জুমার দিনেও সহিংসতার আতঙ্কে মুসলিমরা
প্রকাশিত : ১২:২৭, ৯ মার্চ ২০১৮
শ্রীলঙ্কায় জুমার নামাজের দিনেও মুসলিমদের ওপর হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মিয়ানমারের বৌদ্ধদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধরা মুসলিমদের ওপর নতুনকরে চড়াও হতে পারে বলে স্থানীয় মুসলিমরা আশঙ্কা করছেন। এদিকে মুসলিমদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কা সরকার কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায়, মুসলিমরা এ আতঙ্গে রয়েছেন বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জরুরি অবস্থা ও কারফিউয়ের পরও মুসলিমদের বিরুদ্ধে হামলার ঘটনা ঘটছে। ফাতিমা রিজকা নামে স্থানীয় একজন বলেন, ‘আমি খুবই ভয়ে আছি এবং সারারাত ঘুমোতে পারিনি। বাসার পুরুষরা আমাদের সুরক্ষা দিতে বাইরে আছে। আমরা বাসায় একা। আমাদের ওপর হামলার ঘটনা পুলিশ বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে দেখছেন। আমাদের হামলার হাত থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসছেন না।
বৃহস্পতিবার ক্যান্ডির রাজপথে কোনও সাধারণ মানুষ দেখা যায়নি। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছিলেন সর্বত্র। এরপরও নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন না মুসলিমরা। ফাতিমা বলেন, শোনা যাচ্ছে জুম্মার নামাজের সময় হামলা হবে। তিনি বলেন, ‘পুরুষরা বিভিন্ন সময় নামাজ পড়বেন। নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় পালাক্রমে দায়িত্বপালন করার পরিকল্পনা করেছেন তারা।’
এক গুজব থেকে মুসলিমবিরোধী এই দাঙ্গার সূত্রপাত। পর্যটন নগরী ক্যান্ডির মুসলিম মালিকানাধীন দোকানে বৌদ্ধদের খাবারে গর্ভনিরোধক মেশানো হয়েছে; এমন গুজব ছড়িয়ে শুরু হয় অগ্নিসংযোগ। সহিংসতার মধ্যেই এক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নিহতের খবর আগুনে ঘি ছড়ায়। আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে হামলাকারীরা। ভাঙচুর আর অগ্নিসংযোগ চালানো হয় মুসলমানদের বিভিন্ন স্থাপনায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্যান্ডিতে কারফিউ জারি করে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা কারফিউ ভঙ্গ করে মুসলিমদের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছেন। কারফিউর মধ্যেই বেশ কয়েকজন মুসলমান নাগরিকের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে বৌদ্ধরা। পুড়ে যাওয়া বাড়ি থেকে এক মুসলিমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এদিকে ঘটনার সূত্রপাত ক্যান্ডিতে ঘটলেও সারাদেশে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। আরও সংঘাতের আশঙ্কায় মঙ্গলবার দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা।
তবে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। মোহাম্মদ নামে এক স্থানীয় জানান, ‘সরকার বলছেন যে তারা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু সত্য হচ্ছে মুসলিমরা নিরাপদবোধ করছেন না। আমাদের মনে হচ্ছে, উঁচু পর্যায়ের কেউ এই হামলাকারীদের সমর্থন দিচ্ছেন। তারা আমাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় ২ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার ৭৫ শতাংশ বৌদ্ধ, ১০ শতাংশ মুসলিম ও ১৩ শতাংশ হিন্দু। ঐতিহাসিকভাবে বৌদ্ধ ও মুসলিমরা সেখানে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছেন। তবে মিয়ানমারে মুসলিমদের ওপর গণহত্যা শুরুর পরই শ্রীলঙ্কার বেশ কিছু উগ্র বৌদ্ধ দেশটিতে তাণ্ডব শুরুর পায়তারা করছিলেন বলেও অভিযোগ করেন মুসলিমরা। এ ঘটনার পেছনে সরকারের কোন ব্যক্তির সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের যোগসাজশ রয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।
সূত্র: আল-জাজিরা
এমজে/
আরও পড়ুন