ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

‘নাৎসি দাদি’ কারাগারে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৩২, ১৩ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৫:৩৩, ১৩ মে ২০১৮

উর্সুলা হ্যাভেরবেক ও তার প্রয়াত স্বামী বার্নার জর্জ হ্যাভেরবেক ছিলেন নাৎসি পার্টির সমর্থক৷ ওই উর্সুলাকে কারাগারে নেওয়ার পর তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে কট্টরপন্থি ডান সমর্থকরা৷ এদিকে পালটা বিক্ষোভকারীরাও ছিলেন মাঠে৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত ৮৯ বছর বয়স্ক বৃদ্ধা উর্সুলা হ্যাভেরবেককে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে জার্মান পুলিশ৷ গত ৭ মে উর্সুলা হ্যাভেরবেক নামের ওই যুদ্ধাপরাধীকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়, যিনি ‘নাৎসী দাদি` বলেই বেশি পরিচিত৷ অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানিতে ইহুদি গণহত্যা এবং তার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা উর্সুলা বরাবরই অস্বীকার করে আসছিলেন৷ চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আদালতের রায়ে তার নিজেরই উপস্থিত হয়ে কারাদণ্ডে যাওয়ার কথা থাকলেও উর্সুলা উপস্থিত হননি৷

পরে আদালত তাকে গ্রেফতারের আদেশ দেয়৷ আদালতের আদেশের পরপরই পুলিশ নাৎসী দাদিকে তার নিজের বাসা থেকে গ্রেফতার করে জেলে পুরে দেয়৷ এখন যুদ্ধাপরাধ এবং তাতে উসকানির দায়ে উর্সুলাকে দুই বছর কারাগারে থাকতে হবে৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গণহত্যার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হলেও এর আগে উর্সুলাকে কখনো কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়নি৷ এছাড়া গত ১ মে থেকে কারাবাস শুরুর কথা থাকলেও উর্সুলা বরাবরই আউশভিৎস কমিটির দণ্ডাজ্ঞার ব্যাপারে উদাসীনতা দেখিয়েছেন৷

উর্সুলা হ্যাভেরবেক এবং তার প্রয়াত স্বামী বার্নার জর্জ হ্যাভেরবেক দু`জনই হিটলারের নাৎসি পার্টির ঘোরতর সমর্থক ছিলেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি পার্টির নেতৃত্বে ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৫ ইউরোপজুড়ে মোট ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয়৷ স্বামী-স্ত্রী দু`জনই এই পার্টির সক্রিয় সদস্য ছিলেন৷

জার্মান পত্রিকা ভেস্টফালেন-ব্লাট এর আগে জানিয়েছিল, মধ্য জার্মানির ফ্লোটো শহরে উর্সুলার বাড়িটি পরিত্যক্ত৷ তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই বাড়িতে অনেকদিন ধরে কাউকে দেখা যায়নি৷ এমনকি দরজার সামনে চিঠিপত্রও স্তূপাকারে জমা হয়ে রয়েছে৷ অথচ পুলিশ উর্সুলাকে সেই বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করে৷

স্বামী বার্নারকে নিয়ে উর্সুলা একটি কট্টর ডানপন্থি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতেন, যার নাম ‘কোলেগিয়ুম হুমানুম`৷ ২০০৮ সালে জার্মান কর্তৃপক্ষ ওই প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেয়৷

নাৎসি আমলে ইহুদি নিধন যজ্ঞে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ মারা যান৷ নাৎসিদের কুখ্যাত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল পোল্যান্ডের আউশভিৎসে অবস্থিত ক্যাম্পটি৷ এখানে প্রায় ১৩ লাখ মানুষকে বন্দি রাখা হয়েছিল, যাদের মধ্যে গ্যাস চেম্বারে, অনশনে এবং চরম দুর্বলতায় প্রাণ হারান ১১ লাখ মানুষ৷ এদের অধিকাংশই ছিলেন ইহুদি, সেই সঙ্গে রোমা ও সিন্টিদের মতো সম্প্রদায়ের মানুষ এবং রাজনৈতিক বিরোধীরা৷ সে হিসেবে আউশভিৎস নাৎসি বিভীষিকার প্রতীক৷ অথচ উর্সুলার দাবি, এই বন্দি তথা মত্যু শিবিরটি নির্যাতন বা হত্যার জন্য ব্যবহার করা হতো না৷ বরং সেগুলো ছিল ‘শ্রমিক ক্যাম্প`!

উর্সুলা এর আগে উগ্র ডানপন্থি জার্মান পত্রিকা ‘শ্টিমে ডেস রাইশেস`-এ নিজের মতামত লিখতেন৷ সেসব কলামে তিনি দাবি করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাকি ইহুদি গণহত্যাই হয়নি৷

জার্মানিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার গণহত্যার বিষয়টি অস্বীকার করা আইনত দণ্ডনীয়৷ কেননা এটি ঘৃণাকে উসকানি দিতে পারে৷ আর এক্ষেত্রে উসকানি দাতার পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হওয়ার আইনও রয়েছে৷

এদিকে বৃহস্পতিবার ‘নাৎসি দাদি’-কে বিলেফেল্ডের কারাগারে পাঠানোর পর বাইরে বিক্ষোভ করেছে কট্টরপন্থি ডানদের একটি অংশ৷ পুলিশ জানিয়েছে, সেখানে প্রায় সাড়ে চারশ’ বিক্ষোভকারী ছিল, যারা অতি ডান ‘ডি রেশটে’ পাটির সমর্থক৷

বিপরীতে সাড়ে ছয়শ’ লোক পালটা বিক্ষোভ করে৷ এক পর্যায়ে পুলিশ ও পালটা-বিক্ষোভকারী বামপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে সেখান থেকে দু’জনকে আটক করা হয়৷ আটক দু’জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে৷

সংঘর্ষের ঘটনায় দু’জন পুলিশ কর্মকর্তা সামান্য আহত হন৷

তথ্যসূত্র: ডয়েচে ভেলে।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি