ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

কার্ল মার্ক্সের ভাস্কর্য নিয়ে জার্মানিতে যে কারণে বিভেদ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:২৯, ৫ মে ২০১৮

চীন থেকে উপহার হিসাবে পাঠানো কাল মার্ক্সের একটি ভাস্কর্য নিয়ে জার্মানিতে বিভেদ শুরু হয়েছে। কম্যুনিস্ট মেনিফেস্টো বা ইস্তেহারের সহলেখক কার্ল মার্ক্সের জন্ম হয়েছিল জার্মানির যে ট্রিয়ার শহরে, তার দুইশোতম জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সেখানে ওই ভাস্কর্যটি স্থাপন করার কথা।

কিন্তু তা নিয়ে শহরে পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। শনিবার দুই পক্ষের লোকজনই শহরে মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে।

কার্ল মার্ক্স লিখেছিলেন, শ্রেণি বৈষম্যের ওপর ভর করেই সব মানব ইতিহাস তৈরি হয়েছে। তার বক্তব্য নিয়ে ইউরোপে বিতর্ক থাকলেও, সেটি ঘিরেই চীনা সরকারের মূল আদর্শ তৈরি হয়েছে।

তবে ট্রিয়ার শহরের কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, আপনি যদি মার্ক্সকে সমালোচনা করতে চান, করতে পারেন, কিন্তু সহিংসতা বা ধ্বংসাত্মক কোনও কর্মকাণ্ড করা যাবে না।

তার থিওরি বা মতাদর্শ ঘিরেই কম্যুনিজম বা সমাজতন্ত্রের মূল আদর্শ তৈরি হয়েছে, যেখানে সবকিছুর মালিক হবে সমাজ বা রাষ্ট্র এবং কোনও শ্রেণি বিভেদ থাকবে না। যদিও সোভিয়েত ইউনিয়ন বা চীনের মতো সমাজতান্ত্রিক সরকার চালিত অঞ্চল বা দেশগুলো নির্যাতন আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অনেক কুখ্যাতি পেয়েছে।

জার্মানির পূর্বাঞ্চল ১৯৪৯ সাল থেকে পুনর্মিলনের সময় ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণে ছিল, যখন এই অঞ্চলটি ছিল ধনী পশ্চিম জার্মানির চেয়ে অনেক দরিদ্র।

জার্মানির রাইনল্যান্ড-পালাটিনেট স্টেটের নেতা মালু ড্রেয়ার বলছেন, কার্ল মার্ক্সের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করার মানে তাকে সম্মাননা জানানো হয়, তার কর্ম নিয়ে আলোচনার একটি সুযোগ তৈরি হওয়া।

কিন্তু ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্য-ক্লদ ইয়োঙ্কার বলেছেন, মার্ক্সকে এখন এমন অনেক কিছুর জন্য দায়ি করা হচ্ছে, যার জন্য তিনি দায়ি নন এবং সেসবের ক্ষেত্রে তার কোনও ভূমিকা ছিল না। অনেক কিছুই তিনি লিখেছেন যার ঠিক উল্টোটা করা হয়েছে।

ট্রিয়ার শহরের কর্মকর্তারা বলছেন, ১৫ ফুট উঁচু এই ভাস্কর্যটি নিয়ে বিতর্ক চলছে প্রায় দুই বছর ধরে,যে চীনের উপহারটি গ্রহণ করা হবে কি-না। অনেকের অভিযোগ, চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে এই ভাস্কর্য গ্রহণ খাপ খায় না।

গতকাল শুক্রবার জার্মানির লেখকদের সংগঠন পেন বলেছে, চীনের নোবেল বিজয়ী লিউ শিয়াবোর বিধবা স্ত্রী লিউ শিয়াকে গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত ভাস্কর্যটি উন্মোচন করা উচিত হবে না। কোনও অপরাধে অভিযুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও ২০১০ সাল থেকে তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।

তবে ট্রায়ারের মেয়র উলফ্রাম লেইবি বলেছেন, বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবেই এই উপহারটি আমরা গ্রহণ করেছি। কার্ল মার্ক্সকে নিয়ে আলোচনা করতে এই ভাস্কর্য মানুষকে উৎসাহ দেবে। হয়তো কিছু মনোভাব এবং ভ্রান্ত ধারণার পরিবর্তন হবে।

জার্মানিতে কার্ল মার্ক্সের আরও স্থাপত্য রয়েছে। যে বাড়িতে তিনি জন্ম নিয়েছিলেন সেটি ছাড়াও বার্লিনের একটি পার্কে একটি ভাস্কর্য রয়েছে। প্রতিবছর ৪৫ লাখ পর্যটক ট্রায়ার শহরে আসে, যার মধ্যে ৫০ হাজার আসেন চীন থেকে।

কার্ল মার্ক্সকে আধুনিক সময়ের সবচেয়ে বড় মনিষী বলে শুক্রবার বক্তব্য দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

তিনি বলেছেন, চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির উচিৎ মার্ক্সিজমের শেকড়ে যাওয়া। মার্ক্স সবসময়েই এই দলের অভিভাবক এবং আদর্শ হিসাবে থেকে যাবেন।

কার্ল মার্ক্সের থিওরির ওপর চীনের শিক্ষার্থী এবং সরকারি চাকরিজীবীদের বাধ্যতামূলক কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। তা সত্ত্বেও, চীনের পুঁজিবাদী ধরণে সেদেশে শত শত কোটিপতির তৈরি হয়েছে এবং দেশটিতে ধনী আর দরিদ্রের চরম ব্যবধান রয়েছে।

জার্মানির একজন ইহুদি আইনজীবীর পুত্র কার্ল মার্ক্স প্যারিসে গিয়ে বিল্পবী কম্যুনিস্ট হন এবং তার আজীবনের বন্ধু ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের সঙ্গে পরিচিত হন। তারা দুজনে মিলে কম্যুনিস্ট মেনিফেস্টো বা ইস্তেহার লেখেন, যার মুল বক্তব্য হচ্ছে সব মানব ইতিহাস শ্রম বৈষম্যের ওপর তৈরি হয়েছে এবং বিশ্বের শ্রমিকদের ধনী সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে হবে।

এরপর কার্ল মার্ক্স লন্ডন চলে যান এবং দাস ক্যাপিটাল লেখেন, যেখানে বলা হয়, ব্যক্তিগত লাভের ওপর নির্ভরশীল অর্থনৈতিক পদ্ধতি হচ্ছে অস্থায়ী একটি ব্যবস্থা। শ্রমিকরা কারখানা মালিকদের মাধ্যমে শোষণের শিকার হন এবং তাদের শ্রমের পণ্যের মালিকানা পান না। তার মতে, তারা এসব মেশিনের চেয়ে সামান্য উন্নত জীবনযাপন করেন। ১৮৮৩ সালে কার্ল মার্কস মারা যান এবং তাকে লন্ডনের হাইগেট কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

তথ্যসূত্র: বিবিসি।

একে// এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি