ঢাকা, শুক্রবার   ১১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

সেরা পদার্থবিদের বিদায়

একনজরে হকিংয়ের বর্ণাঢ্য জীবন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫০, ১৪ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১১:৫৮, ১৪ মার্চ ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

স্টিফেন হকিং। জন্মেছিলেন ১৯৪২ সালের ১৮ জানুয়ারি। গ্যালিলিওর মৃত্যুর ৩০০ বছর পর আরেক নক্ষত্রের জন্ম হয়। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে জগদ্বিখ্যাত এ বিজ্ঞানীর জন্ম। সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে আজ এ নক্ষত্রের মহাপ্রয়াণ ঘটে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে তাঁর মা-বাবার বসতি ছিল উত্তর লন্ডনে। ওই সময় অক্সফোর্ডকে শিশুদের জন্য নিরাপদ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল। তাঁর বয়স যখন আট বছর, তখন তার পরিবারের সদস্যরা লন্ডন থেকে ২০ মাইল উত্তরে সেন্ট আলবানসে পাড়ি দেন। ১০ বছর বয়সে স্টিফেন সেন্টের আলবানস স্কুলে চলে যান। এরপর ১৯৫২ সালের শেষের দিকে তিনি অক্সফোর্ডের ইউনিভার্সিটি কলেজে ভর্তি হন। তাঁর বাবাও এই কলেজে পড়ালেখা করেছেন।

ছোটবেলা থেকেই গণিতশাস্ত্রে পণ্ডিত বনে যাওয়া স্টিফেন হকিং চেয়েছিলেন গণিত বিষয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাবেন। তবে তাঁর বাবার ইচ্ছে ছিল, ছেলে যেন মেডিসিন বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন। তবে ওই কলেজে গণিত বিষয় না থাকায়, গণিতের পরিবর্তে পদার্থবিদ্যাকে বেছে নেন স্টিফেন হকিং। তিন বছরের মধ্যেই হকিং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে দক্ষ হয়ে ওঠায় তাকে প্রথম শ্রেণীর ডিগ্রি দেওয়া হয়।

১৯৬২ সালের অক্টোবরে সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত ও তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যা বিভাগে গবেষণা শুরু করেন। হকিংয়ের পূর্বে আর কোন গবেষক সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে ওই বিভাগে কাজ করেননি। ১৯৬৫ সালে তিনি ‘প্রোপারটিস অব এক্সপান্ডিং ইউনিভার্স’ শিরোনামে সৃষ্টিতত্ত্বের উপর ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ওই বছরই তিনি গনভিলে এন্ড কেইয়াস কলেজে ফেলো গবেষক হিসেবে যোগদান করেন।

এরপর ১৯৬৬ সালে শূণ্য সময়ের জ্যামিতি এবং একাকিত্ববিষয়ক নিবন্ধ লিখে অ্যাডমাস পুরস্কার লাভ করেন। তবে ১৯৬৮ সালে স্টিফেন জ্যোতির্বিদ্যা ইনস্টিটিউটে যোগ দেন। এরপর সেখান থেকে আবারও গবেষণায় ফেরেন গুণী এ বিজ্ঞানী। ১৯৭৩ সালে ওই গবেষণাকালে লিখেন নিজের প্রথম বই, দ্য লার্জ স্কেল স্ট্রাকচার অব স্পেস টাইম। এরপর ১৯৭৪ সালে তিনি রয়েল সোস্যাইটির ফেলো হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ সালে মহাকর্ষীয় তত্ত্ব নিয়ে পড়ালেখা শুরু করেন স্টিফেন হকিং। এরপর ১৯৭৭ সালে তিনি মহাকর্ষীয় পদার্থবিদ্যায় অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।

এরপর ১৯৭৯-২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি গণিতের জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত ও তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যায় অধ্যাপক হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন। মহাবিশ্ব যা নিয়ন্ত্রণ করছে, সে বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। তিনি আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন। তিনি দেখান, মহাবিশ্বের বিস্ফোরণের পরই সময়ের শুরু হয়। কিন্তু আজকে আমরা যে সময় হিসেব করছি, তাকে তিনি কল্পিত সময় আর যেই সময়কে বিবেচনা করা হচ্ছে না তাকে প্রকৃত সময় বলে দাবি করে আসছেন।

১৯৭৪ সালে স্টিফেন হকিং দাবি করেন ব্ল্যাক হোল দেখতে কালো নয়। তবে ব্ল্যাকহোল থেকে ক্রমাগত রশ্মি নির্গত হচ্ছে। এবং সেই রশ্মি বাস্পাকারে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। একই সময় তিনি দাবি করেন, মহাবিশ্বের নিজস্ব কোন সীমা নেই। আর তাই তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের নিয়মানুসারেই মহাজগতের সৃষ্টি। শুধু মহাজগৎ নয় বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে তিনি বই লিখেছেন-

শিক্ষাজীবনে স্টিফেন হকিং ১৩টি সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। ১৯৮২ সালে সিবিই, ১৯৮৯ সালে কোম্পানিয়ন অব অনার ও ২০০৯ সালে প্রেসিডেনশাল মেডেল অব ফ্রিডম লাভ করেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রয়েল সোস্যাইটি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স এন্ড দ্য পটেনশাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের একজন ফেলো হিসেবে কাজ করে যাচ্ছিলেন।

তবে গুণী এ ব্যক্তির জীবন অতোটা মধুর ছিল না। ১৯৬৩ সালে আক্রান্ত হোন মটর নিউরন রোগে। ২১তম জন্মদিন পালনকালে স্টিফেন হকিং জানতে পারেন, তিনি মোটর নিউরন নামক বিরল রোগে আক্রান্ত। এরপরই হুইল চেয়ারের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়েন হকিং। একে এক অবশ হতে থাকে হকিংয়ের অঙ্গগুলো। এরপর কথা বলাও বন্ধ হয়ে যায় তারা। তবে এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও কম্পিউটারের মাধ্যমে নিজের চিন্তাকে পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের কাছে। তার তিন সন্তান ও তিন নাতি-নাতনী রয়েছে। তিনি প্রচুর পরিমাণ পাবলিক লেকচার দিয়েছেন। যার বেশিরভাগই শুনেছেন বিজ্ঞানীরা, গবেষকরা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সূত্র: স্টিফেন হকিংয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
এমজে/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি