ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০২ জানুয়ারি ২০২৫

ইকুয়েডরের খামারের সুস্বাধু অর্গানিক কলা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:১২, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

দক্ষিণ অ্যামেরিকার ইকুয়েডরে বড় বড় খামারে কলার চাষ চলছে ৷ জাহাজে করে এ কলা রফতানি হবে ইউরোপে। ওদিকে মাত্রাধিক কীটনাশক ব্যবহারের দাম দিচ্ছেন খামারকর্মীরা৷ এর সমাধান হলো অর্গানিক খামার৷

কলাবাগান, মানে কলা চাষের খামার৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ ইকুয়েডরের দক্ষিণে মাচালায় কলাচাষিদের বিভীষিকা হল সিগাটোকা নামের এক ধরনের ছত্রাক। বাংলায় আমরা যাকে ছাতা ধরা বলি ৷ কলাগাছে ছাতা ধরা আটকানোর জন্য সপ্তাহে দু`-তিনবার বিমান থেকে ফাংগিসাইড বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হয়৷

ডারউইন পালাসিওস চারটি কলাবাগানের মালিক। তিনি দু`প্রজন্ম ধরে পালাসিওস পরিবার কলাচাষের খামার চালাচ্ছে৷ পালাসিওস তার অভিজ্ঞতায় বলেন, সিগাটোকা নেগ্রা কোনো সাধারণ অসুখ নয়, যা সারানো যায়৷ এ এমন একটা ছত্রাক, যা তাপমাত্রা বা আর্দ্রতা অনুযায়ী চিরকালই থাকবে৷ নিয়মিত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা দেখার চেষ্টা করি, রোগটা যাতে না ছড়ায় আর ফসলের ক্ষতি যেন না করে। কলাগাছের পাতাগুলো যেন সুস্থ থাকে, এর ফলগুলোও যেন সুস্থ থাকে৷

সিগাটোকা একবার দেখা দিলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব৷ ইকুয়েডরের আবহাওয়া একটু অন্যরকম হওয়ার এখানে সিগাটোকা এখন পর্যন্ত বিশেষ কোনো ক্ষতি করতে পারেনি ৷ ইকুয়েডরের আবহাওয়া মধ্য অ্যামেরিকার অন্য দেশের মতো অতোটা আর্দ্র ও বৃষ্টিপ্রধান নয়, সেসব দেশে ইকুয়েডরের চেয়ে তিনগুণ বেশি ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়৷

কলাগাছের বংশবৃদ্ধি প্রজনন ছাড়াই ঘটে: মূল গাছটার পাশে ছোট ছোট স্ত্রী গাছ গজায়, যারা নয় মাসের মধ্যেই ফল দিতে শুরু করে৷ পালাসিওস জানালেন, সেরা গাছগুলো বেছে নেওয়া যায় ৷ আমরা আবার সেগুলোকে ল্যাবরেটরিতে ক্লোন করতে দেই, যাতে তাদের  জিনগত বৈশিষ্ট্য এক হয়৷ তা থেকে আমরা নিশ্চিত হই, আমরা সবসময় সেরা ফসল পাব, সবচেয়ে বেশি ওজনের সেরা কলা গজাবে; যাতে আমরা কলার খামারে হেক্টর প্রতি সবচেয়ে বেশি উৎপাদন করতে পারি৷

প্রজনন ব্যতীত বংশবৃদ্ধির বিপদ হল- এরা জিনগত উপাদানের দিক দিয়ে গাছগুলো নিজেদের বদলাতে পারে না। কাজেই প্রাকৃতিক শত্রুর হাত থেকে নিজেদের বাঁচানোর ক্ষমতা এসব গাছের নেই৷ এদিকে সারা বিশ্বে আজ প্রায় এক ধরনের কলাই অবশিষ্ট আছে এটি হলো ক্যাভেন্ডিশ জাতের কলা। এ কলার আবার সিগাটোকা ছত্রাক প্রতিরোধের ক্ষমতা নেই৷

কীটনাশক, নাকি অর্গানিক?

