ঢাকা, বুধবার   ০৬ নভেম্বর ২০২৪

রাখাইনে নির্মিত হচ্ছে ‘আদর্শ বৌদ্ধ গ্রাম’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৫২, ১৬ মার্চ ২০১৮

সহিংসতা বিধ্বস্ত মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ‘আদর্শ বৌদ্ধ গ্রাম’ নির্মাণ করছেন মিয়ানমান। একটি ‘মডেল’ গ্রাম হিসেবেই গড়ে তোলা হচ্ছে এটিকে।

রাখাইনের বিভিন্ন গ্রামগুলোতে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের আলামত অনেক দিন ধরেই মুছে ফেলার জন্য কাজ করছে মিয়ানমার। বুলডোজার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে গণকবরের মত আলামতগুলোকে। মিয়ানমার সরকার বলছে, বাংলাদেশকে থেকে যেসব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে তাদের বসবাসের জন্যই সংস্কার করা হচ্ছে গ্রামগুলোতে।

তবে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, বুলডোজার দিয়ে নির্যাতন নিপীড়নের চিহ্ন মুছে দিয়ে বৌদ্ধ মডেল গ্রাম নির্মাণ করা হচ্ছে। আর রাখাইনে জমায়েত করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ সামরিক সদস্য এবং সরঞ্জামাদি। এক প্রতিবেদনে সংবাদ সংস্থাটি জানায়, রাখাইনে থাকা বৌদ্ধদের আর্থিক সহযোগিতায় আর দেশটির সেনাবাহিনীর সরাসরি হস্তক্ষেপে নির্মাণ করা হচ্ছে এমন কিছু জায়গা যেখানে মূলত বৌদ্ধরাই থাকবে। অর্থ্যাত যে রোহিঙ্গাদের দোহাই দিয়ে এসব গ্রাম বানানো হচ্ছে সেখানে কোন রোহিঙ্গাই থাকবে না।

ঐ প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায় যে, কোয়ে টান কাউক নামক গ্রামটিতে ঐ আদর্শ বৌদ্ধ গ্রাম তৈরির কাজ বেশ জোরেসোরেই করছে সেনা ও পুলিশ বাহিনী। একসময় অঞ্চলটিতে মুসলিম রোহিঙ্গাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। এখন তা রাখাইন অভিবাসীদের দখলে। গ্রামের প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকতে গেলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতীক আঁকা পতাকা। রোহিঙ্গাদের ফেলে যাওয়া বাড়িঘর জমিজমা সব মাটিতে মিশিয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করছেন বৌদ্ধরা।

গ্রামটির চিত সান ইয়েইন (২৮) নামের একজন বৌদ্ধা রাখাইন এএফপি’র সাংবাদিককে বলেন, “আমার সত্যিই ওই ‘কালারদের’ (রোহিঙ্গাদের এই নামেই সম্বোধন করে স্থানীয়রা) ভয় পাই এবং এখানে আসতে চাই না। কিন্তু এখন, তারা আর এখানে নেই। তাই আমরা সুযোগ পেয়েছি এখানে বসবাসকারী আমাদের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে আবারও মিলিত হওয়ার।’

এএফপি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, নির্যাতন করে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করে তাদের ফেলে যাওয়া ভূমি বৌদ্ধ স্থানীয়রা দখল করে নেয়; এটা রাখাইনের একটি পুরনো প্রধা।মিয়ানমার একে অনধিকার প্রবেশকারী ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের একটি লড়াই হিসেবে দেখে থাকে। দক্ষিণ ও কেন্দ্রীয় রাখাইন থেকে তাড়ানো হয়েছে ৩ লাখ রোহিঙ্গাকে।

মানবাধিকার বিষয়ক ব্রিটেনভিত্তিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে জানায়, নিধনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের ফেলে যাওয়া গ্রাম ও ভূমিতে ঘাঁটি তৈরি করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এখনও ধ্বংস না হওয়া ঘরবাড়ি নতুন করে জ্বালিয়ে দেওয়ারও আলামত মিলেছে স্যাটেলাইট চিত্রে। এক বিবৃতিতে সে সময় সংস্থাটির সংকট মোকাবেলা বিষয়ক পরিচালক তিরানা হাসান অন্তত ৩টি সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ চলমান থাকার কথা জানিয়েছিলেন।

একই সঙ্গে স্থাপনা ও রাস্তাঘাট নির্মাণের কাজ চলার কথাও জানা গিয়েছিল সেসময়। ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে সামরিক সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট সোফরেপও একই অভিযোগ করেছিল।

এরও আগে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অন্তত অর্ধ শতাধিক গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রমাণ হাজির করে মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এইচআরডব্লিউ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং মিয়ানমারের স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংস্থা। তারা বলেছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক বাহিনীর নিধনযজ্ঞ আড়াল করতেই গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালানো হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে, ৬৪টি পরিবার ও প্রায় ২৫০ জনকে নিয়ে বসতির খুব সামান্যই গড়ে উঠেছে। তবে গ্রামটিতে আসার অপেক্ষা তালিকায় আরও প্রায় ২০০ পরিবার। গ্রামটির দক্ষিণে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরের থান্ডউয়ে থেকে যাওয়া দরিদ্রদের মধ্যেও বেশি দরিদ্র এসব মানুষগুলো পেশায় মূলত দিনমজুর অথবা সিতউয়ে থেকে যাওয়া পশুপালনকারী।

রাথিডংয়ের কাছে কোয়ে তান কাউক এবং মঙডুর কাছে ইন ডিন নামের দুটো গ্রাম এখন পর্যন্ত প্রস্তুত করা হয়েছে সিআরআরের প্রকল্পের অধীনে। দ্বিতীয় স্থানটি হচ্ছে সেই স্থান যেখানে গত আগস্টে সহিংসতা শুরুর পর আটক রোহিঙ্গাদের হত্যা করে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করতে বাধ্য হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। কোয়ে তান কাউকেও রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের যৌথ বসতি ছিল।

সূত্র: এএফপি

//এস এইচ এস//টিকে


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি