ঢাকা, শুক্রবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৪

ত্রিপুরায় বামদের ভরাডুবির নেপথ্যে-

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:০১, ৩ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ২২:১১, ৩ মার্চ ২০১৮

ভারতের ত্রিপুরায় নিজেদের এমন ভরাডুবির কোন কারণই খুঁজে পাচ্ছে না বামপন্থীরা। ২৯টি রাজ্যের মাত্র দুটিতে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল তারা। বিজেপির কোয়ালিশন জোটের মারপ্যাঁচে শুধু গদি হারানো নয়, একেবারে গোহারা হেরেছে বামরা। আর এ হারের পর বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী মানিক লাল সরকারকে রাজ্য ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিজেপির এক নেতা। তবে ভোটের আগাম ফলাফলে বামরা এগিয়ে থাকলেও কেন এমন হলো, তা নিয়ে বামরাজনীতিতে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ।

এদিকে দলের পরাজয়ে কোনভাবেই মানিক লালকে দোষতে পারছেন না দলের নেতাকর্মীরা। মানিক লাল ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সৎ ব্যক্তিত্ব। শুধু তাই নয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিএম নেতা মানিক সরকার পরপর চারবার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন কেবল তার সততা আর মানবপ্রেমের জোরে। বামফ্রন্টের ২৫ বছরের শাসনক্ষমতার ২০ বছরই ত্রিপুরা শাসিত হয়েছে তার নেতৃত্বে। তার সততা নিয়ে বিরোধীদের মনেও কোনও প্রশ্ন নেই। ত্রিপুরায় বিদ্রোহীদের তৎপরতা নিরসন আর শিক্ষার হার বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এসেছে তার হাত ধরে। তবুও কেন ক্ষমতা ছাড়তে হলো বামফ্রন্টকে?

এদিকে বামপন্থীদের পরাজয়ের কারণ হিসেবে দলটির দুর্বলতা নয় বরং বিজেপির অ্যাডভান্স নির্বাচনী প্রচারণাকেই দায়ী করছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রচারণাকালে বিজেপি হিন্দুদের ভোট টানার পাশাপাশি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদেরও মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসে। বিশেষ করে নির্বাচনে জিতলে ট্রাম্প ঘোষিত ইসরায়েলের রাজধানী জেরুজালেমে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিনা খরচে ভ্রমণ করানো হবে, মোদি সরকারের এমন ঘোষণার পর বড় একটি ভোট ব্যাংক বিজেপির দিকে ঝুকে যায়।


স্বচ্ছ ইমেজের রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের পতনের আরও কয়েকটি কারণ দেখছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। বিশেষ করে একই দলকে আর হয়তো ক্ষমতায় দেখতে চান না ত্রিপুরাবাসী। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে ত্রিপুরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ভোটারদের ধারণা বিজেপির ছোঁয়ায় তাদের জীবনমান কিছুটা হলেও বাড়বে।

বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান প্রশ্ন:

ইন্ডিয়া টুডে ত্রিপুরায় বাম সরকারের পতনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানিয়েছে, বেকারত্বের হারে শীর্ষে রয়েছে ত্রিপুরা। শ্রম দফতরের ২০১৫-১৬ সালের জরিপে রাজ্যের বেকারত্বের হার ১৯.৭ শতাংশ। আর এরপরেই ছিল আরেক উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিম (১৮.১)। গত মাসে এক নির্বাচনি জনসভায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ অভিযোগ করেন, গত ২৫ বছর ধরে উন্নয়নের নামে ত্রিপুরাকে লুট করছে মানিকের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার। রাজ্যের বেকারত্বের হার বৃদ্ধিতে বাম সরকারকে দোষারোপ করেন তিনি।

দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ডেকান ক্রনিকল তাদের এক বিশ্লেষণে বলছে, মানিক সরকারের অন্যতম শক্তি ছিল রাজ্যের সংখ্যাগুরু বাঙালি ভাষাভাষির ভোটার। তবে বিজেপি বাঙালিদের সরকারি চাকরির সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি সপ্তম পে-কমিশন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়। মানিকের বাম সরকার কর্মচারিদের জন্য চতুর্থ পে-কমিশনে বেতন দিয়ে আসছে।

নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট-রাজনীতি: ফ্যাক্ট আদিবাসী গোষ্ঠী

ত্রিপুরার এই নির্বাচনে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি আঞ্চলিক দল আদিবাসী পিপলস ফ্রন্ট অব ত্রিপুরার (আইপিটিএফ) সঙ্গে নির্বাচনি জোট বাঁধে। ত্রিপুরার সংগঠনটি আদিবাসীদের জন্য পৃথক রাজ্যের দাবি করে থাকে। মানিকের নেতৃত্বাধীন সিপিএম সরকারের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে ছিল এই জোট। তবে বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধলেও আলাদা নির্বাচন করে দলটি। ত্রিপুরার আদিবাসীদের এ গোষ্ঠীটি-ই মূলত বামদের হারিয়ে দিয়েছে।

জানা যায়, ত্রিপুরায় আদিবাসী জনসংখ্যা ৩১ শতাংশ। আর বিধানসভা নির্বাচনে আদিবাসীদের জন্য ২০টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। ২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এসব আসনের মধ্যে ১৮টিতে জয় পায় সিপিএম। তবে দৃশ্যপটে বিজেপি ঢুকে পড়ার পর চিত্র উল্টে গেছে।

বিজেপি-মতাদর্শের সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরি:

মানিক সরকার ও সিপিএমের জন্য বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলে। এর আগে বিজেপি ত্রিপুরায় তার আসন গাড়তে না পারলেও এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোরালো প্রচারণা চালায় দলটি। বিশেষ করে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সেভেন সিস্টারের প্রতি নজর দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। ২০১৩ সালে রাজ্যটিতে বিজেপির মাত্র কয়েক হাজার সদস্য ছিল। তবে এখন সক্রিয় সদস্য কমপক্ষে দুই লাখ। ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যা ৩৬ লাখ। বিজেপি-আরএসএসের মিছিলে ক্রমাগত বাড়তে থাকা জনসমাগম ত্রিপুরায় তাদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিকেই স্পষ্ট করে। আর বিশাল জনসভা ও মিছিল তাদের শক্তি আরও বাড়িয়েছে।

ধর্মীয় মতাদর্শ:

শুরু থেকেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে আসছে বিজেপি। আর এর অংশ হিসেবে কট্টোর হিন্দুদের মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসে বিজেপি। হিন্দুদের ধারণা, একমাত্র বিজেপি সরকারই তাঁদের ধর্ম রক্ষা করতে পারবে। এদিকে বাম দলীয় সরকার ধর্মের বারোটা বাজাচ্ছে বলে নির্বাচনী প্রচারণায় অভিযোগ তোলে বিজেপি। তাদের এই প্রচারণাও ভোটে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এনডিটিভি, জি নিউজ, টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে লিখেছেন মোহাম্মদ জুয়েল


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি