শহরে থেকেও গাড়িহীন জীবনযাত্রা সম্ভব
প্রকাশিত : ১৭:০২, ৭ এপ্রিল ২০১৮
গাড়িহীন শহরের কথা ভাবাই যায় না৷ তবে জার্মানির মতো গাড়ি-পাগল দেশের কোলন শহরে একটি এলাকায় গাড়ির প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ৷ কারণ দেশটির বড় শহরে গাড়ি চলাচল সীমিত করতে নানা ভাবনাচিন্তা চলছে৷ শহরটির নিপেস এলাকাই সবচেয়ে বড় গাড়ি-বর্জিত পাড়া৷
জার্মানির মতো গাড়ি-পাগল দেশের জন্য প্রায় বিপ্লবের মতো ঘটনা এটি৷ এর ফলে শিশুরা পথের উপর খেলছে, মনে ভয় ছাড়াই দিব্যি ঘোরাফেরা করছে, পার্কিং-এর বদলে খেলার জায়গা৷ এখানে ঠেলাগাড়ি নিয়ে বাজার করতে যেতে হয়৷ তবে সারা সপ্তাহের বাজার একসঙ্গে তাতে ধরে না৷ তাই প্রায় প্রতিদিনই পাড়ার দোকানে তাজা পণ্য কেনেন অনেকে৷ সেখানকার একজন ইংগা বলেন, ‘আমার বেশি কঠিন মনে হয়নি৷ সাইকেল চালিয়ে ঘুরি, পিঠে রাকসাক থাকে, বাজার তার মধ্যেই ধরে যায়৷ সাইকেলের ঝুড়িও রয়েছে৷ তবে পানীয়র বোতলের মতো বড় কিছু থাকলে ঠেলাগাড়ি ধার নেওয়া যায়৷ অর্থাৎ যথেষ্ট উপায় থাকে৷’
ড. ক্রিস্টিয়ান পিলার জার্মান এয়ারোস্পেস সংস্থা ডিএলআর-এ পরিবহণ সংক্রান্ত গবেষণা বিভাগের প্রধান৷ জার্মানির বাকি শহরের মতো কোলনও গাড়ির উপর নির্ভরশীল৷ তবে তাঁর মতে, এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে৷ কীভাবে সেটা সম্ভব? ড. পিলার বলেন, ‘আমার মনে হয়, কোলনের মতো শহরের জন্য সোনার ডিম দেওয়া মুরগি নেই৷ অর্থাৎ একটিমাত্র চাবিকাঠি পাওয়া সম্ভব নয়, একাধিক পদক্ষেপ নিতে হবে৷ নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রেই কাজ শুরু করতে হবে৷ গণপরিবহণ কাঠামো আরও সম্প্রসারিত করতে হবে৷ সেইসঙ্গে সাইকেল ও পথচারীদের জন্য আরও ব্যবস্থা করতে হবে।’
ভবিষ্যতে শহরের কাঠামোর একটা রূপরেখা প্রস্তুত করা হয়েছে৷ সব এলাকার মধ্য দিয়ে বড় রাস্তাগুলি ধীরে ধীরে গুটিয়ে ফেলতে হবে৷ সবুজ অংশ বাড়াতে হবে৷ ব্যক্তিগত মালিকানার গাড়িগুলিকে কোণঠাসা করে ফেলতে হবে৷ শহরের কেন্দ্রস্থলে মালপত্র নিয়ে যেতে ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহার করতে হবে৷ সাইকেল ও ইলেকট্রিক শক্তিচালিত তিন চাকার বাহনের ব্যবহার বাড়বে৷ পাড়ার মধ্যে স্বয়ংক্রিয় বাস চলবে৷ মোবাইল ফোনের অ্যাপ-এর মাধ্যমে পরিবহণের সব মাধ্যমের মধ্যে সমন্বয় করা যাবে৷ তবে একটা শহরে এমন আমূল পরিবর্তন করার ঝক্কি ও ব্যয় কম নয়৷ ড. পিলার বলেন, ‘বড় সমস্যার ভয়ে আরও অপেক্ষা না করে পরিবহণের ক্ষেত্রে এমন পরিবর্তন এখনই শুরু করা উচিত বলে আমি মনে করি৷ ছোট ছোট পদক্ষেপ দিয়ে কাজ শুরু হতে পারে, যাতে তার সুফল হাতেনাতে পাওয়া যায়৷’
ইংগা ফয়সার এমন পদক্ষেপের কথা জানেন৷ যেমন আসবাবপত্র পরিবহণ বা কাছেপিঠে বেড়াতে গেলে তিনি কয়েক ঘণ্টার জন্য গাড়ি ভাড়া করেন৷ নিজস্ব গাড়ির বদলে কার-শেয়ারিং ব্যবস্থা৷ কারণ কিছু ক্ষেত্রে গাড়ি ছাড়া চলে না৷ ইংগা ফয়সার বলেন, ‘যখন খুব সকালে কাজে যেতে হয় এবং কিন্ডারগার্টেন সকাল সাড়ে সাতটায় খোলে আর আমাকে ৮টার সময় অফিসে পৌঁছতে হয়, তখন ট্রাম-বাসের উপর নির্ভর করা যায় না৷ তখন কারশেয়ারিং পরিষেবার আওতায় গাড়ি ভাড়া করতে হয়৷ সপ্তাহে একবার তো এমন চাহিদা হয়ই৷’
তবে সপ্তাহের বাকি দিনগুলিতে গোটা পরিবার গাড়ি ছাড়াই চলার চেষ্টা করে৷ দুপুরবেলা পাড়ার মধ্যেই দিব্যি সময় কেটে যায়৷ কোলন শহরের এই পাড়ার মানুষ দেখিয়ে দিয়েছেন, গাড়ি-বিহীন জীবনযাত্রা মানেই ত্যাগ স্বীকার করা নয়৷ বরং এর ফলে জীবনযাত্রার মান বাড়ে৷ জীবনে শান্তি আসে৷ বড় শহরের মধ্যেও সেটা সম্ভব৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে
একে/এসি
আরও পড়ুন