শুধু মৃত্যুই আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারেঃ সৌদি যুবরাজ সালমান
প্রকাশিত : ১৯:৫০, ১৯ মার্চ ২০১৮
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, সৌদি আরব শাসন করা থেকে শুধু মৃত্যুই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মত আনুষ্ঠানিক ভ্রমণে থাকা প্রিন্স বিন সালমান স্থানীয় একটি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাতকারে এমন মন্তব্য করেন।
গতকাল রবিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস টেলিভিশনে দেওয়া প্রায় ১ ঘন্টার সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, “আমরা কতদিন বাঁচার আশা করতে পারি? ৫০ বছর? যদি সবকিছু ঠিকঠাক যায় তাহলে হয়তো এর থেকে বেশিদিনও বাঁচতে পারি। এর আশা আমরা করতেই পারি”।
এসময় সাক্ষাতকার গ্রহণকারী সিবিএস টেলিভিশনের সাংবাদিক নোরাহ ও’ডোনেল প্রিন্স মোহাম্মদকে প্রশ্ন করেন যে, তাহলে আপনাকে কী থামাতে পারে? উত্তরে তিনি বলেন, “শুধু মৃত্যু”।
সাক্ষাতকারে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ইরান, ইয়েমেন, মানবাধিকারসহ সাম্প্রতিক সময়ে তার নেওয়া দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন তিনি।
সৌদি রাজপরিবারের বেশ কয়েকজন যুবরাজ-মন্ত্রী এবং ধনী ব্যবসায়ীদের আটকের বিষয়টিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ‘আইন বহির্ভুত এবং ‘আইনের শাসনের প্রতি প্রহসন’ বলছে উল্লেখ করে নোরার এক প্রশ্নের জবাবে সৌদি যুবরাজ বলেন, “আমরা সৌদি আরবে যা করেছি তা খুবই জরুরী ছিল। সকল কার্যক্রম দেশের আইন অনুযায়ীই পরিচালিত হয়েছে। এসময় আমরা রাজ কোষাগারে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি জমা করতে সক্ষম হয়েছি যা ঐ দুর্নীতির মাধ্যমে তারা অর্জন করেছিল। তাই আমরা যা করেছি তা স্বাভাবিকই ছিল”।
মানবাধিকার প্রসঙ্গ
সৌদিতে নাগরিকদের মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান ‘সামাজিক সমস্যা’, মানবাধিকারের ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা এবং ইরানের বিপ্লবকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, “অন্য যেকোন দেশের মত আমরাও একটি সাধারণ দেশ হিসেবেই ছিলাম। তবে ১৯৭৯ সালের ইরানের বিপ্লবের পর আমাদের দেশের সামাজিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আমরা অনেক বেশি রক্ষণশীল হতে শুরু করি”।
“আর মানবাধিকারের সংজ্ঞা একেক জায়গায় একেক রকম। আমাদের দেশের সমাজ ব্যবস্থা আর যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ ব্যবস্থা এক না। তবে হ্যাঁ, আমাদের দিকেও অবশ্যই কিছু সমস্যা আছে। আমরা সেগুলো থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছি”।
সৌদি আরবে নারী ও পুরুষ ‘পুরোপুরি’ সম-অধিকার ভোগ করেন বলেও দাবি করেন সৌদি আরবের সমাজ ব্যবস্থায় ‘বৈপ্লবিক পরিবর্তনকারী’ এই যুবরাজ।
ইরান
ইরানের সমালোচনা করতে গিয়ে সৌদি প্রিন্স ইরানকে সৌদি আরবের ‘সমকক্ষ নয়’ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “তাদের (ইরানের) সেনাবাহিনী মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে প্রথম ৫টিতে নেই। আমাদের (সৌদি আরবের) অর্থনীতি ইরানের থেকে অনেক বড়। সৌদির সমকক্ষ হওয়া থেকে ইরান এখনও অনেক দূরে”।
একই সাক্ষাতকারে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খোমেনীকে হিটলারের সাথে তুলনা করেন। তিনি বলেন, “সে মধ্যপ্রাচ্যে নিজের কর্মসূচি চালু করতে চায়, অনেকটা হিটলারের মত। ইউরোপ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ হিটলারের কুফল ততদিন বুঝতে পারেনি যতদিন হিটলারের আসল রুপ প্রকাশ না পেয়েছে। মধ্যপ্রাচে আমি আরেকটা হিটলার দেখতে চাই না”।
তবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির জবাবে পালটা পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ হতে সৌদি আরবের অনাগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। বরং ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করলে সৌদি আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করববে বলেও মন্তব্য এই প্রিন্সের।
ইয়েমেন যুদ্ধ
ইয়েমেন যুদ্ধ বিষয়েও প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয় প্রিন্স সালমান। ৬০ মিনিটের এই সাক্ষাৎকারে ইয়েমেন পরিস্থিতির জন্য সেখানকার হুদি বিদ্রোহিদের দায়ী করেন তিনি।
“যুক্তরাষ্ট্র কী এমন পরিস্থিতি সমর্থন করবে যদি মেক্সিকো থেকে একদল মিলিশিয়া বাহিনী ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্ক বা অন্য এলাকায় বোমাবর্ষণ করে? এমনটা তো আমি ভাবতেও পারি না। ইয়েমেন পরিস্থিতি আমাদের জন্য এমনই ছিল। সেখানকার হুদি বিদ্রোহিরা ত্রাণ সহায়তাবাহী গাড়ি সেখানে প্রবেশ করতে দেয়নি”।
তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ যে, ২০১৫ সাল থেকেই একতরফাভাবে ইয়েমেনের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সৌদি আরব।
সালমান তার এই সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ট্রাম্প সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন। এছাড়াও নিউ ইয়র্ক এবং সিলিকন ভ্যালির ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সাথেও তার বৈঠকের কথা রয়েছে”।
সূত্রঃ আল-জাজিরা
//এস এইচ এস//এসি
আরও পড়ুন