ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

সিএনএন’র বিশ্লেষণ

ভারত কি তিব্বতের স্বাধীনতাকামীদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছে?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:১৫, ৩১ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৪:০৬, ২ এপ্রিল ২০১৮

বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। পার্শবর্তী দেশগুলোর স্বাধীনতা অর্জনে দেশটির ভূমিকা প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও তিব্বতের স্বাধীনতা আন্দোলনে দেশটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছে। তবে সম্প্রতি ভারত সরকার তিব্বতের নির্বাসিত নেতা দালাইলামার ভারতে অবস্থানের ষাট বছর পূর্তি অনুষ্ঠান বাতিল করায় দেশটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের এক বছর পূর্তিতে ভারত সরকার এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। আর তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ষাট বছর ধরে তিব্বতের  নির্বাসিত নেতা দালাইলামাকে সমর্থন দিয়ে আসলেও, ভারত কি এবার চীনের সঙ্গে সম্পর্কন্নোয়নে তিব্বত থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিবে?

আজ থেকে (মার্চ ৩১) ভারতে অবস্থিত তিব্বতিয়ানরা দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ‘থ্যান্ক ইউ ইন্ডিয়া’ পালন করছে। তবে তাদের সেই উদযাপনে এবার ভাটা পড়তে যাচ্ছে। ১৯৫০ সালের পর থেকে তিব্বতের নির্বাসিত নেতাকর্মীসহ শত শত তিব্বতি লোক ভারতে স্বাধীনতা ভোগ করছে। তবে ভবিষ্যতে ভারতে তারা আগের মতো মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা পাবেন না বলে ইতোমধ্যে আন্দাজ করতে পেরেছেন ৬ দশক ধরে নির্বাসিত থাকা এ গোষ্ঠীটি।

তিব্বত নিয়ে গবেষণা করেন এমন একজন হলন ক্লড আপরি। ক্লড আপরি জানান,মনে হচ্ছে ভারত তিব্বত ইস্যুতে তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করছে। তা ছাড়া চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে দেশটি তিব্বতের প্রতি নীতির পরিবর্তন এনেছে বলে মনে হচ্ছে। পঞ্চাশের দশকে তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা সপ্তম দালাইলামা গ্রেফতার এড়াতে ভারতে আশ্রয় নেন। ১৯৫৯ সালের ২৯ মার্চ তিনিসহ বেশ কয়েকজন নেতা তিব্বতে আশ্রয় নেন। ভারতে আশ্রয়ের পরই ভারত তাকে দেশটির সর্বোচ্চ সম্মানীত অতিথি হিসেবে বরণ করেন। চীন তার বিরুদ্ধে ধর্মের ভিত্তিতে তিব্বত ভাগ করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে।

আগামী ২৬ থেকে ২৮ এপ্রিল ভারতের নয়াদিল্লীতে তিব্বত সংসদের সাবেক নেতা ও বর্তমানদের মধ্যে এক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে সম্প্রতি সেই বৈঠকটি বাতিল করতে বাধ্য হয় তিব্বতের নেতারা। তিব্বতের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের মুখপাত্র সোনাম দাপো বলেন, ‘ভারত সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরণের সহায়তা না পাওয়ায় তিব্বত পার্লামেন্টের সবচেয়ে বড় এ সম্মেলনটি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে তিব্বতের কেন্দ্রীয় প্রশাসন’।

এদিকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারত যে কোনো ধর্মের মানুষদের জন্য দেশটি উন্মুক্ত রাখবে। তারপরও তিব্বত আশ্বস্ত হতে পারছে না। তাদের শঙ্কা ভারত তার নীতিগত প্রশ্নে হয়তো তিব্বতকে আগের মতো আর সমর্থন দিবে না । এতে ভারতের প্রতি দেশটির অবস্থান আগের তুলনায় বদলাবে বলেও মত দেন তিব্বত সংসদের এক নেতা।

তিব্বতের নির্বাসিত সংসদের তথ্যমতে, প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার তিব্বতি ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রিত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯৪ হাজার-ই বাস করছেন ভারতে। নেপালে বাস করছেন আশ্রিতদের প্রায় ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। অবশিষ্ট আশ্রিতরা বিশ্বের ৩০টি দেশে বাস করছেন।

এদিকে ১৯৭৪ সালের পর থেকে দালাইলামা দাবি করে আসছেন, তিব্বত স্বাধীনতা নয়, বরং পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন চায়। এদিকে ভারতও গত কয়েক দশক ধরে তাদের মাটিতে স্বাধীনতাপন্থীদের কোন রাজনৈতিক কার্যক্রম করতে দিচ্ছে না। ভারত চায় না যে দেশটি তিব্বত ইস্যুতে চীনের সঙ্গে কোন ধরেণের সহিংসতায় জড়াক। গত বছর চীন-ভারতের সীমান্ত এলাকা দোকলামে দুই দলের সেনা সমাবেশ ঘটায়। এতে মাসব্যাপী অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় দুদেশের মধ্যে। পরবর্তীদে দুইদেশের সম্মতিতে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় সেনা প্রত্যাহার করে দুই দেশ। এতে ওই অচলাবস্থার নিরসন ঘটে।

এদিকে গত বছরের মে মাসে ভারত বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত পতাকা সম্মেলন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। চীনের ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়ায় ভারত সেই সম্মেলন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। ভারতের অভিযোগ, চীন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে এ অঞ্চলে দেশটির একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা দিবে। এ ছাড়া গত বছরের এপ্রিলে তিব্বতের বর্তমান নেতা দালাইলামা অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করলে, চীন ও বেইজিংয়ের মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়। চীন অরুণাচলকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে।

তবে সব ধরণের তিক্ততা ভুলে চীন ও ভারত নতুন মেরুকরণের দিকে নজর দিচ্ছে বলে গত মাসে জানান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েং জি। তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে দেশটির সঙ্গে চীনের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে। এদিকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারত সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিজয় গোকলে বিইজিং সফর করেন। এরপরই দু দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। দুদেশই বিতর্কিত ভূমি ও বিতর্কিত ইস্যুগুলো সমাধান করার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বলে ঘোষণা দেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপরই তিব্বতের স্বাধীনতাকামীদের মধ্যে আশঙ্কা জন্মে। ভারত কি তাহলে তিব্বত ইস্যুতে চীনা নীতি-ই মেনে নিচ্ছে? অবশ্য এ বিষয়ে ভারত কিছু বলছে না।

এদিকে আগামী জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনা প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিংয়ের মধ্যে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তাদের ওই বৈঠকেও তিব্বত ইস্যুসহ বিতর্কিত ইস্যুগুলো আলোচনার টেবিলে জায়গা পেতে যাচ্ছে বলে ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। এদিকে নয়া দিল্লীর ইনস্টিটিউট অব চীনা স্টাডিজ বিভাগের অ্যাসোসিয়েট ফেলো ছুনজোম বোশিয়া বলেন, ভারত-চীনের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তিব্বত।

সূত্র: সিএনএন

এমজে/ এআর

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি