পাকিস্তানের নিরাপদ পরিবেশ মানতে রাজি নন ট্রাম্প
প্রকাশিত : ১২:৩৯, ৬ এপ্রিল ২০১৮
পাকিস্তানে তালেবান এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের কারণে নিরাপদ পরিবেশ ফিরে এসেছে বলে দেশটির সরকার দাবি করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, পাকিস্তান সরকার জঙ্গি তৎপরতা এবং সন্ত্রাস নির্মূলে কোন ভূমিকাই রাখছে না।
নয় বছর আগে শ্রীলংকার খেলোয়াড়দের বাস লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন কমপক্ষে আটজন। বাসের চালক গুলিবিদ্ধ হলেও তিনি বাসটি চালিয়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা।
সেখানেই এবার আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। আর তা নিয়ে লোকজনের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ। স্বাগতিক দেশের বিরুদ্ধে লড়ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দলের ওপর জঙ্গি হামলার পর এই প্রথমবারের মতো পাকিস্তানে মাটিতে আন্তর্জাতিক কোন ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
পাকিস্তান যে এখন আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ তার একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায় লাহোরের জমজমাট এই ক্রিকেট স্টেডিয়াম দেখে।
এছাড়া, গত সপ্তাহেই সোয়াত উপত্যকায় নিজ বাড়ি ঘুরে গেছেন নোবেলজয়ী মালালা ইউসূফজাই। এই শহরেই পাঁচ বছর আগে তালেবান হামলার শিকার হয়েছিলেন কিশোরী মালালা।
ক্রিকেট ম্যাচ এবং মালালার আগমন দুটি ঘটনাই পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের ইঙ্গিত দেয়।
সরকারও বলছে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জঙ্গি তালেবান গোষ্ঠীগুলোর অনেককে হত্যা করেছে। অথবা এসব গোষ্ঠীর বেশিরভাগ সদস্যকে পালাতে বাধ্য করেছে। আর সে কারণে এই পরিবর্তন এসেছে।
তবে পাকিস্তানে নিরাপত্তার পরিবেশ নিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণে ছিল ক্ষোভের সুর। তার মতে, পাকিস্তান সরকার জঙ্গি তৎপরতা বা সন্ত্রাস নির্মূলে কোন ভূমিকাই রাখছে না।
ট্রাম্প বলেন, পাকিস্তানকে আমরা সন্ত্রাস নির্মূলে কোটি কোটি ডলার সহায়তা দিচ্ছি। অথচ তারা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। অবশ্যই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন আনতে হবে।
তবে ট্রাম্পের এমন দাবির বিরোধিতা করেছে পাকিস্তান। দেশটি বলেছে, চার বছর ধরে তালেবান এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ঘাঁটি লক্ষ্য করে সেনা অভিযানে পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গেছে। বিদেশি সাংবাদিকদের পক্ষে মাঠ পর্যায়ের এসব তথ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তবে পাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলের একজন সাংবাদিক রহিম মওলা ইউসূফজাই মনে করেন, পরিস্থিতি বদলে গেছে।
রহিম মওলা ইউসূফজাই বলেন, হাক্কানি নেটওয়ার্ক, তালেবানের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো এ অঞ্চলে সক্রিয় থাকলেও সাম্প্রতিক সেনা অভিযানে তারা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যায়। আগে তাদের নেতৃত্ব মূলত এখান থেকেই পরিচালিত হতো। তবে এখন তারা আর আগের মতো সংগঠিত নেই।
সীমান্ত অঞ্চলের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, সেনা অভিযানের কারণে এখন পর্যন্ত সেখানকার ৯০ হাজার বেসামরিক নাগরিক বাস্তু-চ্যুত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের ভিড়ে জঙ্গি নেতারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আফগানিস্তানে আশ্রয় নিতে পারে।
এই ধারণার ওপর ভর করে পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে ড্রোন নিয়ে হামলা চালাতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এতে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে বলে জানান মধ্যপ্রাচ্য ইতিহাসবিষয়ক মার্কিন অধ্যাপক লরেন্স ডেভিডসন।
অধ্যাপক লরেন্স বলেন, মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জঙ্গি নেতাদের এক এক করে হত্যা করা হচ্ছে। তবে এখানে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের বিষয়টি আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। মার্কিন গণমাধ্যমে এগুলো সেভাবে প্রকাশ পায় না।
এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই দেশের অরক্ষিত সীমান্ত পয়েন্টগুলো। আড়াই হাজার কিলোমিটারের এই সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ কঠিন হলেও কাজ করতে শুরু করেছে পাকিস্তান সরকার।
সাংবাদিক ইউসুফজাই জানিয়েছেন, সীমান্ত নির্মাণ করতে গিয়েও দেশটির সেনাবাহিনী হামলার শিকার হয়েছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি।
একে// এসএইচ/
আরও পড়ুন