ধর্ম আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় বিজেপি
প্রকাশিত : ০৯:৫০, ৫ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ০৯:৫১, ৫ এপ্রিল ২০১৮
সোনিয়া গান্ধীর ভারতীয় কংগ্রেস, পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টিসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল বিজেপির বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। পশ্বিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়তো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি প্রধান অমিত শাহের বিরুদ্ধে রীতিমতো বাগযুদ্ধে নেমেছে। আক্রমণ আসছে রাহুল গান্ধীর কাছ থেকেও। এ ছাড়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও বিজেপির তুলনামূলক কম ভোট পাওয়াকে নিজেদের জনপ্রিয়তার হ্রাস বলে মনে করছে বিজেপি নেতারা। তাই এবার শেষ অস্ত্র হিসেবে বেঁছে নিচ্ছেন ধর্মীয় গুরুদের।
ইতোমধ্যে বিজেপি সরকার জানিয়েছে, `কম্পিউটার বাবা` নামে পরিচিত এক সাধু-সহ মোট পাঁচ ধর্মগুরুকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কংগ্রেস বলছে, মধ্যপ্রদেশে এই নির্বাচনের বছরে এধরনের পদক্ষেপ `তোষণের রাজনীতি` ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে সরকার কেন এই সাধুদের হঠাৎ এত গুরুত্ব ও সুযোগসুবিধা দিচ্ছে?
স্বামী নামদেব ত্যাগী নামে মধ্যপ্রদেশের এক অতি প্রভাবশালী সাধুকে সবাই চেনে `কম্পিউটার বাবা` নামে - কারণ তার মাথা না কি চলে কম্পিউটারের মতো, আর হাতে সব সময় থাকে একটা ল্যাপটপ। হেলিকপ্টার থেকে যখন তিনি নামেন, তখনও তার সঙ্গে থাকে নানা ধরনের আধুনিক গ্যাজেট। ইন্দোরের ভাইয়ু মহারাজ নিজেকে রাষ্ট্রসন্ত বলে ঘোষণা করলেও কিছুদিন আগে বিয়ে করেছেন - জমিদার বংশের এই সন্তান আগে মডেলিংও করতেন।
বিশাল আশ্রম তার, চড়েন মার্সিডিজ এসইউভি-তে, থাকেন নানা বিলাসবহুল রিসোর্টে - সব দলের নেতাদেরই যাতায়াত আছে তার কাছে। এর পাশাপাশি হরিহরানন্দজি, পন্ডিত যোগেন্দ্র মহন্ত ও নর্মদানন্দজির জীবনও কম বর্ণময় নয় - এবং এই সাধুরা সবাই এখন মধ্যপ্রদেশে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাও পাচ্ছেন।
রাজ্যের বিজেপি নেতা ও এমপি প্রভাত ঝা-র কথায়, "আমাদের দেশে সরকার সবসময় সাধুসন্তদের পাশে আছে। সরকার হল জনগণের দ্বারা নির্বাচিত একটি সংস্থা - আর সাধুরা হলেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রধান, তারা ব্যস্ত থাকেন দেবদেবীর উপাসনা নিয়ে। তো তাদের জন্য সরকার যদি মন্ত্রীর স্বীকৃতি দিয়েই থাকে তো তাতে অন্যায়টা কী হল?"
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে সাংবাদিকরা এ নিয়ে প্রশ্ন করতে গেলে তিনি জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন, এ নিয়ে একটি কথাও বলেননি তিনি। তবে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি বলছে, এই কম্পিউটার বাবা গত বছরই রাজ্য সরকারের কথিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে `নর্মদা ঘোটালা পদযাত্রা` করার হুমকি দিয়েছিলেন - এখন প্রতিমন্ত্রীর টোপ দিয়ে তাকে সরকার চুপ করাতে চেয়েছে।
কম্পিউটার বাবা নিজে অবশ্য এ সব বক্তব্যে কান দিতে রাজি নন। তিনি বলছেন, ‘আমরা তো নিজে থেকে কিছু চাইনি - কিন্তু সরকার নিশ্চয় আমাদের কাজের গতিপ্রকৃতি দেখেই এই সম্মান দিয়েছে। কারণ আমরা যে কাজ করি সেটা ২৪ ঘন্টা দৌড়োদৌড়ির কাজ। জনসচেতনতা বাড়ানো, নর্মদার জল সংরক্ষণ করা ও ওই নদীর প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা - এগুলো মোটেই সহজ কাজ নয়। সেই কাজ যাতে আমরা আরও বেশি করে করতে পারি সে জন্যই সরকার আমাদের প্রতিমন্ত্রী বানিয়েছে - আর তাই সাধুসমাজের পক্ষ থেকে তাদের ধন্যবাদ’।
কংগ্রেস নেতা রাজ বব্বর দিল্লিতে এদিন আবার বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, গেরুয়াধারী বাবাদের ব্যবহার করে বিজেপি ভোটে জিততে চাইছে - উত্তরপ্রদেশে একজন গেরুয়াধারীকে মুখ্যমন্ত্রী বানিয়ে কী ঘটেছে, তা থেকে তারা কোনও শিক্ষাই নেয়নি। সদ্য প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাওয়া সাধুসন্তরা অবশ্য এসব সমালোচনা গায়ে মাখছেন না। তাদেরই একজন ভাইয়ু মহারাজ যেমন বলছিলেন, তিনি যেমন সমাজসেবা করছিলেন তেমনই চালিয়ে যাবেন।
বিজেপির এমন উদ্যোগকে আত্মঘাতী বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, শেষ পর্যন্ত ধর্মকে আঁকড়ে ধরে বিজেপি তার গদি রক্ষা করতে চাইছেন। এবার দেখা যাক, মধ্য প্রদেশের নির্বাচনে মোদির ধর্মীয় ম্যাজিক কতোটা কাজে আসে?
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দ-বাজার
এমজে/
আরও পড়ুন