শুনানিতে উপস্থিত হতে ট্রাম্পকে হুমকি দিয়েছিলেন মুলার
প্রকাশিত : ১৯:৪৬, ২ মে ২০১৮ | আপডেট: ২০:০০, ২ মে ২০১৮
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক যেন থামছেই না। নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ এখনও তদন্ত করছে। সেই তদন্তে সমন জারি করে ট্রাম্পকে উপস্থিত হতে বাধ্য করার হুমকি দিয়েছিল তদন্তের বিশেষ কৌসুলী রবার্ট মুলার।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে জানায় যে, গত মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একজন আইনজীবীকে মুলার জানান যে, তিনি (মুলার) চাইলে সমন জারি করে ট্রাম্পকে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে তাকে তার বক্তব্য দিতে আদেশ জারি করতে পারতেন।
এর ফলে ট্রাম্পকে তদন্তের সার্থে ডেকে আনার এমন সম্ভাবনার কথা এই প্রথমবার শোনা গেল মার্কিন মুল্লুকে।
মুলারের এমন বক্তব্য প্রত্যাখ্যাত করে ট্রাম্পের ঐ আইনজীবী তাকে বলেন যে, “রাশিয়া ইস্যুতে কোন তদন্তের জন্য কোথাও উপস্থিত হয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেই তদন্ত যদি কোন কেন্দ্রীয় সংস্থাও করে থাকে তাহলেও তা ট্রাম্পকে বাধ্য করতে পারে না”।
তবে বিশেষ কৌশুলি মুলার এবং তার তদন্ত দলের সদস্যরা ট্রাম্পের আইনজীবীকে বারবার প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার বিষয়ে চাপ দেন। এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উত্তরের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নও এসময় ট্রাম্পের আইনজীবীকে দেয় তদন্ত দল।
ট্রাম্পের আইনজীবী দলের সাবেক এক সদস্য জন ডাউডও বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তদন্ত দলের সাথে বৈঠক শেষে প্রায় দেড় সপ্তাহ আগে পদত্যাগ করেন এই আইনজীবী। বিবিসিকে তিনি বলেন যে, “বৈঠকে আমি তদন্ত সংশ্লিষ্টদের বলেছিলেম যে, ‘এটা কোন খেলা না। আপনারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির কর্মকান্ড নিয়ে গোলমাল পাকাচ্ছেন”।
এদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের এক প্রতিবেদনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দেওয়া তদন্ত দলের প্রশ্নের একটি তালিকা প্রকাশ পেয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এর সাবেক পরিচালক জেমস কমিকে কেন ট্রাম্প অপসারণ করলেন এমন প্রশ্নও আছে সেই তালিকায়। তদন্তকারীদের ধারণা, রাশিয়ার সাথে ট্রাম্পের সংশ্লিষ্টতার ওপর পর্দা দিতেই তাকে অপসারণ করেন তিনি।
ট্রাম্প কী তাহলে তদন্ত দলের মুখোমুখি হবেন?
উদ্ভুত বিতর্কে যে প্রশ্নটি এখন সবার মুখে মুখে তা এই যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে যদি তদন্ত দল ডেকেই পাঠায় তাহলে তিনি তার মুখোমুখি হবেন কী না।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলেও এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প রাশিয়া ইস্যুতে নিজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আবারও প্রত্যাখ্যান করেন। এই বিষয়ে তাকে ‘জোর’ করে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি লেখেন, “বিষয়টি ইচ্ছে করে গণমাধ্যমের সামনে আনা হয়েছে।বিষয়টি মর্যাদাহানিকর”।
ট্রাম্পের তদন্ত দলের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়ে দ্বিধা দেখা দিয়েছে ট্রাম্পের আইনজীবীদের মধ্যে। একদল মনে করছেন, মুলার সমন জারি করার আগেই তিনি (ট্রাম্প) মুলারের সাথে সাক্ষাত করতে পারেন। আরেকদল আইনজীবী মনে করছেন যে, মুলার যদি কোন সমন জারিও করেন তা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই ট্রাম্পের।
দেশটির সংবিধানের ৫ম সংশোধনী দেশটির প্রেসিডেন্টকে এ ধরনের তদন্তে উত্তর দেওয়া থেকে দায় মুক্তি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান আইনজীবী অ্যালান ডেরশোইটস ট্রাম্পের মুলার সাথে সাক্ষাৎকারের বিরোধী অবস্থান নিয়ে বলেন, “আসল পরিকল্পনা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ডেকে নিয়ে তার দিকে একটার পর একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হবে। আর তিনি এসব উত্তর দিতেই ব্যস্ত থাকবেন। তাকে এমন প্রশ্ন করা হবেই না যার উত্তর দিতে তিনি স্বাচ্ছন্দবোধ করবেন”।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশেষ কৌশুলী মুলারের সাথে সাক্ষাৎ করতে রাজি হয়েছিলেন বলে সূত্রের বরাত দিয়ে জানায় বিবিসি।তবে সিএনএন বলছে, এর খানিক পরেই আইনজীবীদের পরামর্শে সাক্ষাৎকারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন ট্রাম্প।
//এস এইচ এস//টিকে
আরও পড়ুন