ফের উত্তাল আর্মেনিয়া; স্থবির রাজধানী
প্রকাশিত : ১৯:৩৮, ২ মে ২০১৮
আর্মেনিয়ার বিপ্লবী নেতা নিকোল পাশিনিয়ানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ায় আবার উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশটি। পাশিনিয়ানের সমর্থকদের অবরোধে ইতোমধ্যে স্থবির হয়ে পরেছে রাজধানী ইয়েরেভান। শহরটির প্রধান সড়ক এবং সরকারি দপ্তরগুলো অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে লক্ষাধিক আর্মেনিয়।
২০০৮ সাল থেকে টানা দশ বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন রিপাবলিকান দলের নেতা সার্জ সার্গসিয়ান। দেশটির সংবিধানে দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকার নিয়ম না থাকায় প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
পরে সংবিধানে পরিবর্তন করে প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের বদলে পার্লামেন্টের কাছে ন্যস্ত করে দেশটির সংসদ। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেই সার্গসিয়ানকেই নিয়োগ দেয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল রিপাবলিকান পার্টি। এরপর থেকে পাশিনিয়ান সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সার্গসিয়ান।
সার্গসিয়ানের পদত্যাগের পর রিপাবলিকান দল নিকোল পাশিনিয়ানকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দিলে সেবারের মতো থেমেছিল আন্দোলন। কিন্তু আজ বুধবার দেশটির সংসদের ভোটে প্রধানমন্ত্রী পদে হেরে যেন পাশিনিয়ান। এরপর থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয় তীব্র আন্দোলন।
এর আগে গতকাল রাত থেকেই দেশটির সংসদের বাইরে সমবেত হতে থাকে হাজার হাজার পাশিনিয়ান সমর্থক। প্রধানমন্ত্রী হতে প্রয়োজনীয় ৫৩ ভোট থেকে ৮ ভোট পেয়ে হেরে যান পাশিনিয়ান। তার সমর্থকদের দাবি, ইচ্ছে করেই তাকে ভোটে হারিয়ে দিয়েছে রিপাবলিকান দল।
সংসদের বাইরে টেলিভিশনের বড় পর্দায় যখন ভোটের ফলাফল প্রকাশ করা হয় তখন সমর্থকেরা ‘লজ্জা’ ‘লজ্জা’ বলে চিৎকার করে ফলাফলের বিরোধিতা করে বলে জানায় বার্তা সংস্থা বিবিসি।
রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে থেকেও লাখো বিক্ষোভকারী এসময় রাজধানীতে এসে সড়কগুলোর দখল নিয়ে নেয়। পুলিশ কয়েক দফা চেষ্টা করেও তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে পারেনি। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের এখন পর্যন্ত কোন সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিকোল পাশিনিয়ান এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
আন্দোলের সাথে একাত্মতা জানিয়েছে দেশটির অন্যান্য বিরোধী দলের নেতারাও।
আন্দোলনের চিত্র
রাজধানী ইয়েরেভান ছাড়াও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতেও। রাজধানীর সাথে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গুমরির বন্ধ ট্রেন চলাচলের লাইন অবরোধ করে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা। অচল করে দেওয়া হয়েছে গুমরি হয়ে জর্জিয়া প্রবেশের সীমান্তও।
মেয়রের এবং অন্যান্য সরকারি দপ্তর অবরুদ্ধ করে রেখেছে আর্মেনিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর ভ্যানাড্রোজে থাকা পাশিনিয়ানের সমর্থকেরা। সেখানকার একটি গার্মেন্ট কারখানার প্রায় তিন হাজার শ্রমিক আন্দোলনে শরিক হয়ে আটকে রেখেছে শহরটির বেশক’টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক।
আন্দোলের কারণে বিপাকে পরেছে দেশটিতে থাকা কয়েক হাজার পর্যটক। রাজধানীর বিমানবন্দরসহ গুরত্বপূর্ণ শহরগুলোর বিমানবন্দরের সামনে বিক্ষোভ করছেন বিক্ষোভকারীরা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রাজধানীর মেট্রো রেলও।
দক্ষিণ ককেশনীয় এই রাষ্ট্রটির প্রায় তিন মিলিয়ন নাগরিক দেশটির বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন বলে জানায় বিবিসি। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও আছেন।
এদিকে বিবিসিকে নিকোল পাশিনিয়ান বলেন, “আমি বিষয়টি পরিষ্কার করতে চাই। নিকোল পাশিনিয়ানকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য এই বিক্ষোভ না। এই বিক্ষোভ হচ্ছে জনগণের মানবাধিকার আদায়, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা এবং আইনের শাসনের জন্য। এই কারণেই আমাদের জনগণ ক্লান্ত না আর তারা ক্লান্ত হবেও না”।
//এস এইচ এস//টিকে
আরও পড়ুন