ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

যে প্রক্রিয়ায় হত্যা মিশন চালায় মোসাদ

প্রকাশিত : ১২:২৯, ২৩ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১২:৩১, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

কথিত আছে, যত দিন মোসাদ থাকবে, তত দিন পর্যন্ত বিশ্বের বুকে ইসরায়েল মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে। ইসরায়েল তার নিজের স্বার্থে বিশ্বের অনেক বাঘা বাঘা নেতাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বিজ্ঞানী, গবেষক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও। যে-ই ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাকেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর এ গোয়েন্দা সংস্থাটি। এর সর্বশেষ সংযোজন ফিলিস্তিনি শিক্ষক ও গবেষক ফাদি আল বাদশা হত্যা। এই হত্যার পর আবারও আলোচনায় এসেছে মোসাদের কিলিং মিশনের বিষয়টি।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ নিয়ে কাজ করেন, এমন একজন গবেষক হলেন বার্গম্যান। তিনি দাবি করেন, ২০০০ সালে ফিলিস্তিনে ইন্তিফাদা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মোসাদ ৫০০ কিলিং মিশন সম্পন্ন করেছে। এতে অন্তত ১ হাজার জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

মোসাদের এই রহস্যময় শক্তির পেছনে, কি আছে, তা উঠে এসেছে মধ্য প্রাচ্যভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আল-জাজিরার পাতায়। জানা গেছে, মোসাদের অনেকগুলো শাখা রয়েছে। আছে তাদের দুর্ধর্ষ পরিচালনাপদ্ধতি। কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে কাজ করে থাকে মোসাদ। তাই তাদের সম্পর্কে সবটুকু জানা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তবু কিছু কিছু তথ্য পাওয়া যায়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে থাকা অতি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দিয়ে পরিচালিত হয় মোসাদের বেশ কয়েকটি বিভাগ। এই বিভাগগুলো মোসাদকে পরিচালনা করে।

কালেকশান ডিপার্টমেন্ট:মোসাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট কালেকশন ডিপার্টমেন্ট। এই বিভাগের এজেন্টরা ডিপ্লোম্যাট, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ অন্যান্য ছদ্মবেশে কাজ করেন। তাদের মূল কাজ তথ্য, ঘটনা, ঘটনার গতি প্রকৃতি সংগ্রহ করা। এরা গুপ্তচরের মতো কাজ করে থাকে। এদের বলা হয়, কাটসাস। জানা গেছে, জর্ডান ও মরক্কোর গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সব গোয়েন্দা তথ্য হাতিয়ে নেয় মোসাদ। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে মোসাদ। এমনি ওসব গোয়েন্দা সংস্থায় কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশগুলোর গোয়েন্দা তথ্য হাতিয়ে নেয় এ সংস্থাটি।

ক্যাসরিয়া:
ক্যাসরিয়া মোসাদের কার্যক্রম পরিচালনা শাখা। এ শাখার কাজ-ই হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুপ্তচর নিয়ো দেওয়া ও তাদের পরিচালনা করা। বিশেষ করে আরব দেশগুলোতে মোসাদের এ গোয়েন্দা শাখাটি খুব পারদর্শীতা দেখাচ্ছে। ১৯৭০ সালে মোসাদের এ শাখাটি প্রতিষ্ঠা করে মোসাদের বিখ্যাত গোয়েন্দা মাইক হারারে। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান ও ভবিষ্যত টার্গেটের সব তথ্য আহরণ করায় মূলত ক্যাসরিয়ার কাজ। এদিকে ক্যাসলিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর বিশেষ ইউনিট এসএসি’র সঙ্গে তুলনা করা হয়।

কিডোন: ক্যাসরিয়া শাখার প্রতিষ্ঠাতা হারারে এরপর প্রতিষ্ঠা করেন কিডোন শাখা। অনেকে এটাকে বেয়নেট নামে চেনে। কেবল বিশেষ পেশাগত ‘কিলার’দের সমন্বয়ে এ শাখাটি গঠিত। বিশ্বব্যাপী হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ বয়ে দিতে এ শাখাটি কাজ করে। ইয়াসির আরাফাতসহ আরব বিশ্বের আরও বহু নেতাকে কিডোন শাখার গোয়েন্দারা হত্যা করেছে বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, গত ২১ এপ্রিল মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ফিলিস্তিনি গবেষক ফাদি আল-বাদশাকেও এই গোয়েন্দা শাখার লোকজন হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

রাজনৈতিক যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট: রাজনৈতি যোগাযোগ নামে মোসাদের একটি বিভাগ রয়েছে। এই বিভাগের কর্মীরা দেশের রাজনৈতিক নেতা, অন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও যেসব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক যোগাযোগ নেই, সেসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। প্রয়োজনে অর্থ ও নারীসহ নানাবিধ সুবিধা দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। এ ছাড়া অন্য দেশের কূটনৈতিক ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও এই বিভাগের কর্মীরা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখে।

ল্যাপ ডিপার্টমেন্ট: ল্যাপ ডিপার্টমেন্ট নামে আরকটি গ্রুপ কাজ করে গোয়েন্দা সংস্থাটিতে। এরা প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। যাবতীয় যুদ্ধের পরিকল্পনাও এখান থেকেই করা হয়। মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের জন্য প্রচার চালায়। শত্রুশিবিরে ভুল খবর ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করে থাকে। গুপ্তহত্যা, আধা-সামরিক অপারেশন, নাশকতামূলক কাজ, রাজনৈতিক কলহ তৈরি বা প্রোপাগান্ডা চালানো এই বিভাগের কাজ।

রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট: এই বিভাগের গবেষকরা বিভিন্ন প্রযুক্তিগত জিনিস উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা করে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, ধারণা ও তত্ত্ব প্রচার, নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার এবং তার সঠিক ব্যবহার ছাড়াও গবেষণা কাজের জন্য ইসরায়েলি ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটি গঠন করা এই বিভাগের দায়িত্ব। ইসরায়েলের ভেতরে ও বাইরে কাজ করে, এমন সব গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে এই কমিউনিটি গঠন করা হয়।

এসব ধাপ পেরিয়েই কেবল হত্যা মিশনে নামে মোসাদের হত্যাকারী দল। হত্যার বিষয়টি একদিন বা দুদিনের বিষয় নয়। বরং মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে-ই কেবল সুযোগমতো হত্যা করা হয় টার্গেটদের। আর সর্বশেষ গুপ্তহত্যার বিষয়টি এ সব ধাপ পেরিয়ে সংগঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্গম্যান।

সূত্র: আল-জাজিরা, উইকিলিকস

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি