ভারতের প্রধান বিচারপতির অপসারণের উদ্যোগ
প্রকাশিত : ২৩:৩৭, ২৮ মার্চ ২০১৮
শীর্ষ বিচারপতিদের উপেক্ষা করে নিজের খেয়াল খুশি মতো পছন্দের বিচারপতিদের এজলাসে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মামলা পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগে সর্বোচ্চ আদালতের চার শীর্ষ বিচারপতি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনেন।
তার বিরুদ্ধে যে চার বিচাপতি অভিযোগ আনেন তারা হলেন বিচারপতি জে চেলামেশ্বর, বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি কুরিয়ন জোসেফ ও বিচারপতি মদন বি লকুর।
অভিযোগের ভিত্তিতে অপসারণ প্রস্তাবের পক্ষে সই সংগ্রহ চলছে। ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) মজিদ মেমন জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ২০টি সই সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে কংগ্রেসের তিন নেতা গুলাম নবি, আহমেদ প্যাটেল এবং কপিল সিবাল পিটিশনে সই করেছেন। এ ছাড়া এনসিপির পাঁচজন এই পিটিশনে সই করেছেন।এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই তারা এনসিপি, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, আইইউএমএল ও বাম দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন।
ওই বিচারপতিরা প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলনে গত জানুয়ারি মাসে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগে আনেন যে, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মামলাগুলো প্রধান বিচারপতি তাদের এজলাসে না পাঠিয়ে তার পছন্দের ও কাছের জুনিয়র বিচারপতিদের কাছে পাঠাচ্ছেন। এভাবে চার শীর্ষ বিচারপতিকে তিনি অবহেলা করছেন। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে তারা দুর্নীতির অভিযোগও এনেছিলেন।
এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অমিতাভ রায়ও কিছুদিন আগে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে একই রকমের অভিযোগ এনেছিলেন।
প্রধান বিচার প্রতির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো হলো, চার শীর্ষ বিচারপতিকে উপেক্ষা করে সিবিআই বিচারপতি ব্রিজগোপাল হরকিষেণ লোয়ার মৃত্যু সম্পর্কিত মামলা তিনি পছন্দের বিচারপতির কাছে পাঠিয়েছেন।গুজরাটের সোহরাবুদ্দিন ভুঞা সংঘর্ষ হত্যা মামলা চলছিল বিচারপতি লোয়ার এজলাসে। ওই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন অমিত শাহ, যিনি এখন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি।অমিত শাহর পক্ষে রায় দেওয়ার জন্য বিচারপতি লোয়াকে ১০০ কোটি রুপি ঘুষের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।তা নিতে অস্বীকার করার পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়।
লোয়ার মৃত্যুর পর তার পরিবার এই মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। ফলে এই মৃত্যুর তদন্তে জনস্বার্থে যে মামলা সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা হয় তা শীর্ষ বিচারপতিদের না দিয়ে পছন্দের এক বিচারপতির এজলাসে পাঠান প্রধান বিচারপতি।
ভারতীয় সংবিধান মতে, দেশের প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের দুর্ব্যবহার, দুর্নীতি অথবা অযোগ্যতার কারণে অপসারণ করা যায়। সে জন্য সংসদের উভয় কক্ষের যেকোনো একটিতে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব আনতে হয়। লোকসভায় প্রস্তাবের পক্ষে প্রয়োজন ১০০ সদস্যের সই, রাজ্যসভায় ৫০ সদস্যের। প্রস্তাবটি গৃহীত হলে সভার অধ্যক্ষ তিন সদস্যের এক কমিটি গঠন করবেন। সেই কমিটি অভিযোগ সত্য মনে করলে প্রস্তাবটি সভায় আলোচিত হবে। অপসারণের জন্য সংসদের দুই কক্ষেই প্রস্তাবের পক্ষে বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। প্রস্তাব সেই গরিষ্ঠতা পেলে তা অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য যে, ভারতে আজ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের কোনো বিচারপতিকে ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রস্তাব এনে অপসারণ করা যায়নি। যদিও দুবার এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। প্রথমবার ১৯৯৩ সালে। দ্বিতীয় প্রস্তাবটি ছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র সেনের বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালে প্রস্তাবটি রাজ্যসভায় পাস হয়। লোকসভায় আসার আগে বিচারপতি সেন পদত্যাগ করেন। ২০১১ সালে সিকিম হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পি ডি দিনাকরণের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু প্রস্তাব কার্যকর হওয়ার আগেই তিনি ইস্তফা দেন।
এমএইচ/টিকে
আরও পড়ুন