সতীত্ব পরীক্ষা থেকে রেহাই পেলেন ঐশ্বরিয়া
প্রকাশিত : ১৭:০৯, ২১ মে ২০১৮
এখনো পৃথিবীতে কোথাও কোথাও সতীত্ব পরীক্ষার প্রচলন রয়েছে। বিয়ের রাতে মেয়েদের এ পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হতে হয়। তেমনি ঐশ্বরিয়াকেও সতীত্ব পরীক্ষার জন্য তৈরি হতে হয়। তবে হোটেলে সাদা চাদরে ‘সতীত্ব পরীক্ষা’ থেকে রেহাই পেলেন ঐশ্বরিয়া। বিয়ে শেষে পুলিশ পাহারায় সরাসরি শ্বশুরবাড়িতে ফেরার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
মুম্বাইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের সাবেক ছাত্রী ঐশ্বরিয়ার এ বিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বেশ আলোচিত হচ্ছে।
কারণ এ বিয়ের মধ্য দিয়ে দেশটিতে ‘সতীত্ব পরীক্ষা’র ৪০০ বছরের প্রাচীন প্রথা ভাঙা হয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্য মূল কৃতিত্ব পাচ্ছেন ঐশ্বরিয়ার স্বামী বিবেক তমাইচীকর।
গত ১২ মে পুনেতে বিবেক-ঐশ্বরিয়ার বিয়ে হয়। এর কুড়ি দিন আগে মারাঠি ভাষায় বিয়ের কার্ড ছাপানো হয়। এতে ইংরেজিতে লেখা হয়েছিল- ‘স্টপ দ্য ভি রিচুয়াল’!
জানা গেছে, পুনের পিঁপরীর কঞ্জরভাট জনগোষ্ঠীর সদস্য বিবেক। তাদের পঞ্চায়েতের নিয়মানুযায়ী— বউ ‘সতী’ কিনা, তা জানতে হবে প্রথম রাতেই! তাই বিয়ের পর পঞ্চায়েত প্রধানের ভাড়া করা হোটেল কক্ষে থাকতে হবে স্বামী-স্ত্রীকে। সেখানে বিছানার চাদর হবে সাদা।
সারারাত বাসর ঘরের বাইরে সঙ্গীদের নিয়ে বসে থাকবেন পঞ্চায়েত প্রধান। তার আগে ঘরে এক নারীকে কক্ষের ভেতরে পাঠানো হবে। তিনি আপাদমস্তক দেখবে নববধূর শরীরের কোথাও ‘খুঁত’আছে কিনা। এর পর সকালে বর দেখাবেন তাদের বিছানার চাদরের রক্তের দাগ রয়েছে। এর পর পঞ্চায়েত সন্তুষ্ট হলেই পাত্র-পাত্রীর বিয়ে মঞ্জুর হবে।
কঞ্জরভাট জাতিগোষ্ঠীর পঞ্চায়েতের এ নিয়ম মানতে রাজি নন বিবেক। এর নেপথ্যে রয়েছে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় তার দেখা এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।
তিনি বলেন, তখন এক আত্মীয়ের বিয়েতে গিয়ে দেখেছিলাম- সাতসকালে নববধূকে জুতাপেটা করছে কয়েকটা লোক। আর কে যেন ভিড় থেকে বলে উঠল- ‘ইয়ে তো খোটা নিকলা।’
বিবেক বলেন, পয়সা অচল হলেও মানুষও কীভাবে অচল হয় তা জানতে গিয়ে স্কুলে গিয়ে শিক্ষককে প্রশ্ন করে জবাব পাইনি। মাকে জিজ্ঞাসা করে মার খেতে হয়েছিল। বিবেক জানান, ২০১৫ সালে পাত্রী চূড়ান্ত করার পর প্রগতিশীল রাজনীতি করা দাদাকে সতীত্ব পরীক্ষার প্রথার বিষয়ে নিজের আপত্তির কথা বলেন। কিন্তু দাদা সব বুঝেও নিজের বাড়িতে প্রথা ভাঙতে রাজি হননি।
এ অবস্থায় বিবেক ও তার ৭৩ জন ঘনিষ্ঠজন বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপে সতীত্ব পরীক্ষাবিরোধী গ্রুপ খোলেন।
এ ক্ষেত্রে তারা সুপ্রিমকোর্ট ঘোষিত মৌলিক অধিকার আইন ও ‘সামাজিক বয়কট প্রতিরোধ আইনের’সাহায্য নেন। তবে আত্মীয়-প্রতিবেশীর বিয়েতে প্রথা ভাঙতে গিয়ে বেশ কয়েকবার মারধরের শিকার হতে হয় তাদের।
অবশেষে বিবেক তার বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথা ভাঙবেনই বলে সিদ্ধান্ত নেন। এক্ষেত্রে গত এপ্রিলে তিনি বিয়ের কার্ড ছাপিয়ে রাজ্য মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হন। সেখান থেকে ফোন করা হয় পুনের পুলিশ কমিশনারকে।
এর পর ১২ মে বিয়ের আসরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ উপস্থিত হয়। বিয়ে শেষে পঞ্চায়েত প্রথা মেনে হোটেলে না গিয়ে বউ নিয়ে সরাসরি নিজের বাড়িতে ওঠেন বিবেক।
বিয়ের দুদিন পর বিবেক ও ঐশ্বরিয়া হোয়াটসঅ্যাপে জানালেন “পথচলা সবে শুরু”। এর পর তারা হানিমুন করতে গেছেন।
এসি
আরও পড়ুন