ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

ইন্ডিয়া টুডের জরিপ

ভারতে কর্মস্থলে যৌনতার ভয়াবহ চিত্র

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৫, ২৭ মার্চ ২০১৮

যৌন হয়রানি নিয়ে অনেক দেশেই আলোচনা চলছে। বিশেষ করে হলিউডের প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টিনের বিরুদ্ধে গত অক্টোবর থেকে অনেক প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী মুখ খোলার পর থেকেই সারা বিশ্বে #মিটু (#MeToo)-এর জোয়ার শুরু হয়েছে। এবার ভারতে অফিসে কর্মপরিবেশে যৌনতা নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। এ গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে কর্মস্থলে নারীরা কতটা যৌন হয়রানির শিকার হন। ভারতীয় ম্যাগাজিন ইনডিয়া টুডে ওই দেশের ১৯টি শহরের তথ্য সংগ্রহ করে এ গবেষণা করেন। এ গবেষণায় ২৫টি প্রশ্নের মাধ্যমে দুই হাজার ৫০০ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। এতে সমান সংখ্যক পুরুষ এবং সমান সংখ্যক নারী অংশ নেন। জরিপের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হলো-

ভারতে কর্মস্থলে যৌন হয়রানির চিত্র জানতে চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এই জরিপ চালানো হয়। এই জরিপের মূল বিষয় ছিল ‘কর্মস্থলে যৌনতা’। ‘২০১৮ ইন্ডিয়া টুডে-এমআরডিএ সেক্স সার্ভে অ্যাট দ্য ওয়ার্কপ্লেস’ শীর্ষক এ জরিপে যৌন সম্পর্কের আরও নানা বিষয় নিয়ে তত্ত্ব-তালাশ চলে।

জরিপে অংশ নেওয়া পুরুষদের ৩৩ শতাংশ সহকর্মীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানোর কথা স্বীকার করেছেন। এসব পুরুষের অর্ধেকের বেশি অধস্তন কর্মীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। অন্যদিকে, জরিপে অংশ নেওয়া নারীদের ২২ শতাংশ তদের সহকর্মীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানোর কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা বসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়িয়েছেন।

ইন্ডিয়া টুডের প্রধান সম্পাদক অরুণ পুরি বলেছেন, জরিপের ফলে দেখা গেছে, কর্মস্থলে যৌন সম্পর্কের ঘটনা ঘটছে। তবে এর বিরোধিতাও রয়েছে।

জরিপে দেখা গেছে, সহকর্মীর সঙ্গে যৌনতাকে সমর্থন করেন না ভারতের ৬২ শতাংশ নারী। আর নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এ হার ৫৬ শতাংশ। অন্যদিকে, জরিপে অংশ নেওয়া মানুষের ২৮ শতাংশ নারী-পুরুষ জানিয়েছেন, সহকর্মীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়িয়েছেন তারা।

অর্থাৎ এ জরিপের ফল অনুযায়ী, ভারতে কর্মস্থলে ঊর্ধ্বতন বা অধস্তন সহকর্মীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানোর এই হার বলছে, কিছু মানুষের কারণেই পুরো প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তবে ইন্ডিয়া টুডে ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদক দময়ন্তী দত্ত বলেছেন, কর্মস্থলে যৌন সম্পর্কে জড়ানোর যে হার জরিপে পাওয়া গেছে, তাতে যৌন হয়রানির অভিযোগ আরও বেশি আসা উচিত ছিল। আশ্চর্যের বিষয় হলো, জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন তুলনামূলক কম।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেক বলেছেন, কর্মস্থলে যৌন হয়রানির শিকার হওয়া ব্যক্তিদের চেনেন তারা। এর হার সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে নয়াদিল্লি (৬৯ শতাংশ) ও মুম্বাইয়ে (৬৮ শতাংশ)। অর্থাৎ বড় শহরে যৌন হয়রানির ঘটনাও বেশি। জরিপে অংশ নেওয়া নারী-পুরুষদের ৩৪ শতাংশ বলেছেন, অফিসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন তারা। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ নারী ও ৩৪ শতাংশ পুরুষ।

এই বিশেষ জরিপটিতে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ বিবাহিত। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারীদের ৮০ শতাংশ কমপক্ষে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন এবং বেসরকারি খাতে চাকরি করেন ৮০ শতাংশ। জাতীয়ভাবে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে শহরভিত্তিক উপাত্তের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে।

মানুষের যৌন সম্পর্ক বা যৌনতা নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করে জ্ঞানের যে শাখা, সেটিকে বলা হয় সেক্সোলজি। চেন্নাইভিত্তিক ক্লিনিক্যাল সেক্সোলজিস্ট ডি নারায়ণ রেড্ডি পুরুষের যৌন হয়রানির কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। কর্মস্থলে যৌনতা বিষয়ে ইন্ডিয়া টুডের চালানো জরিপের সূত্র ধরে লেখা নিবন্ধে তিনি বলেছেন, নিপীড়ক পুরুষেরা মূলত দুই ধরনের হয়। এক ধরনের পুরুষ ‘ক্ষমতার অভাবে’ ভোগে এবং অন্যরা ‘ক্ষমতা জাহির’ করতে চায়। প্রথম শ্রেণির পুরুষেরা আত্মবিশ্বাসের সংকটে ভোগে এবং নারীর ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়ে সেই অভাব পূরণ করতে চায়। অন্যদিকে, দ্বিতীয় শ্রেণির পুরুষেরা নিজেদের ক্ষমতা ও পৌরুষ জাহির করার জন্য যৌন হয়রানি করে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী, যৌন হয়রানি হলো লিঙ্গবৈষম্যের একটি বিশেষ রূপ। এটি পুরুষ ও নারীর মধ্যে ক্ষমতার অসম সম্পর্ককে নির্দেশ করে। কর্মস্থলে সব ধরনের যৌন হয়রানি ও সহিংসতা থেকে নারীকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা সিডও সনদে বলা হয়েছে।

কর্মস্থলে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ভারতে ২০১৩ সালে একটি আইন প্রণয়ন করা হয়। ওই আইন অনুযায়ী অবশ্যই যৌন হয়রানির শিকার নারীকে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে হয়। খুব কম নারীই এমন লিখিত অভিযোগ করেন।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি