ঢাকা, বুধবার   ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

ক্যাবল কার যখন গণপরিবহণের মাধ্যম 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৫৭, ২ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ২৩:৫৮, ২ এপ্রিল ২০১৮

পাহাড়ি অঞ্চলে গণপরিবহন সত্যি একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ বলিভিয়ার রাজধানী লা পাস ক্যাবল কার চালু করে সেই অসাধ্য সাধন করেছে৷ তবে অস্ট্রিয়ার এক কোম্পানিকে সেই প্রকল্প রূপায়নের পথে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছে৷

বলিভিয়ার রাজধানী লা পাস শহরের পরিবহণ কাঠামো ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে৷ শহরতলি ধারে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ সেখানে বসবাস করে৷ এতকাল গণপরিবহণ বলতে শুধু মিনিবাসই ছিল৷ কিন্তু শহরের সরু রাস্তার জন্য সেগুলি মোটেই উপযুক্ত ছিল না৷ কেউই সময় মতো দফতরে পৌঁছাতে পারেন না৷ লাগাতার যানজটের কারণে সবাই বিরক্ত৷

কিন্তু লেওকার্ডিয়া নিঃশব্দে সেই বিশৃঙ্খলার উপর দিয়ে কার্যত উড়ে চলেছেন ৷ তিনি কেবেল কারে বসে রয়েছেন৷ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার উপর প্রায় ৮হাজার মিটার দীর্ঘ তার ঝুলছে৷ কেবেল কার যানজট কিছুটা কমাতে সাহায্য করছে৷ কামরা থেকে নীচে তাকালে কোনো গোলোযোগ টের পাওয়া যায় না ৷

কেবেল কারে চড়ে এল আল্টো থেকে লা পাস শহরের কেন্দ্রস্থল পর্যন্ত যাওয়া যায়৷ মোট ৫টি রুট চালু হয়ে গেছে৷ প্রায় ১৯ কিলোমিটার জুড়ে এই নেটওয়ার্ক এর মধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহুরে কেবল কার নেটওয়ার্ক হয়ে উঠেছে৷ আরও ছ`টি রুট নির্মাণের কাজ চলছে৷

টেলেফেরিকো নামের এই কেবেল কার দু`টি ভিন্ন জগতের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাচ্ছে৷ ধনী ও দরিদ্র এলাকার উপর দিয়ে কামরাগুলি ভেসে বেড়াচ্ছে ৷ সেখানেই পশ্চিমা জীবনযাত্রা ও বলিভিয়ার আদি সংস্কৃতির সাক্ষাৎ ঘটছে ৷

অস্ট্রিয়ার ডপেলমায়ার কোম্পানি কেবেল কার ও স্টেশনগুলি তৈরি করছে ৷ ২০১৪ সালে সূচনার সময় থেকেই প্রকল্পের ম্যানেজার টরস্টেন বয়ারলাইন এই পরিবর্তনের সাক্ষী ৷

তিনি বলেন, ‘‘শহরের মধ্যে ১,০০০ মিটার উচ্চতার তারতম্য রয়েছে ৷ অত্যন্ত সরু, আঁকাবাঁকা গলি, পথঘাটের উপর প্রবল চাপ ৷ সেই অবস্থায় কেবেল কার শহরের আকাশ কাজে লাগিয়েছে ৷’’

প্রত্যেকটি কামরায় ১০ জন যাত্রী ধারণের জায়গা রয়েছে ৷ প্রত্যেক রুটে, প্রত্যেক দিকে, ঘণ্টায় ৩,০০০ যাত্রী বহন করা হচ্ছে ৷ ছোট্ট এক প্রযুক্তিগত কৌশলের মাধ্যমে বিশাল চাহিদা মেটানো সম্ভব ৷ টরস্টেন বয়ারলাইন বলেন, ‘‘সেই প্রযুক্তি গতি বাড়ায়, দুই কামরার মধ্যে দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে আনে ৷ এর মাধ্যমে যাত্রী সংখ্যা ৩ থেকে ৪ হাজারে বাড়ানো সম্ভব৷’’

লা পাস শহরে ৬৫ মিটার পর্যন্ত উচ্চতার খুঁটি পোঁতাও বড় চ্যালেঞ্জ ৷ বাড়িঘর ধ্বংস করে সেগুলির জন্য জায়গা খোঁজা কঠিন ৷ কয়েক টন ওজনের অংশগুলি জোড়া দেওয়া সম্ভব নয় ৷ সাধারণত সেই কাজে হেলিকপ্টারের সাহায্য নেওয়া হয় ৷ কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয় ৷ কারণ এই শহরে বেশিরভাগ বাড়িতে টিনের চাল রয়েছে৷ হেলিকপ্টারের পাখার বাতাসের ধাক্কায় সেই চাল ভেঙে চারিদিকে উড়ে যাবে ৷ তাই এখানে সেটাও সম্ভব নয়৷’’

তাই ইউরোপ থেকে বিশেষ ক্রেন এনে অংশগুলি জোড়া দেওয়া হচ্ছে ৷ বলিভিয়ায় এমন সরঞ্জাম নেই ৷ খুঁটিসহ অনেক প্রয়োজনীয় বস্তুও সেখানে তৈরি হয় না ৷ অস্ট্রিয়ায় সব প্রস্তুত করে এখানে এনে সেগুলি জোড়া দেওয়া হয় ৷

এই ক্ষেত্রে  প্রযুক্তিগত সমাধান খোঁজা অবশ্যই একটি চ্যালেঞ্জ ৷ আরেকটি  চ্যালেঞ্জ হলো, সাধারণ মানুষের কাছে কেবেল কারের গ্রহণযোগ্যতা  বাড়ানো ৷ প্রথম দিকে অনেকে এমন উচ্চতার কারণে ভয় পেতেন ৷ এখন সেই আশঙ্কা দূর হয়েছে ৷ এর মধ্যে কেবেল কার শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবহণের মাধ্যম হয়ে উঠেছে ৷ দিনে প্রায় ১ লক্ষ মানুষ এটি ব্যবহার করে থেকেন ৷ টেলেফেরিকো লা পাস শহরের জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে এবং শহরের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে ৷ মানুষের গর্বের কারণও হয়ে উঠেছে পরিবহণের এই মাধ্যমটি ৷ সূত্র: ডয়েচে ভেলে

কেআই/টিকে


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি