কংগ্রেসকে ছাড়াই জোট চান মমতা-রাও
প্রকাশিত : ১১:২০, ২০ মার্চ ২০১৮
কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিরোধী জোট গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে প্রথমেই পেলেন তেলঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওকে। সোমবার নবান্নে দুই মুখ্যমন্ত্রীর দুঘণ্টা বৈঠক হয়। পরে চন্দ্রশেখর বলেন, বিজেপির ওপর রাগ হলে কংগ্রেস এসে যাবে। তাতে কী লাভ হবে? কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয়েরই প্রশাসন দেশের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই বিকল্প হলো মুক্তমনের নেতাদের নিয়ে ফেডেরাল ফ্রন্ট। আমরা সেটাই চাইছি। একই সুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বক্তব্য, সব দলের একে অপরকে সম্মান করা উচিত। কিন্তু রাহুল গাঁধী আমাদের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। তারা তাদের কথা বলতেই পারেন। আমরা আমাদের কথা বলব। ভবিষ্যতে বোঝা যাবে।
প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিকল্প বিরোধী জোট কীভাবে কতটা কার্যকর হতে পারে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সোনিয়া গাঁধীর সঙ্গে মমতার যতটা ‘ঘনিষ্ঠতা’, বর্তমান কংগ্রেস সভাপতি রাহুলের সঙ্গে যে ততটা নয়, সেটা পরিষ্কার। দিন কয়েক আগে সোনিয়ার ডাকা নৈশভোজে মমতা নিজে না গেলেও সংসদীয় নেতাদের পাঠিয়েছিলেন। সোনিয়া ‘সামনে’ থাকলে কংগ্রেসকে নিয়ে বিরোধী জোট গড়ার সম্ভাবনা বাড়ত কি না, এ দিন চন্দ্রশেখর-মমতা আলোচনায় সেই প্রসঙ্গও ওঠে। উভয়েই মনে করেন, রাহুল কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পরে এখনই সেই পরিস্থিতি নেই। তা ছাড়া, সাধারণভাবে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে জোট গড়ার প্রশ্নে একাধিক রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলির নিজস্ব আপত্তি রয়েছে বলেও দুই মুখ্যমন্ত্রী একমত।
এই অবস্থায় কংগ্রেসকে বাদ রেখে বিভিন্ন রাজ্যের আঞ্চলিক দলগুলিকে একজোট করে ফেডেরাল ফ্রন্ট তৈরি করাই আপাতত মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে প্রাথমিক কৌশল স্থির হয়। এ বার অন্যান্য রাজ্যে বিজেপি বিরোধী বিভিন্ন দল ও মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলা হবে। অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুর সঙ্গে রোববার ফোনে কথা হয়েছে মমতার। অ-কংগ্রেসি বিরোধী দলগুলিকে একসঙ্গে নিয়ে কবে কীভাবে বৈঠক করা যায়, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে।
এ মাসের শেষে মমতা দিল্লি যেতে পারেন। তখন সংসদের অধিবেশন চলবে। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে বিরোধী-বৈঠক না হলেও দিল্লিতে থাকাকালীন তিনি একাধিক বিরোধী নেতার সঙ্গে কথা বলতে পারেন বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ব্যক্তিগত পরিচয়ের সুবাদে দেশের শীর্ষস্থানীয় সব নেতার সঙ্গেই মমতার কথা বলার সুযোগ রয়েছে। অনেকের সঙ্গে তার সাধারণ ভাবেও কথা হয়। তাই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক প্রয়োজনে সেই সব কথাবার্তার পরিসর আর একটু বাড়িয়ে নেওয়া যেতেই পারে।
এ দিন মমতার সঙ্গে বৈঠকের পরে চন্দ্রশেখর বলেন, একটা বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, এটা একটা সূত্রপাত। ভবিষ্যতে আপনারা পুরো বিষয়টা জানতে পারবেন। খুব দ্রুত আমাদের বৃহত্তর মঞ্চ হবে। আমরা যে কর্মসূচি তৈরি করব তা বর্তমানে প্রথামাফিক যা দেখা যায়, তার থেকে আলাদা হবে। এটা হবে সাধারণ মানুষের কর্মসূচি। বিজেপি, কংগ্রেস, কেসিআর কোনও মডেলই হবে না।
মমতার বক্তব্য, আমরা ফেডেরাল ফ্রন্ট চাই। রাজ্যগুলি মজবুত হলে দেশও হবে। একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সবার সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাড়াহুড়ো নেই যে আজই সব করতে হবে। রাজনীতিতে সময় লাগে। পরিস্থিতি কখনও কখনও এমন হয় যে, সবার কাছে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ আসে। তাতে ভালো হয়। সব দলের সঙ্গে আমরা ভালো সম্পর্ক বজায় রাখি। এর থেকে ভাল আর কী হয়!
বিজেপি-বিরোধী দুই মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বৈঠককে অবশ্য ‘গুরুত্বহীন চমক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, কেন্দ্রে স্থিতিশীল সরকার রয়েছে বলে আঞ্চলিক দলগুলি বাজার গরম করতে চাইছে।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার।
এসএইচ/
আরও পড়ুন