ইরাক যুদ্ধের ১৫ বছর
প্রকাশিত : ২৩:৫৮, ২০ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ০৮:১৩, ২১ মার্চ ২০১৮
২০০৩ সালের ২০ মার্চ ইরাক আক্রমণ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার চিরকালের মিত্র যুক্তরাজ্য। ইরাকের সেসময়ের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন গণবিধ্বংসী রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যাপক মজুদ করেছেন এমন অভিযোগে এই যুদ্ধের সূত্রপাত করেন সেসময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ নামক এই প্রহসনে বুশ সবসময় পাশে পেয়েছেন তৎকালীন ইংলিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।
আজ ২০১৮ সালে এসে ইরাক যুদ্ধের ১৫ বছর পূর্ণ হল। যুদ্ধের মূল আক্রমণ চলেছিল ২০০৩ সালের ২০ মার্চ থেকে ১ মে পর্যন্ত। তবে ২০১১ সাল পর্যন্ত চলে এই যুদ্ধ। ২০১১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আনুষ্ঠানিকভাবে এ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তবে ২০১৮ সালে এসেও ইরাক যুদ্ধের রেশ এখনও বয়ে চলেছে।
ব্রিটেন ভিত্তিক বার্তা সংস্থা বিবিসি’র আলোকে আজ জানাবো ইরাক যুদ্ধের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক।
১) ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মিসাইল নিক্ষেপের মধ্যে দিয়ে যুদ্ধের শুরু হয়।
২) ইরাকের সেসময়ের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ব্যাপক পরিমাণে গণবিধ্বংসী রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদন এবং মজুদ করেছেন। যুদ্ধের এই ছিল অজুহাত।
৩) এক সময় পতন ঘটে সাদ্দাম সরকারের।
৪) ২০০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর গুপ্ত স্থান থেকে মার্কিন সেনাদের হাতে ধরা পরেন তিনি। বিচার শুরু হয় ইরাকি আদালতে।
৫) ২০০৬ সালের ৫ নভেম্বর মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় তাকে। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা বলা হয় রায়ে।
৬) পরের মাসেরই ৩০ ডিসেম্বর তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
ইরাক যুদ্ধ নিয়ে যে যা বলেছেনঃ
যুদ্ধের পক্ষে-
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেন, “ইরাকে আক্রমণ করা আমেরিকা এবং তার জোটের জন্য এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব। এর ফলে স্বাধীনভাবে চলাচল ত্বরান্বিত হবে”।
ইরাক যুদ্ধে বুশ মিত্র এবং সেসময়ের যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বলেন, “সাদ্দামকে অস্ত্র ব্যবহার করতে দেওয়া অথবা সংগ্রহ করতে দেওয়া অনেক বড় ধরণের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কাজ হবে।
তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক বলেন, “আমি আবারও বলছি, সবচেয়ে বাজে সমাধানের উপায় হল যুদ্ধ”।
বুশ প্রশাসনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড বলেন, “আমি জানি না যে, ইরাকে সৈন্য প্রেরণ কতদিন স্থায়ী হবে। পাঁচ দিন না পাঁচ সপ্তাহ; নাকি পাঁচ মাস। তবে এর থেকে বেশি সময় লাগার কথা না”।
বুশ প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি বলেন, “আসল কথা হল, সাদ্দাম হোসেন যে গণবিধ্বংসী অস্ত্র মজুদ করছে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই”।
বুশ প্রশাসনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কলিন পাওয়েল বলেন, “এগুলো শুধুমাত্র অভিযোগ না। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে থাকা তথ্য থেকে আমরা এসব সত্য জানতে পারছি”।
যুদ্ধের বিপক্ষে-
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট লেবার দলের নেতা জেরেমি করবিন বলেন, “এটা গণতন্ত্রের জন্য কোন যুদ্ধ না। এটা অন্যায়ের বিরুদ্ধেও না। এটা তেলের জন্য যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধে সবথেকে বেশি লাভবান হবে অস্ত্র নির্মাতারা”।
ইরাক যুদ্ধের সময় জার্মান বৈদেশিক বিষয়ক সেক্রেটারি জোশকা ফিগার বলেন, “আমি মানতে পারছি না। এটা আমার সমস্যা। কিন্তু আমি সবার কাছে গিয়ে বলতে পারছি না যে, চলো সেখানে যাই সেখানে যুদ্ধ হচ্ছে। আরও অনেক কিছু হচ্ছে। আমি এমনটা বিশ্বাস করি না”।
বুশের পরের মেয়াদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, “সব পরিস্থিতিতে আমি যুদ্ধের বিরোধিতা করি না.........কিন্তু নিষ্ফল যুদ্ধের বিরোধিতা করি”।
এসএইচএস/টিকে
আরও পড়ুন