যবসা শুরু করেন তিনি।

ধিরুভাই আম্বানির বড় ছেলে মুকেশ আম্বানি পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিলেন। তিনি ভারতের মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ লাভ করেন। ১৯৮০ সালে পড়াশোনা শেষ করার পর বাবা তাকে দেশে ফিরতে বলেন এবং একটি পলেস্টার কারখানার দায়িত্ব দেন। তারপর থেকেই কোম্পানিকে বড় করার কাজে মন দেয় মুকেশ আম্বানি। এক পর্যায়ে তিনি গড়ে তোলেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে। পরবর্তীতে তিনি রিলায়েন্স পেট্রোকেমিক্যাল, পেট্রোলিয়াম পরিশুদ্ধকরণ, টেলিকমিউনিকেশন, বিনোদন, সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা এবং তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ইত্যাদি ব্যবসায় নিজেদের সম্প্রসারিত করেন।

তার প্রতিষ্ঠিত রিলায়েন্স গ্রুপ ভারতের সবচেয়ে মূল্যবান এবং প্রতিষ্ঠিত গ্রুপ। রিলায়েন্স মূলত শোধন, পেট্রোকেমিক্যাল, এবং তেল ও গ্যাস নিয়ে কাজ করছে। রিলায়েন্সের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স রিটেল লিমিটেড, ভারতের বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে তিনি ফোর্বস সাময়িকীর করা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তির তালিকায় ৩৮তম স্থান অধিকার করেন, এবং এই তালিকায় তিনিই একমাত্র ভারতীয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত আম্বানি টানা দশ বছর এই সাময়িকীর তালিকায় ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির স্থান ধরে রেখেছেন। রিলায়েন্সের গ্রুপের মাধ্যমে তিনি কিনে নেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে।

এরই ধারবাহিক সাফল্যের মাধ্যমে ২০১৭ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনে ধনী পরিবারের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে মুকেশ আম্বানির পরিবার। তবে তাদের সম্পদ আম্বানি পরিবারের সব সদস্যের হিসাবের ভিত্তিতে করা হয়েছে। এক বছরে ১৯ বিলিয়ন ডলার থেকে তাদের সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে ২০১২ সালে ফোর্বস ক্রীড়াদলের বিশ্বের সবচেয়ে মালিক হিসেবে তাঁর নাম প্রকাশ করে। জানা গেছে, মুকেশ আম্বানি বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল ব্যক্তিগত বাড়ি আন্তিলিয়ায় বাস করেন। এই বাড়িটির মূল্য প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এদিকে কয়েকদিন আগে ছোটভাই অনিল আম্বানির সম্পত্তির বড় একটি অংশ কিনে নেন মুকেশ আম্বানি।

এমএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি