মিশরে মনিব-মোসাহেব নির্বাচন
জয় সিসিরই
প্রকাশিত : ১৫:০৪, ২৬ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৫:০৬, ২৬ মার্চ ২০১৮
ভয়-আতঙ্ক-ত্রাস সৃষ্টি করে সেনাবাহিনী ও পশ্চিমী শক্তির সহায়তায় মিসরে রাজত্ব করছেন প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। সেনাবাহিনীর সাবেক এই প্রধান এবার স্বৈরশাসনের তকমা ঝেড়ে ফেলে দিচ্ছেন। প্রতিদ্বন্দ্বীহীন নির্বাচনের মাধ্যমে এবার বৈধভাবে আরও পাকাপোক্তভাবে দেশটির ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছেন সিসি।
আজ সোমবার দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরু হয়েছে। নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে লড়ছেন তারই এক সহযোগী। তাই নির্বাচন গিয়ে ঠেকেছে মোসাহেব-মনিরে। যেখানে মনিব-ই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। আর তাই ফাঁকা মাঠে গোল দিতে বসেছে আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি।
হঠাৎ করেই ৬৩ বছর বয়সী সিসির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাত্র দু’মাস আগে দৃশ্যপটে হাজির হন ৬৫ বছর বয়সী মিসরীয় রাজনীতিক মুসা মোস্তফা। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ২৯ জানুয়ারি প্রার্থিতার ঘোষণা করেন তিনি। কয়েক মাস আগে থেকেই সিসি যেখানে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে জনসম্মুখেই দেখা মেলেনি মুসাকে। তিনি যে আদৌ নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, রাজধানী কায়রোর কোথাও তেমন কোনো চিহ্নও নেই।
এর আগে সিসির বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পদে লড়ার ঘোষণা দেওয়ায় বেশ কয়েকজনকে জেলে পুরেছেন সিসি। তাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছেন সেনা-পুলিশের পেটুয়া বাহিনী। বিচার বিভাগকে আঙ্গুলের ইশারায় নাচাচ্ছেন বাদুর নাচের মতো করে। তার শাসনামলে গত ৫ বছরে ১০ হাজারেরও বেশি রাজনীতিককে গ্রেফতার করেছেন। সিসির বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়াতে চাইলেও তাকে কারাগারে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এভাবে নির্বাচনী মাঠ ফাঁকা করে সবাইকে আতঙ্কে রেখে একা গোল দিচ্ছেন সেনাপ্রধান থেকে এক রাতে প্রেসিডেন্ট বনে যাওয়া এ স্বৈরশাসক।
দ্য ইকোনোমিস্ট জানায়, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এবারের নির্বাচনে সিসির জয় নিশ্চিত। জনগণ নয়, সিসির সামনে এখন একটাই চ্যালেঞ্জ। সেনাবাহিনী ও শিল্পপতিরা তার নীতির বিরুদ্ধে ক্ষেপে গেলে সিসির হাত থেকে মুক্ত হবে মিসরের মসনদ। তবে চার বছর মেয়াদের দ্বিতীয় দফার বেশি প্রেসিডেন্ট হওয়ার নিয়ম নেই সংবিধানে। অনেক এমপি এ ধারা পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন। আবার অনেকে বলছেন, দ্বিতীয় মেয়াদের পর আর ক্ষমতায় থাকবেন না সিসি। এ বিষয়ে প্রাইভেট ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, আপনি আম খেতে ভালোবাসলেও, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদিন আম খেতে কিন্তু আপনার ভালো লাগবে না।
মিসরে সোমবারের নির্বাচনে যারাই প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন, ধড়-পাকড়ের মাধ্যমে তাদের সরিয়ে দিয়েছেন সিসি। সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব স্টাফ সামি আনান নির্বাচনে সিসির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ডিসেম্বরে কর্নেল আহমেদ কোনোসোয়াকেও গ্রেফতার করা হয়। সামরিক আইন ভঙ্গ করে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের অভিযোগে সামরিক আদালতে তাকে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিলে বিমানবাহিনীর সাবেক কমান্ডার ইন চিফ আহমেদ শফিককে শাসানো হয়। পরে ভয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান শফিক। মানবাধিকার আইনজীবী খালিদ আলীও নির্বাচনের ঘোষণা দেন। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে তাকে জোর চাপ দেয়া হয়। এতে কোনো কাজ না হওয়ায় তার দফতরে সামরিক অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। খালিদকে ৩ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
সূত্র: দ্য ইকনমিস্ট, আরব নিউজ
এমজে/
আরও পড়ুন