যেভাবে চালানো হয় অনলাইনে রুশ প্রচারণা যুদ্ধ
প্রকাশিত : ০৮:৩৫, ৬ মার্চ ২০১৮
গত মার্কিন নির্বাচনের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প যাতে জয়ী হন সে জন্য রাশিয়া নানাভাবে আড়াল থেকে তৎপরতা চালিয়েছে বলে যে অভিযোগ- তা নিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রে হৈচৈ চলছে। সরকারি তদন্তও হচ্ছে।
এমনকি ক`দিন পর রাশিয়ায় যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে- তাকে কেন্দ্র করেও ইন্টারনেটে সরকারি মদতে প্রচারণা যুদ্ধ চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। কিন্তু কিভাবে অনলাইনে চালানো হয় এই প্রচারণাযুদ্ধ? তা অনুসন্ধান করেছেন বিবিসির সারাহ রেইনসফোর্ড।
আগামী ১৮ মার্চ রাশিয়ায় নির্বাচন। মনে করা হয়, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কোন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই আরও এক মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। একে সামনে রেখে রাশিয়ায় সরকারি মদতে ইন্টারনেটে যে বিরাট প্রচার যুদ্ধ চলছে, সেটা নাকি চালানো হয় সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারি প্রপাগান্ডা চালানোর জন্য এখানে নাকি শত শত ইন্টারনেট ট্রল পোষা হয়।
সেন্ট পিটার্সবার্গের উপকণ্ঠে একটি সাদামাটা অফিস ভবন। প্রায় ফাঁকা ভবনটির বাইরে `ভাড়া দেওয়া হবে` বলে সাইনবোর্ড টাঙানো। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এক সরকারি তদন্তে দাবি করা হচ্ছে, এখান থেকেই পরিচালিত হতো এক ইন্টারনেট ট্রল ফ্যাক্টরি, যাদের কাজ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে গোল বাধিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা। এই ট্রল ফ্যাক্টরিতে দু`মাস কাজ করেছেন লুডমিলা নামের একজন রুশ নারী। এই গোপন তৎপরতার অনেক কিছু ফাঁস করে দিয়েছেন তিনি। লুডমিলা দেখিয়েছেন ছদ্ম পরিচয়ে তার তৈরি করা একটি ব্লগ। লুডমিলার ব্লগটি মূলত রাশিয়ার নানা বিষয়ে। রুশ জনমতকে প্রভাবিত করাই ছিল লক্ষ্য। কিন্তু লুডমিলা জানালেন, ইংরেজি ভাষায় লেখা ব্লগের উদ্দেশ্যও তাই। প্রতিদিন বিভিন্ন শিফটে যারা কাজ করতো, তারা পালাক্রমে পোস্ট করতো সোশ্যাল মিডিয়ায়।
লুডমিলা বলছেন, এটা ছিল বিশাল এক কার্যক্রম। প্রতিটি সংবাদের নীচে আমি দেখতাম হাজার হাজার পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। আমার চোখের সামনেই এটা ঘটছিল। আমেরিকা বা ইউক্রেন সম্পর্কে যদি তারা কিছু পোস্ট করতো, সেটা সবসময় নেতিবাচক। আর যদি এটা হয় রাশিয়া বা পুটিন সম্পর্কে, সেটা সবসময় ইতিবাচক। ব্লগারদের ওপর লিখিত নির্দেশ ছিল, তাদের কি লিখতে হবে, আর সেখান থেকে মানুষকেই বা কি উপসংহার টানতে হবে।
এই ট্রল ফ্যাক্টরি নাকি এখন সরে গেছে আরেকটি ভবনে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল ভবনটির বাইরে ধুমপানের জন্য দাঁড়িয়ে কয়েকজন। তাদের কেউ কি কাজ করে এখানে?
একজন মহিলা দাবি করলেন, এ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তবে আরেকজন বললেন, তিনি এই ট্রল ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন এমন অনেককে চেনেন, এবং এরা যা করে, তা তিনি মোটেই পছন্দ করেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তে যে ট্রল কোম্পানির নাম এসেছে, তারা যে এখান থেকে কার্যক্রম চালায়, তা বিবিসি নিশ্চিত করতে পেরেছে।
কোম্পানির প্রধান দিমিত্রি গারদিয়েভ টেলিফোনে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু তার কোম্পানি ঠিক কি করে, সেটা বলতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। ইন্টারনেটে ট্রল করাটাই তাদের কাজ কিনা, এ প্রশ্নের উত্তর দেননি দিমিত্রি গারদিয়েভ, এই অভিযোগ অস্বীকারও করেননি তিনি।
রাশিয়ায় তথ্য প্রবাহ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। নির্বাচনের মাধ্যমে ভ্লাদিমির পুতিন যেখানে নিশ্চিতভাবেই আরও ছয় বছর রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকতে যাচ্ছেন, সেখানে এই অবস্থার কোন পরিবর্তন যে শিগগিরই ঘটবে, এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
সাইবেরিয়ার একেবারে মাঝখানে টমস্ক শহর থেকে টিভি-টু নামে একটি টেলিভিশন চ্যানেল চালাতেন ভিক্টর। টিভি-টুর সম্প্রচার স্থানীয় সব ক্ষমতাবান এবং প্রভাবশালীকে লোকজনকে ক্ষিপ্ত করে তুলেছিল। ১৮ বছর আগে ভ্লাদিমির পুতিন যখন প্রথম ক্ষমতায় আসেন, তখন প্রথম সুযোগেই স্বাধীন গণমাধ্যমের রাশ টেনে ধরেছিলেন। মস্কো থেকে বহু দূরে সাইবেরিয়ার মাঝখানে টিভি টু অবশ্য তারপরও টিকে ছিল অনেকদিন। কয়েক বছর আগে এই স্বাধীনচেতা টিভি চ্যানেলটি বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
রাশিয়ার এই প্রচার যুদ্ধ অবশ্য এখন আর টেলিভিশনে সীমিত নেই। তা চলে গেছে ইন্টারনেটে। তার প্রচারণাযুদ্ধের আওতায় এখন সারা দুনিয়া।
সূত্র: বিবিসি।
একে//এসএইচ/
আরও পড়ুন