ঢাকা, শনিবার   ১১ জানুয়ারি ২০২৫

যে পাঁচ যুদ্ধ শেষ হয়েও হয় নি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৫৩, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

কোরিয়ান উপদ্বীপে তিন বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষ হয়েছিলো ছয় দশক আগে। কিন্তু এখনও দুই কোরিয়া যেন পরস্পরের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে। তখন সহিংসতা থাকলেও, কোনও শান্তি চুক্তি হয়নি। যদিও দুই কোরিয়ার সম্পর্কে এখন সে রকম একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

তবে বিশ্বে এরকম উদাহরণ আরও রয়েছে, যেখানে বাস্তবে যুদ্ধ শেষ হয়েছে, কিন্তু শান্তি বহুদূরেই রয়ে গেছে।

এর কয়েকটি হয়তো আপনাকে অবাকও করতে পারে-

রাশিয়া-জাপান

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আত্মসমর্পণের মাত্র কয়েকদিন আগে ১৯৪৫ সালের অগাস্টে জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সোভিয়েত সরকার। মূলত কুরিল দ্বীপপুঞ্জকে সংযুক্ত করতেই এই যুদ্ধ। এই দ্বীপগুলোই এখনও দুই দেশের বিরোধের কারণ। রাশিয়ার দাবি, যুদ্ধ শেষের চুক্তি অনুযায়ী, এগুলোর মালিক রাশিয়া। তবে জাপান দ্বীপগুলোর ওপর থেকে অধিকার ছাড়েনি।

মিত্র বাহিনী আর জাপানের মধ্যে ১৯৫১ সালে যে শান্তিচুক্তি হয়, সেখানে স্বাক্ষর করেনি সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৫৬ সালে একটি যৌথ ঘোষণায় দুই দেশ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। কিন্তু দ্বীপ নিয়ে মালিকানার বিরোধ এখনও আনুষ্ঠানিক শান্তি চুক্তিতে একটি বাধা হিসাবেই রয়ে গেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রবাহিনী আর  জার্মানি

১৯৪৫ সালের মে মাসে মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে জার্মানি। কিন্তু সে সময় একাধিক বিশ্বশক্তির মধ্যে ভাগাভাগি হওয়ার কারণে এককভাবে কোনও জার্মান সাবেক রাইখল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেনি।

স্নায়ু যুদ্ধের কারণে ১৯৯০ সালে দুই জার্মানির পুনর্মিলনের আগ পর্যন্ত আসলে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধের অবসান হয়নি। এ কারণেই পশ্চিম জার্মানিতে ঘাঁটি গেড়ে রাখার আইনগত অধিকার পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

মন্টিনেগ্রো  আর  জাপান

১৯০৪-০৫ সালের রাশিয়া জাপান যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থন দিয়েছিল মন্টিনেগ্রো। ওই যুদ্ধে বিজয়ী হয় জাপান। সেই যুদ্ধের পর যখন রাশিয়া আর জাপান শান্তিতে সম্মত হয়, তখন মন্টিনেগ্রোর কথা ভুলে যাওয়া হয়েছিল।

এরপর জাপানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে মন্টিনেগ্রোর প্রায় একশো বছর লেগেছে। কারণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কিংডম অব সার্বিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয় মন্টিনেগ্রো। ২০০৬ সালে সার্বিয়া থেকে বেরিয়ে আবার স্বাধীন হয়েছে মন্টিনেগ্রো। এরপরেই অবশেষে তারা জাপানের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি করে পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে।

নেদারল্যান্ডস এবং আইলস অফ সিসিলি (যুক্তরাজ্য)

যখন অনেক দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে যুদ্ধ চলেছে, কোনো কোনো দেশের মধ্যে তা চলেছে কয়েক শতাব্দী ধরে। যদিও তখন হয়তো সেই যুদ্ধের কথা অনেকে ভুলেও গেছে।

যেমন এই যুদ্ধের সূচনা অনেক শতাব্দী আগে, ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের অবসানের সময় ১৬৫১ সালে। তখন পার্লামেন্টারিয়ানদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল ডাচ নৌবাহিনী। ফলে রয়্যাল গোলন্দাজ বাহিনীর হামলায় সিসিলিতে ডাচ নৌ বাহিনীর যে ক্ষতি হয়, তারা তার ক্ষতিপূরণ দাবি করে।

কিন্তু তাদের কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। ফলে ডাচরা সিসিলি দ্বীপে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু পার্লামেন্টারিয়ানরা তাদের হটিয়ে দ্বীপটি দখল করে নেয়। তবে কোনও শান্তি চুক্তি হয়নি। সেটি সবাই ভুলেও যায়।

এর ৩৩৫ বছর পরে ১৯৮৬ সালে এই ঘটনাটি বের করেন ইতিহাসবিদ রয় ডানকান। এরপর ডাচ রাষ্ট্রদূত দ্বীপটি সফর করে একটি শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

প্রাচীন রোম আর কার্থেজ

আরও পেছন দিকে গেলে ১৪৬ খৃস্টপূর্বাব্দে রোমানরা প্রাচীন কার্থেজ দখল করে ধ্বংস করে দিলেও প্রাচীন রোম আর কার্থেজের মধ্যে কোনও শান্তি চুক্তি হয়নি।

এর প্রায় ২১০০ বছর পরে ১৯৮৫ সালে আধুনিক রোম আর বর্তমানের কার্থেজ, যার এখনকার নাম টিউনিস, দুই শহরের পৌর মেয়ররা একটি শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে আবার বন্ধু হয়েছেন।

সূত্র: বিবিসি

একে// এআর


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি