যে কারণে সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় হকিং
প্রকাশিত : ১৩:২৯, ১৪ মার্চ ২০১৮
এক ব্ল্যাকহোল তথ্য দিয়েই পদার্থ ও জ্যোতির্বিদ্যায় নিজেকে সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় নিয়ে গেছেন স্টিফেন হকিং। তাঁর ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর তত্ত্বের জন্যই আজকের স্টিফেন হয়ে ওঠেছেন সদ্যপ্রয়াত এই বিজ্ঞানী। এ ছাড়া আইনস্টাইনের দেওয়া বিকিরণ তত্ত্বকে তিনি নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্যের তাত্ত্বিক ব্যাখায় কৃষ্ণগহ্বর আর এমন এক বিকিরণতত্ত্বের ব্যাখা দিলেন স্টিফেন হকিং, যা তাঁকে পদার্থবিজ্ঞানের বর্তমান সময়ের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর মর্যাদার আসন এনে দিয়েছে। দুরারোগ্য মটর নিউরন ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেও থেমে থাকেনি হকিংয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত মহাবিশ্বের অজানা বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করেছেন। দিয়েছেন ভবিষ্যতের জন্য পথ নির্দেশনা। মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য ‘বিগ ব্যাং থিউরি’র প্রবক্তা স্টিফেন হকিং।
২১ বছর বয়স থেকেই দুরারোগ্য মটর নিউরন রোগে ভুগছেন হকিং। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতা তাঁকে বিখ্যাত হওয়া থেকে রুখতে পারেনি। হকিংয়ের বাবা ফ্র্যাঙ্ক হকিং ছিলেন জীববিজ্ঞানের গবেষক। আর মা ইসাবেল হকিং ছিলেন একজন রাজনৈতিক কর্মী। বাবা চেয়েছিলেন হকিং বড় হয়ে চিকিত্সক হোক। কিন্তু ছেলেবেলা থেকেই হকিংয়ের আগ্রহ বিজ্ঞানে আর গণিতে।
১৯৮৮ সালে ‘অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত হয়ে ওঠেন হকিং। বইটিতে তিনি মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য নিয়ে তত্ত্ব দেন। আন্তর্জাতিকভাবে বেস্ট সেলার হিসেবে বইটির এক কোটি কপি বিক্রি হয়। মহাবিশ্ব নিয়ে প্রকাশিত তাঁর সর্বশেষ বই ‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন’। আইনস্টাইনের পর হকিংকে পৃথিবীর ইতিহাসে বিখ্যাত পদার্থবিদ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রিন্স অব অস্ট্রিয়ান্স পুরস্কার, জুলিয়াস এডগার লিলিয়েনফেল্ড পুরস্কার, উলফ পুরস্কার, কোপলি পদক, এডিংটন পদক, হিউ পদক, আলবার্ট আইনস্টাইন পদকসহ এক ডজনেরও বেশি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা এবং বোর-হাইজেনবার্গের কোয়ান্টামতত্ত্বকে মিলিয়ে দেওয়া তত্ত্বের মিশেলে তিনি এক নতুন তত্ত্বের সন্ধ্যান পান। আপেক্ষিকতার তত্ত্ব কাজ করে মহাজগতের অতিকায় বস্তু নিয়ে আর কোয়ান্টাম তত্ত্বের বাহাদুরি হচ্ছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগতে। হকিং কৃষ্ণবিবরের ঘটনা দিগন্তের ঠিক বাইরে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা তত্ত্বের প্রয়োগ করলেন। অনিশ্চয়তা তত্ত্ব আবার কোনো শূন্যস্থানে বিশ্বাস করে না। ফলে, মহাশূন্যের কোনোটাই শূন্য নয়।
সেখানে সব সময় কণা-প্রতিকণার সৃষ্টি হচ্ছে আর পরমুহূর্তে নিজেরা মারামারি করে বিলীন হচ্ছে। হকিং দেখালেন, ঘটনাদিগন্তে কৃষ্ণবিবরের আকর্ষণে এ রকম জোড়া কণার কোনো কোনোটি আটকা পড়ে যেতে পারে। তখন তার সঙ্গী জোড়াটি আর বিমূর্ত থাকে না অর্থাত্ সে মূর্ত হয়ে ওঠে। আর এই মূর্ত হওয়ার ভরটি সে কৃষ্ণবিবর থেকে সংগ্রহ করে নেয়। এর অর্থ দাঁড়ায়, কৃষ্ণবিবর আর কৃষ্ণ থাকছে না। অনবরত সেখান থেকে বের হয়ে আসছে কণা স্রোত। হকিংয়ের নামানুসারে এই কণাস্রোতের নাম দেওয়া হয়েছে হকিং বিকিরণ।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, সিবিসি নিউজ, ডেইলি স্টার (ইউকে)
এমজে/
আরও পড়ুন