ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

উত্তরসূরি সংকটে সু চি: নেতৃত্ব যাচ্ছে জান্তার কব্জায়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৫৬, ২৯ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৩:৫৯, ২৯ মার্চ ২০১৮

মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অংসান সু চি দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন। একদিকে নিজ সন্তানদের মিয়ানমারের রাজনীতিতে আনতে পারছেন না, অন্যদিকে নিজ দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি থেকেও নতুন নেতৃত্ব উঠে আসছে না। এতে ৭২ বছর বয়সী সু চি দলের ভার কার ওপর ছেড়ে দিবেন, সে বিষয়ে খোদ এনএলডির মধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এদিকে ১৯৬২ সালের পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করা এনএলডি সামরিক জান্তার কব্জা থেকে এখনো বের হতে পারেনি। ২০১৬ সালের নির্বাচনে সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডি নিরঙ্কুশ জয়লাভ করলেও সরকারের মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখলে রেখেছেন দেশটির জান্তা সরকার। এ ছাড়া সু চিকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বাতিল করতে, নির্বাচনের পূর্বে জান্তা সরকার একটি কালো আইন করে। যেখানে সু চিকে দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে বাধা আরোপ করা হয়। ওই আইনের আওতায় সু চির সন্তানরাও ভবিষ্যতে দেশটির প্রেসিডেন্ট বা গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে পারবেন না বলে জানা গেছে। সু চির দুই সন্তান-ই পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত এবং তাদের ব্রিটেনের নাগরিকত্ব রয়েছে।

এদিকে নিজ সন্তানদের দেশের রাজনীতিতে যুক্ত করতে না পারায় দলটির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া দেশটির সাংসদদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশের-ই বয়স ষাট বছরের ঊর্ধে। সু চির নিজের বয়স ৭২ বছর। ইতোমধ্যে শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় সরাসরি বক্তব্য অনুষ্ঠান বাতিল করেছে সু চি। কয়েকদিন আগে সু চির ঘনিষ্ঠ সহচর ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট থিন কাউও বার্ধক্যের কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

এদিকে নতুন করে দায়িত্ব নেওয়া দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন মিন্টের বয়সও ৬৬ বছর। এ ছাড়া মন্ত্রীসভায় এনএলডি সদস্যদের বয়স ৬৬ বছরের ঊর্ধে। অনেকের ধারণা, আগামী নির্বাচনে-ই এক তৃতীয়াংশ নেতা রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করবে। তবে রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করলেও, তারা কোন নেতৃত্ব তৈরি করতে পারেনি। বর্তমানে যারা এনএলডির নেতৃত্বে আছে, তাদের প্রায় সবাই ৯০ এর দশকের নেতা। সু চির গৃহবন্দির সময় তারা আন্দোলন-সংগ্রাম করে এনএলডিকে টিকিয়ে রাখেন।

এদিকে নেতৃত্ব সংকটের কারণে দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সংগ্রামের ফসল গণতন্ত্র দেশটিতে মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক রাজনৈতিক গবেষক আরন কোনেলি বলেন, দেশটিতে গণতন্ত্রের যে ফসল এসেছে, তাতে নতুন নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। আর তাই যে কোন সময় দেশটিতে আবারও জান্তা সরকার পাকাপোক্ত আসন গেড়ে বসবে।

গত বছরের আগস্ট থেকে দেশটিতে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান চলা অবস্থায় প্রকাশ্যে এ অভিযানকে সমর্থন দিতে হয়েছে এনএলডিকে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এনএলডি সেনাবাহিনীর এ নিধনযজ্ঞে সমর্থন না দিলে, যে কোন সময় দলটিকে ধাক্কা দিয়ে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হতো। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর এ কুকর্মকে সমর্থন জানানোয় আন্তর্জাতিক বাজারেও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে সু চির দল এএলডি।

২০১৬ সালে দেশটির শিক্ষা ও অর্থনীতিতে বিপুল সংস্কার সাধন করা হবে, এমন প্রচারণায় ক্ষমতায় আসে এনএলডি। তবে ক্ষমতার দুই বছর পার হতে চললেও এখন পর্যন্ত দেশটির শিক্ষা বা অর্থনীতিতে তেমন কোন পরিবর্তন সাধিত হয়নি। এর কারণ হিসেবে অনেকেই বলছেন, দলের সব সিদ্ধান্ত একাই নিতে হচ্ছে সু চিকে। অন্যদিকে সামরিক জান্তার বিষয়টি মাথায় রেখে তাকে এগুতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যাসহ আরও নানা অভিযোগে টালমাটাল হয়ে পড়েছে সু চির এনএলডি।

সম্প্রতি দেশটির নেতৃত্ব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নেতৃত্ব সংকটের কারণে সু চি একই নেতাদের বিভিন্ন পদে বসাচ্ছেন। অন্যদিকে ক্ষমতার ঘুটি রেখে দিচ্ছেন নিজের হাতে। তবে এনএলডির মুখপাত্র বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সু চির পছন্দে নয়, বরং দলীয় পছন্দের ভিত্তিতেই সংসদসহ সব জায়গায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।

সূত্র: ওয়াশিংটন জার্নাল
এমজে/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি