দিল্লীর লাল কেল্লার নামে যে কারণে যোগ হচ্ছে ডাল মিয়া
প্রকাশিত : ০৯:৫৫, ৩০ এপ্রিল ২০১৮
মুঘল বাদশাহ শাহজাহানের আমলে নির্মিত, প্রায় চারশো বছরের পুরনো লাল কেল্লা স্বাধীন ভারতেও এক অনন্য স্মারক। কারণ প্রতি বছরের ১৫ অগস্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা এখানেই তেরঙা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন, জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তবে সেই লাল কেল্লার নামের সঙ্গে একটি শিল্পগোষ্ঠীর নাম জুড়ছে - এ খবর সামনে আসতেই বিরোধী দলগুলি জোর হইচই শুরু করে দিয়েছে।
যে দুর্গের অলিন্দ থেকে স্বাধীনতা দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা ভাষণ দিয়ে থাকেন, সেই লাল কেল্লাকে এর মাধ্যমে কর্পোরেট সংস্থার কাছে বন্ধক দেওয়া হচ্ছে বলে বিরোধী দলগুলি তীব্র সমালোচনা করেছে সরকারের। যদিও সরকারের যুক্তি, ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোতে পর্যটক-সুবিধা উন্নত করতেই এই পদক্ষেপ।
লাল কেল্লার প্রতিটি ইঁটে যে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের রক্ত আর আত্মত্যাগ জড়িয়ে আছে, এখান থেকেই বাহাদুর শাহ জাফর সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা করেছিলেন - সেই ইতিহাস কি মোদি সরকার আদৌ জানে?", প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের রণদীপ সুরজেওয়ালা। আর রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা মনোজ ঝা বলছেন, "এবার কি তাহলে নরেন্দ্র মোদি `ডালমিয়া ফোর্ট` থেকে ভাষণ দেবেন?"
জবাবে সরকার অবশ্য বলছে, ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর আরও ভাল পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেগুলোকে দত্তক নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কর্পোরেট হাউসগুলিকে, তাতে সাড়া দিয়েই বিভিন্ন সংস্থা এগিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমন্ত্রী মহেশ শর্মার কথায়, "আমাদের এই সব ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও হেরিটেজগুলো আমাদের গর্ব - তাকে বিশ্বের পর্যটকদের কাছে কীভাবে আরও ভালভাবে তুলে ধরা যায়, সেটাই ছিল এর লক্ষ্য। আর এখানে তাদের আর্থিক মুনাফার কোনও ব্যাপারই নেই, কারণ টিকিট বিক্রির সব টাকা সরকারি কোষাগারেই যাবে।"
তবে এই যুক্তি বিরোধীরা মানছেন না - তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তো একে `ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্যই বিষণ্ণ এক কালা দিবস` বলে টুইট করেছেন। আর লাল কেল্লা যার বিধানসভা এলাকার মধ্যে পড়ে, দিল্লিতে সেই চাঁদনি চকের আম আদমি পার্টি এমএলএ অলকা লাম্বা কেল্লার সামনে থেকে আজ ফেসবুক লাইভ করে সরকারকে তুলোধোনা করেছেন।
মিস লাম্বার যুক্তি, যে সরকার নিজেদের প্রচার ও বিজ্ঞাপনে তিন হাজার সাতশো কোটি রুপিরও বেশি খরচ করতে পারে, তারা মাত্র পঁচিশ কোটির জন্য লাল কেল্লাকে বন্ধক রাখছে এটা চরম অপমানের। তবে এই মুহুর্তে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে লাল কেল্লায় সুযোগ-সুবিধা যে বেশ নিম্ন মানের, তা অবশ্য কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না।
আর এই কারণেই ডালমিয়া গোষ্ঠীর ডিরেক্টর পুনিত ডালমিয়া বলছেন, "আমরা লাল কেল্লাকে ঠিকমতো মার্কেট করার ওপর জোর দেব - ভাল ওয়েবসাইট বা প্রচার-পুস্তিকার মাধ্যমে এমনভাবে সেটি গড়ে তুলব, যাতে দিল্লিবাসী গর্বের সঙ্গে বলতে পারেন এ শহরে এলে অবশ্যই লাল কেল্লাটা ঘুরে যাবেন।"
ভারতের পর্যটন সচিব রশ্মি ভার্মাও জানাচ্ছেন, তাদের লক্ষ্য হল সরকারি-বেসরকারি কর্পোরেটদের `মনুমেন্ট মিত্র` হিসেবে ডেকে নিয়ে এই ঐতিহাসিক স্মারকগুলোর ভোল বদলে দেওয়া।
বিরোধীরা যদিও মনে করছেন এতে ইতিহাসকে অসম্মান করে জাতির গর্ব বিকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এমজে/
আরও পড়ুন