ইকুয়েডরে  কলার খামারগুলোর উপর যে ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক ছড়ানো হয়, কলা যারা কেনেন অথবা খান, তাদের জন্য তা থেকে কোনো বিপদ নেই। তবে বিপদ হল কলার খামারের কর্মীদের৷ অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইকুয়েডরে অর্গানিক চাষ প্রসূত কলা ক্রমেই আরো বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ও দেশে কলার উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ আজ আসছে অর্গানিকচাষ থেকে৷

‘এল পিনকো`-র মতো অর্গানিক খামারগুলিতে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে৷ কৃষি প্রযুক্তিবিদ গনসালো মার্ক্স পেনিয়ারেতা আগে তিন বছর ধরে কীটনাশকের পাইকারি ব্যবসায় কাজ করেছেন৷ তারপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ পেনিয়ারেতা শোনালেন সে কাহিনি৷

তিনি বলেন, কীটনাশক ইত্যাদি কৃষিকাজের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করে, এমন একটা সংস্থায় আমি কাজ করতাম৷ আমার কাজের জায়গায় বিমান থেকে কীটনাশক ছড়ানো হতো৷ তা থেকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি৷ কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে খামারকর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ একটা বয়সে পৌঁছানোর পর তাদের হাতের নখ পড়ে যায়, তাদের ক্যানসার হয়, মাথার চুল পড়ে যায়, দৃষ্টিশক্তি কমে যায়৷ অসহ্য লাগে৷

কীটনাশকের ফলে স্বাস্থ্যজনিত ক্ষতির কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন, কিন্তু এ অঞ্চলে সকলেই কাউকে না কাউকে চেনেন, যে অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ অপরদিকে অর্গানিকখামারগুলোতে শুধুমাত্র অরগ্যানিক সার ও ব্যাকটেরিয়া বা অ্যালজির সার, কিংবা সিগাটোকা ছত্রাকের মতো শ্যাওলা দূর করার জন্য এক ধরনের বিশেষ তেল ব্যবহার করা হয়৷

পেনিয়ারেতা বলেন, প্রথাগত খামারে রাতের অন্ধকারে হাঁটতে গেলেও কোনো অসুবিধে নেই, কেননা জমি একেবারে খালি, কোনো কিছু পড়ে নেই৷ কিন্তু অর্গানিকখামারে হেঁটে বেড়ালে আগাছা, কেঁচো, পিঁপড়া ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যাবে, সাথে নানা ধরনের পোকামাকড়৷

কলার অনেক গুণ রয়েছে৷ কলা শুধু ফিট থাকতে সাহায্য করে না, কলা মানুষকে সুন্দর করে এবং আনন্দিত থাকতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে৷ চলুন কলার গুণাগুণ সম্পর্কে আরো জানা যাক৷

‘আসিয়েন্দা মিদাহা`য় ডারউইন পালাসিওস তার নিজস্ব পদ্ধতি চালু করেছেন৷ কলাবাগানের এক একটা প্লটের ফসলের ওপর নিয়মিতভাবে নজর রাখা হয়। পালাসিওস আরো কার্যকরিভাবে সার, পানি ও কলাগাছের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেন৷ এর ফলে অর্থের সাশ্রয় হয়৷ কীভাবে, পালাসিওস তা বর্ণনা করেন, কোন প্লটে কতো ফসল হয়েছে, তার সব খবর আমরা এখানে বসে পাই৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল কলার ওজন৷ কলার কাঁদি থেকে আমরা কলার বয়স আর সেটা কোনো প্লট থেকে এসেছে, তা বলে দিতে পারি। এছাড়া সেখানে যদি সমস্যা থাকে, তাও আমরা দেখতে পাই আর সময়মতো ব্যবস্থা নিতে পারি৷

এরপর কলাগুলো কনটেনার জাহাজে করে মাচালা থেকে জার্মানির হামবুর্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়। কলা সবুজ থাকাকালীনই সেগুলোকে চালান দেওয়া হয়; পরে অকুস্থলে ইথিলেন সহযোগে সেগুলোকে পাকানো হয়৷

গবেষণা দেখা গেছে, সিগাটোকা ছত্রাক পুরোপুরি প্রতিরোধ করতে সক্ষম, এমন কলাগাছ নাকি তৈরি হতে চলেছে, যাতে কীটনাশক ব্যবহারের কোনো প্রয়োজনই পড়বে না।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

/ আর /


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি