ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪

আরাফাত হত্যায় যেভাবে যুক্ত হয় ইসরায়েল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:২২, ২৪ মার্চ ২০১৮

ফিলিস্তিনের জনপ্রিয় নেতা ইয়াসির আরাফাতকে হত্যার জন্য নানা কৌশল নিয়েছিল ইসরায়েল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল সল্ট ফিশ কোডনামের একটি অভিজাত কমান্ডো ইউনিট। সেক্ষেত্রে এক ইহুদি সাংবাদিককে লক্ষ্যবস্তু বানাতে চেয়েছিল ইসরায়েল।

১৯৮২ সালের ইসরায়েল-লেবানন যুদ্ধে এক দিনের বিরতি চলছিল। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হাজার হাজার মানুষ শহরের পূর্ব ও পশ্চিমে আসা-যাওয়ার চেকপয়েন্টগুলোতে হাজির হয়েছিলেন। ওইসব চেকপয়েন্ট, যেগুলো শহরটিকে পূর্ব-পশ্চিমে ভাগ করেছে।

এদের একজন উরি আভনেরি। রূপালী চুলের ভদ্রলোকের ওপর আদেশ হয়েছে বৈরুত জাদুঘরের কাছে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)’র একটি চেকপোস্টে স্বশরীরে হাজির হতে হবে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আভনেরি হবেন প্রথম ইসরায়েলী, যিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পিএলও নেতা ইয়াসের আরাফাতের সঙ্গে দেখা করেছেন।

নিজের দেশ যাকে সবচেয়ে বড় শত্রু বলে মনে করে, তাঁর সঙ্গে যেভাবে দেখা হয়েছিল তা স্মরণ করেন আভনেরি। তিনি বলেন, একটু বিপজ্জনক ছিল্।

একটি সাঁজোয়া মার্সিডিজ গাড়ি তাকে তুলে নেয়। আর এরপর একেবারে আকাবাঁকা পথ বেয়ে দক্ষিণ বৈরুতে একটি পিএলও ভবনে শেষ পর্যন্ত পৌঁছেও যায়।

তিনি বলেন, আমরা কথা বলেছিলাম শান্তি নিয়ে- ইসরাইল এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি। কিন্তু ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে বৈঠকটি আভনেরির বামপন্থী ম্যাগাজিনের জন্যে কেবল একটি হৈচৈ ফেলা খবরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিন দশক পরে এই গল্পের আরও অনেক কিছু এখন বেরিয়ে আসছে- অভিযোগ উঠেছে যে ইসরায়েলী কমান্ডোরা পিএলও নেতার সঙ্গে তাদের দেশি মানুষটির বৈঠকটি অনুসরণ করার চেষ্টা করছিল। এমনকি তাদের প্রস্তুতিও ছিল একে লক্ষ্যবস্তু বানানোর।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বইয়ে ইসরায়েলি সাংবাদিক রনেন বার্গম্যান পিএলও প্রধানকে হত্যার অনেকগুলো কথিত চেষ্টার কথা লিখেছেন। বইটিতে ইসরায়েল কর্তৃক সুনির্দিষ্ট হত্যাকাণ্ড ঘটানোর বিবরণ রয়েছে। বার্গম্যান ঘটনা জানতেন এমন অনেক মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তবে এটা বিতর্কও উস্কে দিয়েছে। কারণ পুরো বিষয়টি ইসরায়েলে মোটামুটি গোপনীয় হিসেবে চিহ্নিত। তিনি বলছেন, তাঁর গবেষণার সময় একজন সেনাপ্রধান তাকে ‘উত্ত্যক্তকারী গুপ্তচরবৃত্তি’র অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।

বার্গম্যান লিখেছেন, ১৯৮২ সালে যখন বৈরুত অবরোধ করা হয়, তখন ‘সল্ট ফিশ’ কোডনামের একটি অভিজাত কমান্ডো ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল- উদ্দেশ্য ইয়াসের আরাফাতকে হত্যা করা।

তিনি দাবী করছেন, পিএলও নেতার সঙ্গে উরি আভনেরির বৈঠকের সুযোগ নিতে চেয়েছিল এই ইউনিট। তারা চেয়েছিল ওই সাংবাদিক ও তাঁর দুই সহকর্মী অজান্তেই তাদেরকে ইয়াসের আরাফাতের সন্ধান দিক।

বার্গম্যান লিখেছেন, সল্ট ফিশ টিমের মধ্যে এমন একটি তর্ক বেধে যায় যে ইসরায়েলী নাগরিকদের বিপদে ফেলা- যার পরিণতি সম্ভবত মৃত্যু- কতটা সঠিক? উত্তর ছিল- তাদের সিদ্ধান্ত মতে- হ্যা সঠিক।

তবে তাঁর দাবি হলো, সল্ট ফিশের সদস্যরা শেষ পর্যন্ত বৈরুতের অলিগলিতে সাংবাদিকদের হারিয়ে ফেলেন।

উরি আভনেরি এখনও ইয়াসের আরাফাতের সঙ্গে তাঁর আলোচনার সবকিছু স্মরণ করতে পারেন। কারণ তিনি প্রতিটি শব্দ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর বয়স এখন ৯৪। তেল আভিভে নিজের অ্যাপার্টমেন্ট তিনি বিবিস’র টম বেটম্যানের সঙ্গে কথা বলেন।

তাঁর ওই অ্যাপার্টমেন্টের দেয়ালে টাঙ্গানো আরাফাত, বিল ক্লিনটন এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইটজহাক রাবিনের অনেক ছবি। ওইসব ব্যক্তি যারা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির পরিকল্পনা করেছিলেন।

কিন্তু অভিযোগ উঠেছে যে ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে ওই বৈঠক এমন কি হয়েছে, যা তার প্রাণ সংহারের কারণও হতে পারতো?

আভনেরি বলেন, আমার অবশ্য এ ব্যাপারে খানিকটা সন্দেহ আছে। তার ব্যাখ্যা, তিনি বৈঠকটি হওয়ার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে ফোন করে এটির আয়োজন করেছিলেন।

আভনেরি বলেন, কিন্তু তারা যদি খুব দক্ষ হতো, তাহলে তারা ফোনে আমাদের কথা শুনতে পারতো, এরপর যেখানে আমি সীমানা পেরিয়েছি, সেখান থেকে তারা আমাদের গাড়ি অনুসরণ করতে পারতো। এটা সম্ভব ছিল।

সল্ট ফিশ ইউনিটের প্রধান ছিলেন লেফটেনান্ট কর্নেল উজি দায়ান, যিনি এক সময় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান হয়েছিলেন। তিনি বিবিসির টম বেটম্যানকে বলেন যে তার টিম ৮ থেকে ১০টি চেষ্টা চালিয়েছিল ইয়াসির আরাফাতকে হত্যা করতে।

তবে কর্নেল দায়ান ‘গুপ্তহত্যা’ শব্দটি এড়িয়ে যান। তিনি বারবার বলেন, তার লক্ষ্য ছিল এটা নিশ্চিত করা যে আরাফাত ‘জীবিত থাকবেন না’।

সূত্র: বিবিসি

একে// এআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি