ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৭ নভেম্বর ২০২৪

পার্টি অফিসেই ঠাঁই মানিক সরকারের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৩৪, ৯ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৫:৩৫, ৯ মার্চ ২০১৮

ক্ষমতায় ছিলেন টানা ২০ বছর। তাও মুখ্যমন্ত্রীর মত গুরুত্বপূর্ণ পদে। এ পদ নিয়ে অনেকেই হয়েছেন দেশের শীর্ষ ধনীদের একজন। অনেকে স্বজনদেরও বানিয়েছেন টাকার ব্যাংক। তবে ব্যতিক্রম কেবেল ত্রিপুরার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। জানা যায়, তিনি ভারতের সবচেয়ে কম সম্পদশালী মুখ্যমন্ত্রী। নিজের নামে কোন বাড়ি না থাকায়, অবশেষে মাথা গুঁজার ঠাঁই হলো পার্টি অফিসের অতিথি ভবনে।

জানা যায়, মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বাড়ি পেয়েছিলেন বটে, তবে একা নন। ৪৩২ বর্গফুটের সেই টিনশেডের বাড়িটি পেয়েছেন তার বোনের সঙ্গে যৌথভাবে। শহরের বাইরে কৃষ্ণনগরে বাড়িটির অবস্থান । সেদিক থেকে এককভাবে একটি বাড়িরও মালিক নন ২০ বছরের এই মুখ্যমন্ত্রী। তবে ওই বাড়িটিতে নিজ ভগ্নী-ই থাকবেন বলে ঠিক করেছেন মানিক সরকার।

তাই মাথা গুঁজার জন্য স্রষ্টার দেওয়া খোলা আকাশ ছাড়া আর কোন জায়গা ছিল না মানিক সরকারের। অবশেষে পার্টির নেতৃবৃন্দ তাকে দলীয় অফিসে মাথা গুঁজার ঠাঁই দিয়েছেন। নতুন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের শপথ নেওয়ার একদিন আগে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি ছেড়ে আসেন ত্রিপুরার সরকারি বাসভবন। বাড়িটিতে তিনি ২০ বছর ধরে বাস করে আসছিলেন।

টানা ২০ বছর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন মানিক সরকার। একই সঙ্গে রাজ্যের অন্যতম রাজনৈতিক সংগঠন সিপিএমের সভাপতি তিনি। ১৯৯৮ সাল থেকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মানিক সরকারের নিজের কোনও গাড়ি নেই। এখন তার ব্যাংকে যে রুপি গচ্ছিত আছে তা আগের চেয়েও কম। ২০১৩ সালের নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামা থেকে জানা গেছে, তখন তার ব্যাংক হিসাবে ছিল ৯ হাজার ৭২০ রুপি।

সিপিএমের অফিস সেক্রেটারি হরিপদ দাস জানিয়েছেন, দলীয় কার্যালয়ের রান্নাঘরে তৈরি খাবারই খাবেন মানিক সরকার। তিনি বলেন, এর মধ্যে কিছু বই, কাপড় ও প্রয়োজনীয় জিনিস ওই কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন মানিক সরকার। তবে সরকার থেকে বরাদ্দ পেলে নতুন বাড়িতে স্থানান্তরিত হতে পারেন তাঁরা। এর আগে পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মানিক সরকারের স্ত্রী জানান, মার্ক্স রচনাবলিসহ বেশ কিছু বই রাজ্য সরকারের বীরচন্দ্র স্টেট সেন্ট্রাল লাইব্রেরি ও সিপিএমের দলীয় লাইব্রেরিতে দিয়েছেন তাঁরা।

মানিক সরকার ভারতের সবচেয়ে কম সম্পদশালী মুখ্যমন্ত্রী। তার হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ মাত্র ১ হাজার ৫২০ রুপি এবং ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা আছে ২ হাজার ৪১০ রুপি। নির্বাচনের আগে ধনপুর আসনের প্রার্থিতার জন্য দেওয়া হলফনামায় সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের হিসাব তুলে ধরেছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার ৬৯ বছর বয়সী এই পলিটব্যুরো সদস্য।

চাকরি শেষে পাওয়া অর্থের বদৌলতে সম্ভবত ব্যাংক হিসাবে ১২ লাখ টাকা গচ্ছিত রয়েছে মানিকের স্ত্রীর। রয়েছে ৬০ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সরকারি বাড়িতেই থাকেন নিঃসন্তান মানিক সরকার। কোনও দেহরক্ষী নেই তাদের। নেই কোনও গাড়ি। দলীয় রীতি মেনে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া সরকারি ভাতার সবটাই তিনি দলকে দিয়ে দেন।

সিপিআই-এমের নেতা হরিপদ দাস ইন্ডিয়া টাইমসকে বলেছেন, ‘দলের রীতি অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া বেতনের পুরো ২৬ হাজার ৩১৫ রুপিই মানিকদা দলের তহবিলে দিয়ে দেন। আর দলের কাছ থেকে ভাতা বাবদ ৯ হাজার ৭০০ রুপি নেন। আমরা মানিকদার সাধারণ জীবনযাপন অনুসরণ করার চেষ্টা করি। টিফিন হিসেবে তার সবচেয়ে পছন্দের খাবার মুড়ি। মানিকদার স্ত্রী পাঞ্চোলি ভট্টাচার্য কখনও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন না। তিনি রিকশা ও পাবলিক বাসেই যাতায়াত করেন বেশিরভাগ সময়।’

খুব সাধারণ ঘরে জন্ম মানিক সরকারের। তার বাবা ছিলেন দর্জি আর মা সরকারি কর্মচারী। মাত্র ২৯ বছর বয়সে ছাত্রনেতা থেকে সিপিএমের ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সদস্য হয়েছিলেন। ১৯৮০ সালে আগরতলা থেকে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন তিনি। আর ৪৯ বছর বয়সে মানিক সরকার অভিষিক্ত হন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদে। ত্রিপুরায় ২৫ বছরের বাম শাসনামলের ভেতর ২০ বছরই মানিক সরকার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

এদিকে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের জীবনাদর্শ অনেককেই মুগ্ধ করেছে। অনেকের ধারণা বিজেপি যদি ত্রিপুরায় লুটতরাজ আর বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত হয় আবারও সিপিএম ক্ষমতায় আসবে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
এমজে/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি