সিরিয়ার মানবিজে মুখোমুখি তুর্কী-মার্কিন সেনা
প্রকাশিত : ১৩:৩৪, ২৪ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৩:৪৬, ২৪ মার্চ ২০১৮
হাতে হাত ধরে সিয়িয়া গৃহযুদ্ধে ৬টি বছর পার করলো যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র তুরস্ক। তবে সিরিয়ার মানবিজ ইস্যুতে এবার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক। ইতোমধ্যে তুর্কী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান ঘোষণা করেছেন, মার্কিন সেনারা নিজেদের মানবিজ থেকে প্রত্যাহার করুক বা করুক, সেখানে হামলা চালাবে তুরস্ক। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, এখনই মানবিজ থেকে সেনা প্রত্যাহার করছে না তারা। এতে দুই দল মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে।
২০১২ সালে সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে বাসার-আল-আসাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান। তবে ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিকদের পরাজয় ঘটলে ক্ষমতায় আসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনিও তুরস্কের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে ফ্রি সিরিয়ান আর্মি, কুর্দী ও ওয়াইজিদিসহ বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে অস্ত্র ও সেনা পাঠিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
তবে সম্প্রতি সিরিয়া ৬টি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। রাশিয়ার সহযোগিতায় সিরিয়ার বড় একটি অংশ পুনর্দখল করে আসাদ বাহিনী। অন্যদিকে দেশটির বেশ কয়েকটি প্রদেশসহ তুরস্কের নিকটবর্তী অঞ্চলগুলো চলে যায় সিরিয়ার প্রধান বিদ্রোহী গোষ্ঠী কুর্দী ও ওয়াইজিদির হাতে। এরপরই নড়েচড়ে বসে তুরস্ক। ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে অস্ত্র ও সেনা সরবরাহ চলমান রাখলেও কুর্দী ও ওয়াইজিদিদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে। তুরস্কের আশঙ্কা, দেশটির কুর্দী প্রধান অঞ্চলে বিদ্রোহ ছড়িয়ে দিতে পারে সিরিয়ার কুর্দী যোদ্ধারা। শুধু তাই নয়, সিরিয়ায় কুর্দী শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে, তা হবে তুরস্ক ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর জন্য বড় হুমকি।
এরপরই কুর্দীদের অস্ত্র ও সেনা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তুরস্ক। তবে তুরস্ক কুর্দী ও ওয়াইজিদিদের কাছ থেকে দূরে সরে গেলেও যুক্তরাষ্ট্র ঠিকই নিজের স্বার্থে কুর্দী ও ওয়াইজিদি যোদ্ধাদের অস্ত্র-গোলাবারুদ ও সেনা সহায়তা দিয়ে আসছে। এরইমধ্যে তুরস্কর সীমান্তঘেঁষা সিরিয়ার আফরিনে কুর্দী যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালিয়ে অঞ্চলটি থেকে কুর্দী যোদ্ধাদের তাড়িয়ে দিয়েছে তুর্কী সেনারা। শুধু তাই নয়, তুর্কী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান গতকাল এক বৈঠকে জানিয়েছেন, আফরিনে সফলতা পাওয়ার পর দেশটি সিরিয়ার ইদলিব ও মানবিজে অভিযান শুরু করবে।
তবে মানবিজে মার্কিন সৈন্যদের সহায়তায় কুর্দী যোদ্ধারা এলাকাটিতে নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। এখন তুরস্ক যদি ওই এলাকায় হামলা চালায় তা পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের উপরই আঘাত হিসেবে গণ্য হবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তুরস্ক তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে বারবার অঞ্চলটি ছাড়তে আহ্বান জানালেও যুক্তরাষ্ট্র সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা শিগগিরই এলাকাটি ছাড়ছে না। তবে তুরস্কের সঙ্গে পারষ্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে একটা সমাধানে আসতে পারবে বলে ধারণা করছে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। এদিকে এরদোগান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র মানবিজ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করুক আর না করুক তাতে তুরস্ক বসে থাকবে না। খুব শিগগিরই মানবিজ ও ইদলিবে হামলা চালাবে তারা।
এদিকে আল-আরাবিয়া নিউজ জানিয়েছে, তুরস্ক প্রথমে ইদলিবে আক্রমণ চালাবে। এই আক্রমণের মাঝেই দেশটি মানবিজ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটা সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে। এরপরই দেশটি মানবিজের ওপর থাবা বসাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: নিউজ টুডে, গালফ নিউজ, আল-আরাবিয়া নিউজ
এমজে/
আরও পড়ুন