ঢাকা, শুক্রবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৪

সিরিয়ায় ত্রাণের বিনিময়ে নারীদের যৌন নির্যাতন!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৪৬, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার নারীদের ওপর ত্রাণের বিনিময়ে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খাদ্য ও যাতায়াতসহ ত্রাণ সাহায্য দেওয়ার বিনিময়ে এসব অঞ্চলের নারীদের যৌন কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করছে খোদ জাতিসংঘ এবং স্বনামধন্য আন্তর্তজাতিক দাতব্য সংস্থাগুলোর কর্মীরা।

সম্প্রতি সিরিয়ান অঞ্চলে ত্রাণ বিতরণ কর্মী ডেনিয়েল স্পেনসার বার্তা সংস্থা বিবিসিকে সিরিয়ান নারীদের ওপর হওয়া এসব নির্যাতনের ঘটনা জানান।

সিরিয়া থেকে জর্ডানে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া সিরিয়ান নারীদের সাথে কথা বলেন স্পেনসার। সেসব নারীরা স্পেনসারকে তাদের ওপর হওয়া যৌন নির্যাতনের বর্ণনা দেন। দেশটিতে ত্রাণ কাজে নিয়োজিত থাকা স্থানীয়দের হাতে নির্যাতিন হন তারা। বিশেষ করে দারা এবং কুনেইত্রা অঞ্চলের অবস্থা সবথেকে খারাপ।

স্পেন্সার বিবিসিকে বলেন, “তারা (ত্রাণ কর্মীরা) ত্রাণ সাহায্য হাতে নিয়ে থাকত। যেসব নারীদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হতো তাদেরকে পরবর্তীতে যৌন মিলনে বাধ্য করা হত”।

“একজন নারীর কথা আমার মনে পরে যিনি ত্রাণ শিবিরের একটি কক্ষে বসে কাঁদছিলেন। তার সাথে যে অভিজ্ঞতা হয় তা বেশ হৃদয়বিদারক”।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ঐ নারী স্পেন্সারকে বলেন, “যখন নারী ও মেয়েরা খাবার এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ নিতে যেত তখন তাদেরকে বেশ সতর্ক থাকতে হত। এরপর দরকার হত একজন পুরুষের যাকে আপনি সবথেকে বেশি (!) ভরসা করতে পারেন। তার কাছ থেকেই ত্রাণ নিতে হত আপনাকে। এরপর তিনিই আপনাকে যৌনতায় লিপ্ত হতে প্রস্তাব দিতেন। তার প্রস্তাবে সাড়া না দিলে ত্রাণ দেওয়া হত না”।

স্পেনসার আরও বলেন, “যৌন নির্যাতনের মাত্রা এত ভয়াবহ যে, যেসব নারীরা ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ আনতে যেত, ত্রাণ কর্মীরা ধরে নিত যে তারা যৌনতায় সম্মত হয়েই ত্রাণ নিতে এসেছে। এটাই নিয়ম হয়ে গেছিল সেখানটায়। অনেক নারী এ কারণে ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে যেতেনই না”।

২০১৫ সালের জুনে আন্তর্জাতিক রেসকিউ কমিটি (আইআরসি) দারা এবং কুনেইত্রায় ১৯০ জন নারীর ওপর এক জরিপ চালায়। প্রায় ৪০ শতাংশ নারী এসময় জানান যে, ত্রাণ সহায়তা নেওয়ার সময় তারা যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন।

সংস্থাটির একজন মুখপাত্র বলেন, “এই সমীক্ষার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, সিরিয়ায় বিশেষ করে দেশটির দক্ষিণ অঞ্চলের নারীরা ত্রাণ সহায়তা নেওয়ার সময় যৌন নির্যাতনের শিকা হয়েছেন। এসব ত্রাণ সহায়তার মধ্যে মানবিক ত্রাণ সহায়তাও ছিলেন”।

সিরিয়ান নারীদের ওপর হওয়া এমন নির্যাতনের বিষয়ে অবগত আছে জাতিসংঘও। গত বছর লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার ওপর জাতিসংঘ পপুলেশন ফাণ্ডের চালানো এক সমীক্ষায় দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে মানবিক সাহায্যের বিনিময়ে নারীদের যৌন হয়রানি হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে সংস্থাটি।

ঐ সমীক্ষায় প্রকাশিত “ভয়েস ফ্রম সিরিয়া ২০১৮” নামের প্রতিবেদনে বলা হয়, “সিরিয়ান নারী ও কিশোরীদের ত্রাণ সহায়তা পেতে ত্রাণ কর্মীদের সাথে ‘খণ্ডকালীন মেয়াদে’ বিবাহিত হতে হয়। এ বিয়ের মূল উদ্দেশ্যই হল ‘যৌন সেবা’ পাওয়া। এছাড়াও যেসব কর্মকর্তার গাড়ি আছে তারা ‘লিফট দেওয়া’র বিনিময়ে অথবা ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার বিনিময়ে তাদেরকে (নারীদের) রাত্রি যাপনের প্রস্তাব দিতেন তারা”।

তবে এতকিছুর পরেও নারীদের ওপর এ নির্যাতন বন্ধে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি কোন সংস্থাকেই। ত্রাণ কর্মীরা বলছেন, ত্রাণ সহায়তা দেওয়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো স্থানীয় লোকদের মাধ্যমে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করে থাকে। বিশেষ করে বিপদজনক এলাকাগুলোতে তারাই একমাত্র সূত্র। আর তাই সবাই সব কিছু জেনেও এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

এদিকে যৌন নির্যাতনের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা জানায় জাতিসংঘ এবং এর অঙ্গ সংস্থাগুলো। যৌন নির্যাতনের ঘটনায় সংস্থাটির কোন কর্মীর জড়িত থাকার তথ্য তাদের কাছে নেই বলে দাবি তাদের।

সূত্রঃ বিবিসি

//এস এইচ এস// এআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি